X
শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫
২৬ বৈশাখ ১৪৩২
মৃত্যুদিনে স্মরণ

প্রস্থানের ৪ বছর: সহশিল্পীর কণ্ঠে অভিমানের সুর

বিনোদন রিপোর্ট
০৬ জুলাই ২০২৪, ১৭:১৩আপডেট : ০৬ জুলাই ২০২৪, ১৮:৫৮

১৫ হাজারের বেশি গানে কণ্ঠ দিয়েছিলেন তিনি। এর মধ্যে জনপ্রিয় আর কালজয়ী গানের তালিকাও এতো লম্বা যে, অনেক শিল্পীর গোটা ক্যারিয়ারের চেয়ে তা ভারি। আর তাই যথার্থভাবে তাকেই বলা হয় প্লেব্যাক সম্রাট।

হ্যাঁ, তিনি এন্ড্রু কিশোর। শনিবার (৬ জুলাই) কিংবদন্তি এই কণ্ঠশিল্পীর প্রস্থানের চার বছর পূর্ণ হলো। ২০২০ সালের এই দিনে তিনি না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। ফলে বছর ঘুরে এমন দিন এলেই তার জন্য মন কেঁদে ওঠে শ্রোতা ও সহশিল্পীদের।

এন্ড্রু কিশোরের বর্ণীল ক্যারিয়ারের অন্যতম সহশিল্পী কনকচাঁপা। তারা জুটি বেঁধে বহু শ্রোতাপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন। প্লেব্যাক সম্রাটের মৃত্যুদিনে ফেসবুকে একটি ছবি প্রকাশ করে এই গায়িকা জানালেন মন পোড়ানো প্রতিক্রিয়া। বললেন, ‌‌‘ভাবতেই অবাক লাগে কি নির্ভার, কি প্রশ্রয়ে এমন চুলার পাড়ের বিলাইয়ের মতো করে বড় ভাইয়ের সোফার হাতলে বসে ছিলাম আনন্দে। এমনই বড় ভাই ছোট বোন সম্পর্ক ছিল আমাদের! তার গানের সৌকর্য নিয়ে কথা না বললেও চলে। কিন্তু তিনি মানুষ হিসেবে কতটা আন্তরিক ছিলেন তা এই ছবিই বলে দেয়! চার বছর হয়ে গেলো! আশ্চর্য! অথচ তাকে ছাড়া বাংলাদেশ গানপ্রেমী মানুষের একদিনও কি চলে! স্রষ্টা আপনাকে ভালো রাখুন কিশোরদা।’

তারও আগে বাংলা ট্রিবিউন-এর সঙ্গে আলাপকালে এন্ড্রু কিশোর সম্পর্কে আক্ষেপের সুরেই বললেন অনেক কথা। “আমাদের একজন কিশোরদা ছিলেন, যিনি আমাদের অনেক দিয়েছেন। কিন্তু আমরা কি তাকে সঠিক সম্মান দিয়েছি? এখন কোটিবার উচ্চারণ হয় ‘বড্ড অপূরণীয় ক্ষতি’ হয়ে গেলো! তাতে তার আর কিছুই আসে যায় না। যায় কি?”

এন্ড্রু কিশোরকে নিয়ে নিজের মুগ্ধতার কথা প্রকাশ করে কনকচাঁপা বলেছেন, ‘আমাদের এন্ড্রু কিশোর। আমি বলি গলিত সোনার নহর। তিনি দৈহিকভাবে কত বছর হয় চলে গেছেন, আমি তা গুনি না। ভাবতেই ভালো লাগে না যে, তিনি নেই। তার গান আকাশ, বাতাস, পাতাল, নদী, সাগরে ভাসে। আমার তো মনে হয় পৃথিবীর আনাচে কানাচে যেখানেই বাংলা ভাষাভাষী আছেন, সেখানেই প্রতি সেকেন্ডেই কারও না কারও কাছে তার গান বাজে। কেউ গায়, কেউ গুনগুন করে, কেউ শেখার চেষ্টা করে; কেউ তাকে, কেউ তার গান, তার কণ্ঠ নিয়ে গবেষণা করে।’

বিষণ্ণ মনে কনকচাঁপা জানালেন, ‘আমি ভাবতেই চাই না, তিনি নেই; তবুও আমি মানুষ! তার অনুপস্থিতি আমাকে বিষণ্ন করে। হঠাৎ আনমনা হয়ে ভাবি, একদিন ওনাকে মজার রান্না করে খাওয়াবো। পরক্ষণেই সম্বিত ফিরে পাই, বাস্তবে ফিরে এসে বুঝি তিনি নেই এবং কী হারালাম!’

