এদিকটায় যারা এসেছেন, তাদের ভালোই জানা। যারা আসেননি তারাও অনুমান করেন– ফরাসিদের কাছে পেট বা পোষ্য কতটা স্নেহের। ঘরে-বাইরে তাদের জীবনযাপনের অন্যতম অনুষঙ্গ কুকুর-বিড়াল। বিশেষ করে প্যারিস হয়ে কান শহরের বাস, ট্রেন, গাড়ি, রাস্তা, রেস্তোরাঁ, পার্কসহ সর্বত্র দেখা যায় ফরাসিদের সঙ্গে একটি করে আদরের পোষা কুকুর। এটা ঠিক গত পাঁচ দিনের কানদর্শনে বেড়াল একেবারেই চোখে পড়েনি পথে-ঘাটে। সম্ভবত তারা ঘরেই থাকতে অভ্যস্ত।
যদিও এই খবরের শিরোনাম ফরাসিদের পোষ্যপ্রীতি নিয়ে নয়। তবে প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যাওয়াও অস্বস্তিকর। তাই শিরোনামের সূত্র ধরে হালকা রেশ রেখে যাওয়া।
এদিকে প্রায় সব পাঠকই জানেন, মুষলধারে বৃষ্টিকে ইংরেজিতে ‘ক্যাটস অ্যান্ড ডগস’ বলা হয়। গত দুই দিন ধরে কানে টানা বৃষ্টির ব্যাপারটা লিখতে গিয়ে সেটাই মনে পড়লো আগে। ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী ছোট শহরটি গত ১৬ মে থেকে ভাসছে উৎসবের আনন্দে। ওইদিন শুরু হয়েছে ৭৬তম কান চলচ্চিত্র উৎসব। বৈশ্বিক এই আসরকে সামনে রেখে হলিউড থেকে ঢালিউডসহ বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের সিনেমা সংশ্লিষ্টরা হাজির হয়েছেন কানে।
উৎসবের প্রথম তিন দিন (১৬ মে-১৮ মে) ঝকঝকে সূর্যদীঘল দিন দেখেছেন কানসৈকতের অতিথিরা। দীঘল বলার কারণ বলা দরকার। এখানে সকাল হয় ঢাকার সকালের মতোই, ভোর পাঁচটা-ছয়টার দিকে আলো ফোটে আকাশে। কিন্তু সন্ধ্যাটা আসে বিস্ময় জাগিয়ে, অনেক পরে! এখানে ঘড়ির কাঁটা ধরে বিকাল ছয়টাকে ‘সন্ধ্যা’ ডাকা হয় বটে, কিন্তু দিনের আলো নেভে রাত ৯টা-১০টার পরে! সন্ধ্যা হলো, রাতও হলো; কিন্তু সূর্যালোকিত শহর!
গত দুই দিন (১৯ মে-২০ মে) ধরে সাগরপাড়ের শহর মেঘে ঢাকা, বৃষ্টিতে ভিজে চুপচুপে। ঝুম নয়, ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে। প্রকৃতির খামখেয়ালীপনায় স্বাভাবিক জীবনে খানিক বাধা পড়লেও পথের ধারে কফি শপে কিংবা উৎসবের প্রাণকেন্দ্র পালে দে ফেস্টিভ্যাল ভবনের এদিক-সেদিক আড্ডায় জমজমাট। এদিকে বৃষ্টি উপলক্ষে পালে ভবনের আশেপাশের এলাকায় শত শত রেস্তোরাঁয় যেন আড্ডার ফুলঝুরি। প্রতিটি রেস্তোরাঁ কলধ্বনিতে মুখর।
পালে ভবনের প্রেসরুমে বসে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপে আলজেরিয়ান সাংবাদিক ইলিয়াস বলেন, ‘এই আবহাওয়া বেশ উপভোগ করছি। আমি তো মনে করছি, কান শহরজুড়ে ছড়িয়ে থাকা সাংবাদিক ও সিনেমাওয়ালাদের জন্য এই বৃষ্টি আরও কাছাকাছি বসার সুযোগ করে দিয়েছে। রোদ হাসলে তো সবাই ছড়িয়ে যায়!’
উৎসবের প্রাণকেন্দ্র পালে দে ফেস্টিভ্যাল ভবনের সামনে যেন নেমেছে ছাতার মিছিল।প্রবেশ পথগুলোতে ক্রেতা খুঁজতে ব্যস্ত ছাতা বিক্রেতারা। প্রতিটি ছাতার দাম ৫-১৫ ইউরো পর্যন্ত। বিক্রিও হচ্ছে দেদার।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা ফিল্ম প্রফেশনাল ইসমাইল হোসেন আলাপচারিতায় বলেন, ‘বৃষ্টি তো মূলত বাধা নয়, বরং উৎসবের আমেজ বাড়িয়ে দিয়েছে বলে আমার মনে হয়। তাছাড়া বৃষ্টির যে গতি, সেটা গায়ে লেগেও পড়ে যায়, অনেকটা শিশিরের মতোই লাগছে আমার কাছে। এখানে বৃষ্টি-বাতাস মিলিয়ে তাপমাত্রা কিন্তু স্বাভাবিক। যদি সেটা হিম হতো, তাহলে দুশ্চিন্তার কারণ ছিল। আমি মনে করি, মেঘাচ্ছন্ন আকাশে তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকায় এখানে এসে আবহাওয়া বেশ উপভোগ করছেন সবাই।’
কান চলচ্চিত্র উৎসবের জৌলুস লালগালিচা রোজ হয়ে থাকে বিকাল থেকে রাত অবধি। তবে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে খোলা আকাশের নিচে এই আয়োজনে কিছুটা বিঘ্ন ঘটছে। মজার ব্যাপার হলো, গত দুই দিন (১৯ মে-২০ মে) রাত হয়ে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ‘ক্যাটস অ্যান্ড ডগ’ চললেও, লালগালিচায় তারকাদের হাঁটার সময় বৃষ্টি থেমে যায়! তখন হেসে ওঠে রোদ।
শনিবার (২০ মে) বিকাল ৩টা নাগাদ রোদের দেখা না মিললেও বৃষ্টি থেমেছে যথাসময়ে, ২টার দিকে। বিশ্বের নামজাদা তারকারা লালগালিচা মাড়িয়ে যাচ্ছেন। তাদের দেখতে পালে ভবনের সামনে ঢল নেমেছে মানুষের।
কানের স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্যে, দক্ষিণ ফরাসি উপকূলে রোদ-বৃষ্টির নিশ্চয়তা নেই! যেকোনও সময় ঝুম বৃষ্টি নেমে যেতে পারে, খানিক বাদেই দেখা যায় ঝলমলে রোদ। যেকোনও সময় দুটোকেই বরণ করে নিতে হয় তাদের। তাতে অবশ্য আপত্তি নেই, কারণ দুটোই সহনীয়; রোমান্টিক বলাটাই সম্ভবত উত্তম।