X
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪
২৪ বৈশাখ ১৪৩১

সুচিত্রা সেনের পাবনার বাড়িটি সংস্কারের উদ্যোগ

পাবনা প্রতিনিধি
০৭ নভেম্বর ২০২৩, ২০:১৩আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৩, ১৩:১৫

বাংলা চলচ্চিত্রের মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের পাবনার পৈত্রিক বাড়ি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য সোমবার (৬ নভেম্বর) বিকেলে জেলা প্রশাসক মো. আসাদুজ্জামান শহরের হেমসাগর লেনে অবস্থিত বাড়িটি পরিদর্শন করেন। পরে তিনি সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সার্বিক বিষয় নিয়ে মতবিনিময় করেন।

পাবনার জেলা প্রশাসক মু. আসাদুজ্জামানের সভাপতিত্ব সভায় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শরীফ আহম্মেদ, সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. রামদুলাল ভৌমিক, পাবনা প্রেসক্লাব সভাপতি ও সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সদস্য এবিএম ফজলুর রহমান, এনডিসি মোহাম্মদ আবুল হাসানাত, পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ড. নরেশ চন্দ্র মধু, সহকারী কমিশনার মোঃ মনিরুল ইসলাম, পরিষদের নির্বাহী সদস্য মাজহারুল ইসলাম ও সদস্য সাংবাদিক আবুল কালাম আজাদ।

সুচিত্রা সেনের বাড়িতে কিভাবে সংগ্রহশালা হিসেবে আরও সুন্দরভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা যায় সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। সরকারের কাছে সংগ্রহশালা করার যে প্রস্তাব রয়েছে তা বাস্তবায়নের জন্য করণীয় নির্ধারণ করা হয়। বাড়িটিকে ঠিক রেখে বর্তমানে সংস্কারের জন্য এনডিসি মোহাম্মদ আবুল হাছানাত এবং পরিষদের পক্ষ থেকে ড. নরেশ মধুকে সহযোগিতার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়।

বাড়ির ভেতরের অংশ মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেন, প্রতিদিনই দেশ ও বিদেশ থেকে অসংখ্য দর্শনার্থী বাড়িটি দেখার জন্য আসেন। বাড়িটির প্রতি সংস্কৃতি প্রেমীদের গভীর ভালোবাসা ও আবেগ রয়েছে। সুতরাং বাড়িটিকে সুন্দর দর্শনীয় রাখার প্রতি নজর দেয়া প্রয়োজন।  

জেলা প্রশাসক বাড়িটি ঘুরে দেখেন এবং করণীয় বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করেন। এ সময় ড. নরেশ মধু সুচিত্রা সেন কন্যা মুনমুন সেনের সাথে জেলা প্রশাসকের মতবিনিময় করার সংযোগ স্থাপন করে দেন। পরস্পর মতবিনিময় করেন এবং জেলা প্রশাসক মুনমুন সেনকে পাবনায় তার পৈতৃক বাড়ি দেখার জন্য আমন্ত্রণ জানান।

১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল পাবনা জেলার হেমসাগর লেনের এই বাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন সুচিত্রা সেন। নয় ভাইবোনের মধ্যে সুচিত্রা ছিলেন পঞ্চম। বাড়ির ছোটরা ডাকতেন রাঙাদি বলে। মা-বাবা নাম রেখেছিলেন রমা। পরিচালক সুকুমার দাশগুপ্তের সহকারি নীতীশ রায় তা বদলে রাখেন সুচিত্রা। কিন্তু পাবনার মহাকালী পাঠশালার খাতায় তার নাম ছিল কৃষ্ণা দাশগুপ্ত।

বাড়ির বাইরের অংশ পাবনা শহরের গোপালপুর মহল্লার হেমসাগর লেনের একতলা পাকা পৈত্রিক বাড়িতে সুচিত্রা সেনের শিশুকাল, শৈশব ও কৈশোর কেটেছে। তার বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত পাবনা মিউনিসিপালটির স্যানিটারি ইন্সপেক্টর পদে চাকুরী করতেন। মা ইন্দিরা দাশগুপ্ত ছিলেন গৃহিনী। দু’বোনের মধ্যে সুচিত্রা সেন ছিলেন বড়। ছোট বোন হেনা দাশগুপ্ত। শহরের মহাকালী পাঠশালায় পড়ালেখা শেষ করে সুচিত্রা সেন স্থানীয় পাবনা বালিকা বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। পড়ালেখায় খুব একটা মনোযোগী ও মেধাবী না থাকলেও গান, নাটক, অভিনয়ের প্রতি ঝোঁক ছিল সুচিত্রা সেনের। পাবনা শহরের নানা অনুষ্ঠানে গান গাওয়া ও নাটক থিয়েটারে তিনি অভিনয়ে দক্ষতা দেখান ছোটবেলাতেই।

উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেয়া সুচিত্রা সেন ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের ক’মাস আগে বাবা করুণাময় দাসগুপ্ত পাবনার বাড়ি-ঘর, চাকুরি সবকিছু ফেলে সপরিবারে ভারত চলে যান। কলকাতা যাবার বছর দু’য়েক পরেই সেখানকার বনেদি পরিবারের ছেলে দিবানাথ সেনের সাথে বিয়ে হয় সুচিত্রা সেনের।
 
সুচিত্রা সেন বিয়ের আড়াই বছরের মাথায় ১৯৫২ সালে ‘শেষ কোথায়’ নামের একটি বাংলা ছবিতে তিনি প্রথম অভিনয় করেন। অজ্ঞাত কারণে ছবিটি মুক্তি পায়নি। এরপর ১৯৫৩ সালে নায়িকা হয়ে তার অভিনীত প্রথম ছবি ‘সাত নম্বর কয়েদি’ মুক্তি পায়। ১৯৫৩ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত ৩৫ বছর সুচিত্রা সেন একটানা বাংলা সিনেমায় অভিনয় করেন। স্বামী দিবানাথ সেনের প্রবল আপত্তি থাকলেও সুচিত্রা সেন মনের তাগিদে নিজেকে অভিনয়ে জড়িয়ে রাখেন। সুচিত্রা সেন বাংলা ৫৬টি ও ৭টি হিন্দি মিলে মোট ৬৩টি ছবিতে নায়িকা হয়ে অভিনয় করেছেন। উত্তম কুমারের সঙ্গে জুটি হয়ে বিশ্বে ব্যাপক আলোড়ন তোলেন। ১৯৭৮ সালে উত্তম কুমার মারা গেলে সিনেমায় অভিনয় বন্ধ করে দেন। চলে যান অন্তরালে।

১৯৬৩ সালে ‘সাত পাকে বাঁধা’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে সুচিত্রা সেন সিলভার প্রাইজ ফর বেস্টে অ্যাকট্রেস জয় করেন। তিনিই প্রথম ভারতীয় অভিনেত্রী যিনি কোনও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হয়েছিলেন। ভারত সরকারও তাকে পদ্মশ্রী সম্মান প্রদান করেন। ২০০৫ সালে তাকে দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার দেয়ার প্রস্তাব রাখলে তিনি জনসমক্ষে আসতে চাননি বলে তা গ্রহণ করেননি। ২০১২ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সর্বোচ্চ সম্মান বঙ্গবিভূষণ দেয়া হয়।

২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। উত্তম-সুচিত্রা

/এমএম/
সম্পর্কিত
সুচিত্রা সেনের যে প্রতিভা একবারই এসেছিল প্রকাশ্যে
জন্মদিনে স্মরণসুচিত্রা সেনের যে প্রতিভা একবারই এসেছিল প্রকাশ্যে
মহানায়িকা সম্পর্কে এই তথ্যগুলো জানেন কি
প্রয়াণ দিনে স্মরণমহানায়িকা সম্পর্কে এই তথ্যগুলো জানেন কি
উত্তম-সুচিত্রা-সৌমিত্রকে চেনা যায়!
উত্তম-সুচিত্রা-সৌমিত্রকে চেনা যায়!
সুচিত্রা সেনের কিছু দুর্লভ ছবি ও গল্প
সুচিত্রা সেনের কিছু দুর্লভ ছবি ও গল্প
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
দুর্গম চর থেকে সিনেমার নাম ভূমিকায় এই শিশু
দুর্গম চর থেকে সিনেমার নাম ভূমিকায় এই শিশু
আচমকা এলো দেড় মিনিটের উসকানিমূলক ‘তুফান’!
আচমকা এলো দেড় মিনিটের উসকানিমূলক ‘তুফান’!
৮ নন্দিত শিল্পীকে নিয়ে আসিফ ইকবালের ‘ঐশ্বর্য’
৮ নন্দিত শিল্পীকে নিয়ে আসিফ ইকবালের ‘ঐশ্বর্য’
কঙ্গনার দাবি: বলিউডের খান-কাপুরদের চেয়েও জনপ্রিয় তিনি
কঙ্গনার দাবি: বলিউডের খান-কাপুরদের চেয়েও জনপ্রিয় তিনি
ছুড়ে দেওয়া সব তীর সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা
ছুড়ে দেওয়া সব তীর সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা