একটা সময় টিভি পর্দার বড় তারকা ছিলেন আব্দুন নূর সজল। রোমান্টিক অবতারে ব্যস্ততার চরম পর্যায় পার করেছিলেন। তবে মাঝে কিছুটা স্তিমিত ছিল তার পথচলা। যেন আরেকটি লম্বা দৌড়ের আগে দম নিলেন। সেই দম নিয়ে প্রত্যাবর্তনটা বোধহয় গেলো বছরই হলো। এই এক বছরেই তার অভিনীত ছয়টি কনটেন্ট মুক্তি পায়। আর সবগুলোই কম-বেশি সাড়া, প্রশংসা অর্জন করে।
এমন মুখর ২৩ পেরিয়ে নতুন বছরে সজলের নজর কোন দিকে? সেই খোঁজ নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করা হয় তার সঙ্গে। তিনিও কথার আগল খুলে দিলেন অকপটে, বাংলা ট্রিবিউন-এর কাছে।
শুরুটা কুশল বিনিময়ে। তবে অভিনেতা কিংবা তারকা নয়, একেবারে একান্ত সজল কেমন আছেন, সেটাই জানতে চাওয়া হলো। তৃপ্তির সুরে তার জবাব, ‘ভালো আছি। আমার কাছে একটা বিষয় খুব পরিষ্কার, সুস্থতা অনেক বড় নিয়ামত। বিশেষ করে আমরা যে কঠিন একটা সময় (করোনাকাল) পার করে এসেছি, এরপর থেকে আসলে পরিবারকে নিয়ে সুস্থ থাকাই বড় নিয়ামত।’
নতুন বছরের সম্ভাবনার খবর জানার আগে ফেলে আসা ২৩-এর খতিয়ানের জের টানলেন সজল; এভাবে, “বছরটা শুরু হয়েছিল কোরিয়ান সিরিজ ‘লিজেন্ড অব দ্য ব্লু সি’ দিয়ে। এতে আমি প্রথমবার ডাবিংশিল্পী হিসেবে কাজ করেছি। নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছে। এরপর করলাম ভিকি জাহেদের ‘দ্য সাইলেন্স’। এখানে খুব বড় চরিত্রে কাজ করেছি এমন না; তবে একদম ব্যতিক্রম। নেতিবাচক চরিত্র তো অনেক হয়, কিন্তু এটা ইবলিশের চরিত্র! এটার পেছনে অনেক খাটতে হয়েছিল। শুধু নখের পেছনেই অনেক সময় দিতে হতো। কাজটা দর্শক খুব পছন্দ করলো। এরপর আসলো জাজ মাল্টিমিডিয়ার ‘জ্বীন’। ঈদের সময় নারী, শিশু দর্শকের দারুণ সাড়া পেলো। তারপর এলো ‘ইনফিনিটি ২’। সেখানে তিনটি ভিন্ন লুকে কাজ করেছি।”
দেড় হালি কাজ। তাই সজল বলে গেলেন, “১৯৭১ সেই সব দিন’-এ একটা চ্যালেঞ্জিং চরিত্র। ২২-২৪ বছরের একটা তরুণের চরিত্র, এর জন্য ওজন কমিয়ে নিজের মধ্যে পরিবর্তন আনা। এমন পরিশ্রমের পর যখন সিনিয়র শিল্পী ও দর্শকের প্রশংসা পাই, তখন ভালো লাগে। আর সবশেষে আবারও আসে একটা উল্টো চরিত্র, ‘পাফ ড্যাডি’তে! যেটা আমি একদমই না। তো অনেক রকমের চরিত্র, গল্পে কাজ করেছি ২০২৩ সালে। এজন্য সব নির্মাতা, সহশিল্পী সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ।”
আগামীর কর্মভাবনা প্রসঙ্গে সজল বললেন, ‘খুব বেশি যে কাজ করা হবে, এমন না। আল্টিমেটলি আমরা নিজেরাও তো দর্শক; তো যে কাজটি ভালো লাগবে, সেটাই করবো। কয়েক বছর ধরেই কম কাজ করছি। এখন যে’কটা কাজই করবো, সেগুলো দর্শকের কাছে যেন আলাদা জায়গা করে নেয়।’
আপাতত দুটি সিনেমার কাজ শেষ করে রেখেছেন সজল। এগুলো হলো- আবু সাইয়ীদের ‘সংযোগ’; আর জাহিদ হোসেনের ‘সুবর্ণভূমি’। এ বছর ছবি দুটি মুক্তি পাবে বলে জানালেন সজল। এর বাইরে ওটিটিতে একটি সিনেমা ও একটি সিরিজের কাজ চূড়ান্ত হয়ে আছে। তবে গোপনীয়তা নীতির কারণে বিস্তারিত বললেন না।
কাজের পর আবার একটু মনের খোঁজ নেওয়া যাক। সজলের কাছে জানতে চাওয়া হলো, সাম্প্রতিক সময়ে তার মধ্যে জীবন নিয়ে কী উপলব্ধি এসেছে? একটু ভেবে বললেন, ‘একটা বিষয় এখন খুব স্ট্রংলি মনে হয়; জীবনে মানুষের অনেক ধরনের অর্জন, সফলতা আসে; কিন্তু সব কিছুর ঊর্ধ্বে আসলে সুস্থভাবে বেঁচে থাকা। করোনা মহামারির সময়ে এই বিষয়টি আরও প্রবলভাবে উপলব্ধি করেছি। এখন একটাই চাওয়া, সবার সঙ্গে সুস্থ থেকে সুন্দরভাবে যেন পৃথিবী থেকে যেতে পারি।’
প্রসঙ্গের সূত্র ধরে আরেকটু ভাবুক হয়ে সজল বলেন, ‘যখন দেশের বাইরে যাই, তখন উড়ন্ত বিমান থেকে মাটির দিকে তাকালে মনে হয়, পৃথিবীটা কত ছোট। আর এই পৃথিবীর মানুষ, আমরাও কত ক্ষুদ্র। আসলে বড়াই করার মতো জায়গা একদমই নেই। এই ক্ষুদ্র জীবনে আল্লাহ যতটুকু দিয়েছেন, এটাই অনেক বড় প্রাপ্তি। এত মানুষের ভালোবাসা, এত দিন ধরে কাজ করে যাওয়া, এতে আমি কৃতজ্ঞ।’
কাজ দিয়ে সজলের খ্যাতি। তাই কাজের আভাসেই শেষ হোক। হ্যাঁ, সজল জানালেন, দেশের বাইরে তার কাজের ব্যাপারে বেশ কিছু দিন ধরেই কথাবার্তা চলছে। চূড়ান্ত হলে পরিকল্পনামাফিক সেটা প্রকাশ্যে আনবেন। আভাস মিললো, নতুন বছরে সজলের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে যুক্ত হতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক কিছু। তারই প্রস্তুতির মধ্যে আছেন অভিনেতা।