X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

ক্যানসারে আক্রান্ত ‘কোথাও কেউ নেই’-খ্যাত ‘বদি’

বিনোদন রিপোর্ট
১৭ ডিসেম্বর ২০২০, ০২:০৬আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২০, ১৮:১৫

আবদুল কাদের নব্বই দশকের শুরুর দিকে ‘কোথাও কেউ নেই’ ধারাবাহিকে ‘বদি’ চরিত্র দিয়ে সবার নজরে আসেন অভিনেতা আবদুল কাদের। টানা তিন দশকের অভিনয় ব্যস্ততা পেরিয়ে এখন তিনি ভারতের একটি হাসপাতালে লড়াই করছেন মরণব্যাধি ক্যানসারের সঙ্গে।
তার অবস্থা সংকটাপন্ন, এমনটাই জানান অভিনয় শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব নাসিম।
পরিবারের সদস্যদের বরাত দিয়ে নাসিম জানান, ভেলোরের সিএমসি হাসপাতালে এই অভিনেতা চিকিৎসাধীন আছেন।
জানা গেছে, করোনার সময়ের প্রায় পুরোটা বেশ অসুস্থ ছিলেন এই অভিনেতা। বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে পারেননি। গত ৮ ডিসেম্বর তাকে চেন্নাইয়ের ভেলোরে নেওয়া হয়। সেখানেই ক্যানসারের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) এই অভিনেতার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটছে বলে জানান নাসিম।
তার ভাষ্যে, ‘উনার রক্তের হিমোগ্লোবিন কমে যাচ্ছে। তবে চিকিৎসকরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সেটি উন্নতির। ওনার জন্য সবার কাছ থেকে দোয়া প্রত্যাশা করছি। আর সাংগঠনিকভাবে আমরা প্রতিনিয়ত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।’
আবদুল কাদেরর জন্ম মুন্সীগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ী থানার সোনারং গ্রামে। স্ত্রী খাইরুননেছা কাদের। তিনি এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক।
সোনারং হাইস্কুলে পড়ার পর বন্দর হাইস্কুল থেকে এসএসসি, ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে বিএ অনার্স ও এমএ করেন তিনি।
অর্থনীতিতে সিঙ্গাইর কলেজ ও লৌহজং কলেজে অধ্যাপনা এবং বিটপী বিজ্ঞাপনী সংস্থায় এক্সিকিউটিভ হিসেবে চাকরির পর ১৯৭৯ সাল থেকে আন্তর্জাতিক কোম্পানি ‘বাটা’তে চাকরিরত এখনও।
দেশের নাট্যাঙ্গনে আবদুল কাদের একটি সুপরিচিত নাম। স্কুলজীবন থেকেই অভিনয় শুরু তার। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকে অমল চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তার প্রথম অভিনয়।
১৯৭২-৭৪ পর পর তিন বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়  ‍মুহসীন হল ছাত্র সংসদের নাট্য সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২ সালে আন্তহল নাট্য প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন মুহসীন হলের নাটক সেলিম আল দীন রচিত ও নাসির উদ্দিন ইউসুফ নির্দেশিত ‘জন্ডিস ও বিবিধ বেলুন’-এ অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার লাভ করেন।
বাংলাদেশ টেলিভিশন প্রযোজিত বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণ জ্ঞানের অনুষ্ঠান ‘বলুন দেখি’-তে চ্যাম্পিয়ন দলের অন্যতম সদস্য হিসেবে পুরস্কারও লাভ করেন আবদুল কাদের।
‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকে যথাক্রমে বদি, বাকের ভাই ও মজনু ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ডাকসু নাট্যচক্রের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন। ১৯৭৩ সাল থেকে থিয়েটার নাট্যগোষ্ঠীর সদস্য এবং চার বছর যুগ্ম-সম্পাদকের ও ছয় বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে থিয়েটারের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
১৯৭৪ সালে ঢাকায় আমেরিকান কলেজ থিয়েটার ট্রুপ কর্তৃক আয়োজিত অভিনয় কর্মশালায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ১৯৭২ সাল থেকে টেলিভিশন ও ১৯৭৩ সাল থেকে রেডিও নাটকে অভিনয় শুরু হয় তার। টেলিভিশনে তার অভিনীত প্রথম কিশোর ধারাবাহিক নাটক ‘এসো গল্পের দেশে’।
আবদুল কাদের বাংলাদেশ টেলিভিশনের নাট্যশিল্পী ও নাট্যকারদের একমাত্র সংগঠন ‘টেলিভিশন নাট্যশিল্পী ও নাট্যকার সংসদ’ টেনাশিনাস-এর সহ-সভাপতি।
থিয়েটারের প্রায় ৩০টি প্রযোজনায় প্রতিটিতে অভিনয় এবং ১০০০টিরও বেশি প্রদর্শনীতে অভিনয়ে অংশগ্রহণ করেছেন।
তার উল্লেখযোগ্য মঞ্চনাটকের মধ্যে রয়েছে ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’, ‘এখনও ক্রীতদাস’, ‘তোমরাই’, ‘স্পর্ধা’, ‘দুই বোন’, ‘মেরাজ ফকিরের মা’ প্রভৃতি।
১৯৮২ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক নাট্য উৎসবে বাংলাদেশের নাটক থিয়েটারের ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’-এ অভিনয় করেন। এছাড়া দেশের বাইরে জাপান, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, দুবাই এবং দেশের প্রায় সবক’টি জেলায় আমন্ত্রিত হয়ে মঞ্চে অভিনয় করেছেন। এছাড়া টেলিভিশনে দুই হাজারের বেশি নাটকে অভিনয় করেছেন।
তার উল্লেখযোগ্য টিভি নাটকের মধ্যে রয়েছে, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘মাটির কোলে’, ‘নক্ষত্রের রাত’, ‘শীর্ষবিন্দু’, ‘সবুজ সাথী’, ‘তিন টেক্কা’, ‘যুবরাজ’, ‘আগুন লাগা সন্ধ্যা’, ‘এই সেই কণ্ঠস্বর’, ‘আমার দেশের লাগি’, ‘প্যাকেজ সংবাদ’, ‘সবুজ ছায়া’, ‘কার ছায়া ছিল’, ‘দীঘল গায়ের কন্যা’, ‘কুসুম কুসুম ভালোবাসা’, ‘নীতু তোমাকে ভালোবাসি’, ‘আমাদের ছোট নদী’, ‘ভালমন্দ মানুষেরা’, ‘দূরের আকাশ’, ‘ফুটানী বাবুরা’, ‘হারানো সুর’, ‘দুলাভাই’, ‘অজ্ঞান পার্টি’, ‘লোভ’, ‘মোবারকের ঈদ’, ‘বহুরূপী’, ‘এই মেকাপ’, ‘ঢুলী বাড়ী’, ‘সাত গোয়েন্দা’, ‘এক জনমে’, ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’, ‘খান বাহাদুরের তিন ছেলে’, ‘ইন্টারনেটের বউ’, ‘ঈদ মোবারক’, ‘সিটিজেন’, ‘হতাই’, ‘ফাঁপড়’, ‘চারবিবি’, ‘সুন্দরপুর কতদূর’, ‘ভালবাসার ডাক্তার’, ‘চোরাগলি’, ‘বয়রা পরিবার’ প্রভৃতি।
চলচ্চিত্র ‘রং নাম্বার’সহ অসংখ্য বিজ্ঞাপনে কাজ করেছেন এই অভিনেতা। হানিফ সংকেতের ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’র মঞ্চেও রয়েছে আবদুল কাদেরের সরব উপস্থিতি।

/এমএম/এমওএফ/
সম্পর্কিত
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
প্রেম নাকি বিয়ে, মুখ খুললেন ইলিয়ানা
প্রেম নাকি বিয়ে, মুখ খুললেন ইলিয়ানা
এফডিসিতে মারামারি: যৌথ বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হলো
এফডিসিতে মারামারি: যৌথ বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হলো
সেন্সর বোর্ডের সিদ্ধান্ত, রাফীর সিনেমাটি প্রদর্শনের অযোগ্য!
সেন্সর বোর্ডের সিদ্ধান্ত, রাফীর সিনেমাটি প্রদর্শনের অযোগ্য!