ভারতীয় লেখক, গীতিকার, সুরকার ও পরিচালক গুলজার নির্মিত ‘আঁধি’ সিনেমায় অভিনয় করেন কিংবদন্তি অভিনেত্রী সুচিত্রা সেন। ২০২৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি সিনেমাটি মুক্তির ৫০ বছর পার করেছে। ৫০ বছর পূর্তিতে এটি নিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে বিস্তর কথা বলেছেন গুলজার।
সাক্ষাৎকারে তিনি সুচিত্রা সেনের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা যেমন শেয়ার করেছেন, তেমন উঠে এসেছে তাদের মধ্যকার সম্পর্কের গল্পটাও। তিনি জানিয়েছেন, সবাই সুচিত্রা সেনকে ‘ম্যাডাম’ ডাকলেও তিনি ডাকতেন ‘স্যার’ বলে! কিন্তু কেন? সে কথাও জানিয়েছেন এই বলিউড কিংবদন্তি।
গুলজার বলেন, “আমরা যখন ‘আঁধি’র শুটিং করছিলাম, সুচিত্রা সেন আমাকে ‘স্যার’ ডাকা শুরু করেন প্রথম থেকেই। অথচ কলকাতায় সবাই তাকে ‘ম্যাডাম’ ডাকতেন। আমি ওনার চেয়ে বয়সে ছোট ছিলাম। আমাকে ‘স্যার’ ডাকতে নিষেধ করতাম কিন্তু তবুও আমাকে তিনি এভাবেই সম্বোধন করতেন। আমরা সবসময় বাংলায় কথা বলতাম। একসময় ওনাকে থামাতে না পেরে আমিও ‘স্যার’ ডাকা শুরু করি। অর্থাৎ আমরা দু’জনেই দু’জনকে ‘স্যার’ ডাকতাম। যেটা আর কোনও ডিরেক্টর-শিল্পীর ক্ষেত্রে ঘটেছে বলে আমার জানা নেই।’’ সুচিত্রা সেনের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে গুলজার বলেন, ‘তিনি ছিলেন খুবই আন্তরিক ও বন্ধুপরায়ণ একজন মানুষ। আমার মনে হয় সুচিত্রা সেন ও উত্তম কুমার যথেষ্ট স্বীকৃতি পায়নি, মানে যতটা তাদের পাওয়া উচিত। আমি তাকে খুবই শ্রদ্ধা করি। তবে তিনি খুব বেছে বেছে বন্ধু নির্বাচন করতেন। এটা অবশ্য তার ইচ্ছে। সুচিত্রা সেন ইন্ডাস্ট্রিতে উজ্জ্বল উদাহরণ তৈরি করেছেন।’
গুলজার কীভাবে সুচিত্রা সেনকে সিনেমাটি করতে রাজি করিয়েছিলেন সেই প্রসঙ্গেও কথা বলেন। কারণ তখন সুচিত্রা কলকাতার সিনেমায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করছেন। হিন্দি সিনেমায় কাজ করেন খুব বেছে বেছে। গুলজার প্রথমে তাকে অন্য একটি সিনেমার চিত্রনাট্য পড়ে শোনান। সুচিত্রা সেন কিছু বিষয় পরিবর্তন করার জন্য পরামর্শ দেন। কিন্তু গুলজার রাজি হননি। এ কারণে সুচিত্রা সিনেমাটি ফিরিয়ে দেন।
এরপর তিন বছর পর গুলজার ‘আঁধি’ সিনেমার চিত্রনাট্য নিয়ে যান অভিনেত্রীর কাছে। তখন সুচিত্রা সেন কাজটি করতে রাজি হন এবং বলেন, ‘এখন আর আমি কোনও পরামর্শ দেবো না।’
গুলজার জানান, সুচিত্রা সেন ‘আঁধি’র চিত্রনাট্য খুব পছন্দ করেছিলেন। শুটিং করেছিলেন বেঙ্গালুরুতে। তিনি আরও বলেন, ‘তার (সুচিত্রা) সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা ছিল সত্যিই দারুণ। এটা আমার আজীবন স্মৃতিতে থেকে যাবে। তবে এরপর আর আমাদের দেখা হয়নি। আমি শুনেছিলাম তিনি স্বেচ্ছায় নিজেকে সবার থেকে বিচ্ছিন্ন জীবন বেছে নিয়েছেন।’
বলা দরকার, ১৯৭৯ সাল থেকে সুচিত্রা সেন অনেকটা আত্মগোপনে চলে যান নিজ বাড়িতে। এরপর থেকে আর তাকে মিডিয়ার কেউ দেখতে পাননি। ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি তিনি না ফেরার দেশে পাড়ি জমান।