X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

যোদ্ধা থেকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

মিছবাহ পাটওয়ারী
২৯ আগস্ট ২০১৬, ১৫:০৭আপডেট : ২৯ আগস্ট ২০১৬, ১৫:৫১

জন কেরি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। পুরো নাম জন ফোর্বস কেরি। একজন সাহসী যোদ্ধা হিসেবে দেশের হয়ে যিনি লড়াই করেছেন ভিয়েতনামের রণাঙ্গনে। নৌ সেনা হিসেবে যুদ্ধে বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ ভূষিত হয়েছেন সিলবার স্টারসহ যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক সম্মানজনক পুরস্কারে। সেই যোদ্ধাই এখন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যরিয়ারে জন কেরি পালন করেছেন নানা গুরুদায়িত্ব। দীর্ঘ সময় ধরে ম্যাসাচুসেটস রাজ্যের সিনেটর ছিলেন। এছাড়া মার্কিন সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক সংক্রান্ত কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

২০০৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মনোনয়ন পেলেও হোয়াইট হাউসের সর্বময় কর্তত্বের স্বপ্ন অধরাই থেকে যায় তার। ওই নির্বাচনে তিনি রিপাবলিকান পার্টির জর্জ ডব্লিউ বুশের কাছে পরাজিত হন। তবে নির্বাচনে হেরে রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাননি এ আপাদমস্তক রাজনীতিক। প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের দ্বিতীয় মেয়াদে দলের প্রতি অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেন বারাক ওবামা। যুক্তরাষ্ট্রের ৬৮তম পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পান প্রবীণ এ কূটনীতিক। ২০১৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে হিলারি ক্লিনটনের উত্তরসূরি হিসেবে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন।

বারাক ওবামা`র সঙ্গে জন কেরি

জন কেরি’র জন্ম ১৯৪৩ সালের ১১ ডিসেম্বর। জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো অঙ্গরাজ্যের ডেনভার শহরে। তার পিতা রিচার্ড জন কেরি ছিলেন আইনজীবী ও মার্কিন ফরেন সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা। মা রোজমেরি ইসাবেল ফোর্বস ছিলেন একজন নার্স ও সমাজকর্মী। জন কেরির পূর্বপুরুষরা ছিলেন অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান (অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি) ইহুদি সম্প্রদায়ের সদস্য। পরে তার দাদা ধর্মান্তরিত হয়ে খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত হন। তার বাবা রিচার্ড জন কেরি একজন ক্যাথলিক খ্রিস্টান হিসেবেই বেড়ে উঠেন।

ম্যাসাচুসেটস এবং নিউ হ্যাম্পশায়ারের বোর্ডিং স্কুলে পড়াশুনা করেন জন কেরি। ১৯৬৬ সালে তিনি ইয়েল ইউনিভার্সিটি থেকে কূটনীতিতে স্নাতক সম্পন্ন করেন। এরপর সেচ্ছাসেবক হিসেবে যোগ দেন ইউনাইটেড স্টেটস নেভি’তে। একপর্যায়ে তিনি ভিয়েতনাম যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এ যুদ্ধে সাহসিকতার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি সিলবার স্টার এবং ব্রোনজ স্টার মেডেলসহ নানা পুরস্কার লাভ করেন।

পরে দেশে ফিরে তিনি ভিয়েতনাম যুদ্ধবিরোধীদের সঙ্গে যোগ দেন। সেখানে তিনি একজন স্পষ্টভাষী মুখপাত্র হিসেবে জাতীয়ভাবে পরিচিত ছিলেন। জন কেরি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র বিষয়ক সিনেট কমিটির কাছে ভিয়েতনাম যুদ্ধের যে নীতি তাতে যুদ্ধাপরাধের বিষয়টি উত্থাপন করেন।

ভিয়েতনাম যুদ্ধ চলাকালে সহকর্মীদের সঙ্গে জন কেরি (ডানে)।

১৯৮৪ সালে তিনি মার্কিন সিনেটে ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারিতে জয়লাভ করেন। সিনেটের ফরেন রিলেশনস কমিটিতেও তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ২০০৩ সালের ইরাকে মার্কিন মার্কিন আগ্রাসনের সময় প্রথমে এটি সমর্থন করলেও একপর্যায়ে তিনি ইরাক যুদ্ধের একজন কট্টর সমালোচক হয়ে উঠেন।