উল্লেখ্য, ১৯৫৫ সালের ৪ নভেম্বর রাজশাহীতে জন্মগ্রহণ করেন এন্ড্রু কিশোর। তার পুরো নাম এন্ড্রু কিশোর কুমার বাড়ৈ। মা ছিলেন সংগীতানুরাগী, কিশোর কুমারের ভক্ত। সেই সূত্রেই ছেলের নাম রাখেন কিশোর। বড় হয়ে ছেলে তাই মায়ের স্বপ্ন পূরণে গানের ভুবনে পা রাখেন আর রচনা করেন ইতিহাস।

কনকচাঁপা ও এন্ড্রু কিশোর মূলত সিনেমার গানের শিল্পী (প্লেব্যাক গায়ক) হিসেবে কালজয়ী এন্ড্রু কিশোর। ১৯৭৭ সালে ‘মেইল ট্রেন’ সিনেমায় আলম খানের সুরে প্রথম গান করেন তিনি। তবে শ্রোতামহলে তার কণ্ঠ ছড়িয়ে পড়ে ১৯৭৯ সালের ‘প্রতিজ্ঞা’ সিনেমার ‘এক চোর যায় চলে’ গানের মাধ্যমে।

তার গাওয়া কালজয়ী গানের মধ্যে রয়েছে ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’, ‘তুমি যেখানে আমি সেখানে’, ‘সবাই তো ভালোবাসা চায়’, ‘পৃথিবীর যত সুখ আমি তোমার ছোঁয়াতে খুঁজে পেয়েছি’, ‘আমি একদিন তোমায় না দেখিলে’, ‘বেদের মেয়ে জোছনা’, ‘তুমি আমার কত চেনা’, ‘সব সখিরে পার করিতে’, ‘ও সাথীরে’, ‘ভালো আছি ভালো থেকো’, ‘তুমি চাঁদের জোছনা নও’, ‘তুমি মোর জীবনের ভাবনা’, ‘আকাশেতে লক্ষ তারা’, ‘কিছু কিছু মানুষের জীবনে’, ‘এক বিন্দু ভালোবাসা দাও’ ইত্যাদি।

শ্রেষ্ঠ গায়ক হিসেবে এন্ড্রু কিশোর ৮ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন। এছাড়া বাচসাস পুরস্কার, মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারও রয়েছে তার অর্জনের খাতায়।

/এমএম/
সম্পর্কিত
রাজশাহীতে এন্ড্রু কিশোরের জন্মদিন পালিত
জন্মদিনে স্মরণরাজশাহীতে এন্ড্রু কিশোরের জন্মদিন পালিত
এন্ড্রু কিশোর প্রসঙ্গে কনকচাঁপা: আমরা কি তাকে সঠিক সম্মান দিয়েছি?
এন্ড্রু কিশোর প্রসঙ্গে কনকচাঁপা: আমরা কি তাকে সঠিক সম্মান দিয়েছি?
প্লেব্যাক সম্রাটের বিদায়ের দিন
প্লেব্যাক সম্রাটের বিদায়ের দিন
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
কানের মার্শে দ্যু ফিল্মে ‘বাঙালি বিলাস’
কানের মার্শে দ্যু ফিল্মে ‘বাঙালি বিলাস’
সিনেমায় বালাম ও জালালী শাফায়াত!
সিনেমায় বালাম ও জালালী শাফায়াত!
নতুন গানে টিনা রাসেলের ব্যাকুলতা
নতুন গানে টিনা রাসেলের ব্যাকুলতা
ট্রেলারে ‘গুলমোহর’ যেমন
ট্রেলারে ‘গুলমোহর’ যেমন
কান ক্ল্যাসিকসে চার্লি চ্যাপলিনের সঙ্গে সত্যজিৎ রায়
কান ক্ল্যাসিকসে চার্লি চ্যাপলিনের সঙ্গে সত্যজিৎ রায়