X
শনিবার, ১০ মে ২০২৫
২৭ বৈশাখ ১৪৩২

‘জাওয়ান’ দেখে প্রতিমন্ত্রীর উচ্ছ্বাস, চলচ্চিত্র নির্মাতার ৫ প্রশ্ন

বিনোদন রিপোর্ট
১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৯:৩৬আপডেট : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:৪৯

‘জাগো’, ‘মিস্টার বাংলাদেশ’ কিংবা ‘ওরা ৭ জন’র মতো প্রশংসিত সিনেমা নির্মাণ করেছেন খিজির হায়াত খান। যে সিনেমাগুলোর মূল নায়ক মূলত দেশাত্মবোধ। যদিও দেশের প্রেক্ষাগৃহ এখন শাসন করছে বিদেশ। শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) শাহরুখের ‘জাওয়ান’ সপরিবারে দেখতে গিয়ে খোদ আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের কণ্ঠে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। যে ছবির মাঝে তিনি খুঁজে পেয়েছেন সমাজের দুর্নীতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে মানুষের বিবেককে জাগ্রত করার টনিক!

মজার তথ্য হলো, ‘জাওয়ান’ ধাক্কায় খোদ আইসিটি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে নির্মিত দীপংকর দীপনের ছবি ‘অন্তর্জাল’ই প্রথম পড়লো পা পিছলে। ছবিটি ৮ সেপ্টেম্বর মুক্তির সব প্রস্তুতি শেষেও পারলো না। মাল্টিপ্লেক্সে শো পাবে না বলে পিছিয়ে গেলো ২২ সেপ্টেম্বর। একই হাল হলো বঙ্গবন্ধুর তারুণ্য নিয়ে নির্মিত মুশফিকুর রহমান গুলজারের ছবি ‘দুঃসাহসী খোকা’র বেলাতেও। এই ছবিটিও ৮ সেপ্টেম্বর মুক্তির কথা ছিল। কিন্তু ‘জাওয়ান’ ধাক্কায় সেটিও সরে দাঁড়ালো। 

এমন পরিস্থিতির বিপরীতে মাল্টিপ্লেক্সে গিয়ে ‘জাওয়ান’ দেখে প্রতিমন্ত্রীর এমন উচ্ছ্বাসে বিস্মিত হলেন অনেকেই। উচ্ছ্বাসের খানিক অংশ প্রতিমন্ত্রীর দেয়াল থেকেই তুলে ধরা হলো। তার ভাষায়, ‘‘স্টোরি লাইনআপ, অ্যাকশন ও ইমোশনের সমন্বয়ে একটি দুর্দান্ত চলচ্চিত্র ‘জাওয়ান’। শাহরুখ খানের আইকনিক কামব্যাক, কমপ্লিট চলচ্চিত্র প্যাকেজ এবং সমাজের দুর্নীতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের বিবেককে জাগ্রত করার জন্য একটা মেসেজ আছে এই চলচ্চিত্রে; একজন রাজনীতিবিদ, একজন বাবা ও অভিভাবক হিসেবে এই তিনটা বিষয় আমি পেয়েছি।’

‘জাওয়ান’সহ এমন ছবি দেশে মুক্তির সিদ্ধান্তটি যে সহি ছিল, সেটিও বলতে দ্বিধা করেননি প্রতিমন্ত্রী। তার ভাষায়, ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের পাশাপাশি হলিউড, বলিউডসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের ভালো চলচ্চিত্রগুলো বাংলাদেশে প্রদর্শনের সিদ্ধান্তটা খুব ভালো সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মাধ্যমে আমাদের দেশের চলচ্চিত্রের ভালো একটা বাজার তৈরি হবে, তরুণ প্রজন্মের সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা হবে এবং আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পের বিকাশে ভূমিকা রাখবে। আমি আশা করছি আগামী ১-২ বছরের মধ্যে হাইটেক পার্কগুলোতে বিশ্বমানের আরও ১২টি সিনেপ্লেক্স আমরা তৈরি করতে পারবো।’

ঠিক শেষের এই মন্তব্যের বিপরীতে ৫টি প্রশ্ন অথবা প্রসঙ্গ তুলেছেন নির্মাতা খিজির হায়াত খান। 

আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের প্রতি তার প্রশ্নগুলো এমন—শাহরুখ খানের ‘জাওয়ান’ সিনেমা নিয়ে আপনার ও আপনার পরিবারের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা দেখলাম, আপনার স্ট্যাটাসও পড়লাম। তারপর একজন বাংলাদেশি চলচ্চিত্র কর্মী হিসেবে মনে কিছু প্রশ্ন এলো, আপনার সমীপে প্রশ্নগুলো রাখলাম, জানি না আপনি পর্যন্ত পৌঁছাবে কিনা?

১. আমার প্রথম প্রশ্ন- শত শত কোটি টাকার বাইরের দেশের সিনেমার সাথে আমাদের দেশের এভারেজে এক কোটি টাকার সিনেমা কীভাবে প্রতিযোগিতা করবে দয়া করে অবশ্যই জানাবেন। যদি আমরা সত্যিই পারতাম তাহলে আপনার নিজের মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে নির্মিত ‘অন্তর্জাল’ পেছালেন কেন? চলতে দিতেন ‘জাওয়ান’-এর পাশে, কই পারলেন না তো। পেছাতেই হলো। 

২. হাইটেক পার্কগুলাতে সিনেমা হল গড়ে তুলবেন খুবই ভালো কথা, কিন্তু সিঙ্গেল স্ক্রিন সিনেমা হলগুলোর কী হবে? কথাতো ছিল হিন্দি সিনেমা আমদানি করে আপনারা মাল্টিপ্লেক্সগুলোর পাশাপাশি সিঙ্গেল স্ক্রিনগুলোকেও ঠিক করবেন। কিন্তু বললেন এক কথা আর হচ্ছে তো অন্য কিছু। গুটিকয়েক মাল্টিপ্লেক্স দিয়ে কি বাংলাদেশের সিনেমা জগতের আমূল পরিবর্তন করে ফেলবেন বলে আপনারা ভাবছেন? জানেন কি ঢাকার বাইরে সাধারণ মানুষ যারা সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখেন তারা আসলে কত টাকা সর্বোচ্চ টিকিট মূল্য দিতে পারেন? আপনার নির্বাচনি এলাকা সিংড়ার মানুষকে অবশ্যই একটু জিজ্ঞাসা করবেন। 

৩. হিন্দি সিনেমাগুলো কারা আমদানি করছে, কীভাবে করছে? টাকা কীভাবে দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে সেই দিকটা নিয়ে তো কোনও কথা কেউ কখনও বললেন না? একই সময় হিন্দি সিনেমা আমদানি করে যাতে দেশের টাকা বাইরে চলে না যায় সেটা তো ভালো করে দেখা দরকার মন্ত্রী সাহেব। একটু দয়া করে ‘জাওয়ান’ কীভাবে এলো, টাকা কীভাবে কোথায় গেলো একটু দয়া করে দেখবেন। 

৪. বাংলাদেশের মানুষ সারা বিশ্বের সিনেমা আমাদের হলগুলোতে দেখবে, এটা আপনার মতো আমারও চাই, কিন্তু সেটা কীসের মূল্যে সেটা তো আমাদের সবার দেখা দরকার তাই না? কী দিতে গিয়ে কি হারাবো, কতটুকু পাবো আর কতটুকু দিবো সেটা তো আমাদের হিসাব করা জরুরি? নিজের ঘরকে আগলে রাখার ইচ্ছা যদি আমাদের দোষ হয় তাহলে অবশ্যই আমি দোষী, তবে মনে রাখবেন আপনার মতো আমরাও না আমাদের দেশ, আমাদের সিনেমাকে ভালোবাসি এবং সেটার জন্য বছরের পর বছর কাজ করে যাচ্ছি। 

৫. পরিশেষে একটা কথা বলবো, আমরা যারা বাংলাদেশের সিনেমার জন্য জীবন যৌবন দিয়ে কাজ করে যাচ্ছি তাদের সাথে আপনারা কখনও কথা বলেন না, আর যাদের সাথে বলেন তারা একসময় সিনেমায় পুরা ক্রিমটা খেয়েছে। এখন যখন সিনেমা শিল্প তার তলানিতে তখন তারা এমন খেলা খেলতে চায়, যাতে লাভ হবে হাতে গোনা কয়জনের আর ক্ষতি হবে এই দেশের পুরা চলচ্চিত্র জগতের। আশা করি আমার এই কথাগুলো আপনি রাইট স্পিরিটে গ্রহণ করবেন, দেশের জন্য ভালো ভালো কাজ করেন, এই শুভকামনা থাকলো। জয় বাংলা।

খিজির হায়াত খান এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন ‘সাম্রাজ্য’ সিনেমা নির্মাণে।

/এমএম/এমওএফ/
সম্পর্কিত
মেট গালায় শাহরুখকে দিতে হলো নিজের পরিচয়!
মেট গালায় শাহরুখকে দিতে হলো নিজের পরিচয়!
ফের গুঞ্জন, মার্ভেল ইউনিভার্সে শাহরুখ!
ফের গুঞ্জন, মার্ভেল ইউনিভার্সে শাহরুখ!
ইতিহাস সৃষ্টির পথে শাহরুখ!
ইতিহাস সৃষ্টির পথে শাহরুখ!
পলকসহ ৩ জন ফের রিমান্ডে
পলকসহ ৩ জন ফের রিমান্ডে
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির নেতৃত্বে দুই শাহীন!
চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির নেতৃত্বে দুই শাহীন!
কানের মার্শে দ্যু ফিল্মে ‘বাঙালি বিলাস’
কানের মার্শে দ্যু ফিল্মে ‘বাঙালি বিলাস’
সিনেমায় বালাম ও জালালী শাফায়াত!
সিনেমায় বালাম ও জালালী শাফায়াত!
নতুন গানে টিনা রাসেলের ব্যাকুলতা
নতুন গানে টিনা রাসেলের ব্যাকুলতা
ট্রেলারে ‘গুলমোহর’ যেমন
ট্রেলারে ‘গুলমোহর’ যেমন