স্বাভাবিক, উচ্ছ্বাসের বন্যায় ভাসছে মিশা-জায়েদ প্যানেল। কারণ, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ইতিহাসে এবারই প্রথম, পুরো প্যানেল জয়লাভ করেছে।
তবে ইতিহাসটা আরও সমৃদ্ধ হতে পারতো, যদি মিশা সওদাগরের প্রতিদ্বন্দ্বী মৌসুমী জয়লাভ করতেন। সেটি হতো চলচ্চিত্র শিল্পীদের প্রথম নারী সভাপতির ইতিহাস। যদিও সেটি আর হলো না, উল্টো ভোটের ব্যবধান বিপুল।
এদিকে মৌসুমীর এই পরাজয়কে ঠিক পরাজয় হিসেবে দেখছেন না মিশা সওদাগর। বলছেন, ‘মৌসুমীকে আমি সাধুবাদ জানাই। মহিলা মানুষ হয়েও সে যে এত বড় পোস্টে এবং আমার মতো অভিজ্ঞ প্রার্থীর বিপরীতে নির্বাচন করতে এসেছে, এটা সত্যিই সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য।’
তার বক্তব্যের ব্যাখ্যা হিসেবে মিশা আরও বলেন, ‘দেখুন একটা বাচ্চা যখন মায়ের পেটে জন্ম হয়, সেটি বড় হয়ে ভূমিষ্ঠ হতেও ১০ মাস সময় লাগে। অথচ ও (মৌসুমী) হঠাৎ করেই চলে এসেছে নির্বাচনে! তাই মৌসুমীর এটা পরাজয় নয়। এটাকে বলবো অভিজ্ঞতার অভাব। ভোটারদের মন জয় করা এত সহজ কাজ নয়।’
ভোট হলো, ফলাফলও হলো। চলচ্চিত্র শিল্পীদের সভাপতির চেয়ার থেকে গেল মিশা সওদাগরের কাছেই। কিন্তু শিল্পীদের জন্য কাজ করার ক্ষেত্রে পরাজিত প্রার্থী মৌসুমীর সাপোর্ট কিংবা পরামর্শ নেওয়া নিয়ে কোনও ভাবনা আছে কি? কারণ, মিশা সওদাগরের ২২৭ ভোটের বিপরীতে মৌসুমী পেয়েছেন ১২৫ ভোট, যা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়ার বিষয় নয়।
এমন কথায় সমর্থন দিলেন মিশা সওদাগর। বললেন, ‘ভোটের দিন (২৫ অক্টোবর) ওর (মৌসুমী) সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেটি হলো যে-ই হেরে যাবো, বিরোধিতা করবো না। বরং সাপোর্ট করবো। শুভেচ্ছা জানাবো। ব্লেম দেবো না কাউকে। আসলে নির্বাচনের সৌন্দর্য তো এটাই। তাই আমি এখন মৌসুমীকে বলবো, এটা পরাজয় নয়। এখন মালাবদলের পালা। যদিও মালাটা আমারই ছিল। সেটিই আবার পরে নিলাম। ফলাফল আমার পক্ষে আসায় মালাবদল করতে পারিনি। গানের সুরে মৌসুমীকে এটাও বলতে চাই- হারজিৎ চিরদিন থাকবে, তবুও এগিয়ে যেতে হবে...। কি ঠিক না বেঠিক?’
এদিকে মিশা সওদাগর চলচ্চিত্র পরিবারের সব সদস্যকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন এই বিজয়ের জন্য। নায়ক ফারুক, সোহেল রানা, ডিপজল, রুবেলসহ সমিতির সদস্যদের প্রতি প্রকাশ করেছেন কৃতজ্ঞতা। বলেছেন, চলচ্চিত্র শিল্প ও শিল্পীদের উন্নয়নে তাদের কার্যক্রম গত দুই বছরের মতো সামনেও অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, ‘গত দুই বছর আমরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছি। কথায় না, আমরা কাজে বিশ্বাসী। কথা কম বলেছি। কাজটা করেছি। যার ফলাফল পেলাম এই নির্বাচনে। লক্ষ্য করুন, জাস্ট ডাবল ভোটের ব্যবধানে পাস করেছি। এই জয় চলচ্চিত্রের জয়।’
এদিকে সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান প্রসঙ্গেও উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন মিশা সওদাগর। বলেন, ‘আমি এমন একজন সেনাপতি পেয়েছি, যার গুণের কথা বলে শেষ করা যাবে না। সে এমনই একজন মানুষ, একাই সব সমস্যার সমাধান করতে পারে। আমাকে ফিল্ডে যেতে হয় না। আমি তার মতো সেনাপতি পেয়ে গর্ব করি।’
সারা দিনের (২৫ অক্টোবর) জল্পনা-কল্পনা শেষে শুক্রবার দিবাগত রাত (২৬ অক্টোবর) সোয়া একটার দিকে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির দ্বিবার্ষিক (২০১৯-২১) নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ইলিয়াস কাঞ্চন।
সেখানে বিপুল ভোটে বিজয় ছিনিয়ে নেয় মিশা সওদাগর-জায়েদ খানের পুরো প্যানেল। অন্যদিকে পরাজয় ঘটে এবারের আলোচিত স্বতন্ত্র সভাপতি প্রার্থী মৌসুমীর।
ফলাফলের চূড়ান্ত তালিকা খুঁজে দেখা যায়, প্রধান দুই সভাপতি প্রার্থীর মধ্যে ভোটের ব্যবধান ১০২! এরমধ্যে মিশা সওদাগর পান ২২৭ আর মৌসুমী পান মাত্র ১২৫ ভোট। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে জায়েদ খান পান ২৮৪ ভোট আর ইলিয়াস কোবরা পান মাত্র ৬৮ ভোট। ছবি: নাসিরুল ইসলাম