ইরাক যুদ্ধবিরোধী প্রচারণার ওপর ভিত্তি করে ২০০৪ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার লড়াইয়ে অংশ নেন জন কেরি। কিন্তু সে নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন। ২০০৯ সালে তিনি সিনেটে ফরেন রিলেশনস কমিটির চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন।

ওবামা প্রশাসনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই দুনিয়ার আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়িয়েছেন এ প্রবীণ রাজনীতিক। তার দায়িত্ব পালনকালেই ১৪ জুলাই ২০১৫ তারিখে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় ইরানের সঙ্গে পশ্চিমা দুনিয়ার বহুল আলোচিত পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ হয়ে ওই চুক্তি স্বাক্ষরে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। অথচ চুক্তি স্বাক্ষরের দুদিন আগেই এ আলোচনা-প্রক্রিয়াকে ‘কষ্টকর রকম ধীরগতির’ বলে মন্তব্য করেছিলেন তৎকালীন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড।

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জন কেরি। ছবি: নাসিরুল ইসলাম।

২৯ আগস্ট ২০১৬ তারিখে একদিনের সফরে ঢাকায় আসেন ওবামা প্রশাসনের এ জ্যেষ্ঠ সদস্য। জেনেভা থেকে জন কেরিকে বহনকারী বিশেষ বিমানটি সোমবার সকাল ১০টা ১০ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

ব্যক্তিগত জীবনে জন কেরি বিবাহিত ও দুই কন্যা সন্তানের জনক। ১৯৭০ সালে তিনি জুলিয়া থ্রোন-এর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৮৮ সালে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। পরে ১৯৯৫ সালে তিনি তেরেসা হেইনজ-এর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।

তার দুই সন্তানের উভয়েই প্রথম স্ত্রী জুলিয়া থ্রোন-এর ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। বড় মেয়ে আলেকজান্দ্রা কেরি একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা। তার জন্ম ১৯৭৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর। ছোট মেয়ে ভ্যানেসা কেরি একজন চিকিৎসক। তার জন্ম ১৯৭৬ সালে।

জন কেরি ১৯৬৬ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত মার্কিন নৌবাহিনীতে লেফটেন্যান্ট পদে কর্মরত ছিলেন।

রাজনীতির বাইরে জন কেরি লেখালেখি করেন। তার ‘অ্যা কল টু সার্ভিস: মাই ভিশন ফর অ্যা বেটার আমেরিকা’ বইটি ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। এছাড়া স্ত্রী তেরেসা হেইনজ-এর সঙ্গে যৌথভাবে লেখা ‘দিস মোমেন্ট অন আর্থ’ বইটিও পাঠকমহলে যথেষ্ট সমাদৃত হয়েছে।

সূত্র: উইকিপিডিয়া, সিএনএন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট।

/এমপি/

সম্পর্কিত
বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ নিয়ে মুখ খুললেন বাইডেন
মার্কিন ও ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের ওপর ইরানের নিষেধাজ্ঞা
উ. কোরিয়ার হুমকির মুখে কূটনৈতিক সতর্কতা বাড়ালো দ. কোরিয়া
সর্বশেষ খবর
অপহৃত ১০ বাংলাদেশিকে ফেরত দিয়েছে আরাকান আর্মি
অপহৃত ১০ বাংলাদেশিকে ফেরত দিয়েছে আরাকান আর্মি
ধানমন্ডিতে ছাদ থেকে পড়ে গৃহকর্মী আহত 
ধানমন্ডিতে ছাদ থেকে পড়ে গৃহকর্মী আহত 
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সকার স্কুলের বাছাইয়ে ৩ বাংলাদেশি কিশোর
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সকার স্কুলের বাছাইয়ে ৩ বাংলাদেশি কিশোর
দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঢাকায় স্বস্তির বৃষ্টি, কমলো তাপমাত্রা
দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঢাকায় স্বস্তির বৃষ্টি, কমলো তাপমাত্রা
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা