X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২১ বৈশাখ ১৪৩১

কাশ্মিরে শরণার্থী রোহিঙ্গাদের রাজনীতির বলি বানাচ্ছে বিজেপি ও বিরোধীরা

বিদেশ ডেস্ক
২৮ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৮:৩৪আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৯:৫৮
image

গত মাসে আগুন লেগে জম্মুর রোহিঙ্গা কলোনির অনেকগুলো ঘর পুড়ে যায় রাখাইন রাজ্যে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ ও জাতিগত নির্মূল প্রক্রিয়ায় যারা ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন, সেই রোহিঙ্গাদের কেউ কেউ আশ্রয় নিয়েছেন ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের জম্মুতে। বিশ্বের সবথেকে নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর এই মানুষদের রাজনীতির বলি বানাচ্ছে ক্ষমতাসীন বিজেপি ও বিরোধীরা। নিজ নিজ রাজনৈতিক মতাদর্শ ও স্বার্থগত অবস্থান থেকে রোহিঙ্গা ইস্যুটিকে দেখছে তারা। রোহিঙ্গাদেরকে আদতে ভারতে আশ্রয় দেওয়া উচিত কি না, সেই প্রশ্নে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক।

ক্ষমতাসীন বিজেপির অভিযোগ, রোহিঙ্গারা অবৈধভাবে বসবাস করছে। পাশাপাশি তারা অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত। তাই তাদেরকে থাকতে দেওয়া যায় না। অন্যদিকে বিরোধী দল বলছে, সরকার যেখানে পাকিস্তান থেকে আসা হিন্দু শরণার্থীদের পরিচয় সনদ দেওয়ার কথা ভাবছে, সেখানে রোহিঙ্গাদের প্রতি বিজেপির এই আচরণ ধর্মীয় বিভাজনকেই সামনে নিয়ে আসে।

জম্মুতে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের একজন জাহিদ হোসেন। ২০০৯ সালে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে জম্মুতে বসতি শুরু করেন তিনি। তারাই জম্মুতে বসবাসকারী প্রথম মুসলিম রোহিঙ্গা পরিবার। এরপর একে একে জম্মুতে আসতে থাকে আরও কিছু রোহিঙ্গা পরিবার। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, জম্মুতে এমন ১৫শরও বেশি নিবন্ধনকৃত রোহিঙ্গা মুসলিম পরিবার বসবাস করে। মিয়ানমারে দমন-পীড়নের শিকার হয়ে জম্মুকে নিজেদের আশ্রয় বলে বিবেচনা করেন তারা। না তাদের ভারতের নাগরিকত্ব রয়েছে, না তারা রাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দা। এসব রোহিঙ্গাদের বেশিরভাগই শ্রমিক। বিভিন্ন অর্থনৈতিক কারণে ভারতের অন্য শহরগুলোর তুলনায় জম্মুকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন তারা। জাহিদ বলেন, ‘আমরা ভালো মজুরি পাই, সবজির বাজারও খুব কাছে, সস্তায় জিনিসপত্র কেনা যায়, সেকারণে আমরা জম্মুতে থাকার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে থাকি।’

কিন্তু জম্মুতে ক্রমাগত রোহিঙ্গাদের আগমন বাড়তে থাকায় তা নিয়ে রাজ্য সরকার উদ্বেগে পড়েছে। বিজেপি বলছে, রোহিঙ্গারা অবৈধভাবে বসবাস করছে এবং নানারকম অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত। দলটি এ ইস্যুটিকে বিধানসভায় উত্থাপনের কথাও ভাবছে।

জম্মুর বিজেপির মুখপাত্র অরুণ গুপ্ত বলেন, ‘আমরা এ ইস্যুকে খুব গুরুত্ব সহকারে নিয়েছি। তারা এখানে বসবাস অব্যাহত রাখতে পারে না। তারা সবাই অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত এবং তারা এমন অনেক কাজ করছে যা সমাজের জন্য খারাপ। সুতরাং, আমরা তা মেনে নিতে পারি না।’

জম্মুতে থাকা এক রোহিঙ্গা এনডিটিভির সঙ্গে কথা বলছেন
তবে জম্মু রেঞ্জের পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল দানিশ রানা ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ফার্স্ট পোস্টকে জানান, ৬ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গাকে ভারত সরকার কাজের অনুমতি দিয়েছে এবং তারা ‘জম্মু এলাকায় অবৈধভাবে বসবাস করছে না।

জম্মুর বিরোধী দল ন্যাশনাল কনফারেন্স-এর অভিযোগ, বিজেপি রোহিঙ্গাদেরকে ধর্মের মানদণ্ডে বিচার করছে এবং ধর্মগত কারণেই তাদেরকে আশ্রয় দেওয়ার বিরোধিতা করছে। তাদের দাবি রোহিঙ্গাদেরকে সমর্থন না দিলে বিজেপির উচিত দেশ বিভাগের সময় পাকিস্তান থেকে আসা হিন্দু শরণার্থীদেরও সমর্থন না করা। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পাকিস্তান থেকে আসা হিন্দু শরণার্থীদের পরিচয় সনদ দেওয়ার পরিকল্পনা করার পর তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। সরকার বলছে, পশ্চিম পাকিস্তানি শরণার্থী যারা প্রায় সবাই হিন্দু তাদেরকে পরিচয় সনদ দেওয়া হলেও তারা ‘অরাষ্ট্রীয় বিষয়’ বলেই বিবেচিত হবেন। রাজ্য সরকারের মুখপাত্র এবং শিক্ষামন্ত্রী নাইম আখতার বলেন, ‘ভারতীয় নাগরিক হিসেবে তারা যেন আধা সামরিক বাহিনীসহ কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাকরি পায় তার জন্য কেবল এ পরিচয় সনদ দেওয়া হচ্ছে।’

তবে শরণার্থীদের আশ্রয়ের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারে  এ দ্বৈত নীতি মেনে নিতে নারাজ বিরোধীরা। ন্যাশনাল কনফারেন্স-এর প্রেসিডেন্ট ফারুক আব্দুল্লাহ বলেন, ‘যদি তারা হিন্দু হয়, তারা তাদের গ্রহণ করবে। যদি মুসলিম হয় তারা তাদেরকে গ্রহণ করবে না। যখন এখানে কাশ্মিরি মুসলিমদের থাকার প্রশ্ন আসছে তখন তারা জনসংখ্যাজনিত পরিবর্তন আনার অজুহাত দেখাচ্ছে।’

উল্লেখ্য, শুরুতে ভারতের আন্তর্জাতিক সীমান্তে পাকিস্তানি শরণার্থীদের ৫,৭৬৪টি পরিবার বসবাস করলেও এখন তা বেড়ে ২০ হাজার পরিবারে দাঁড়িয়েছে। এ বসতি এখন ক্রমাগত জম্মু, সাম্বা ও কাঠুয়া এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। পশ্চিম পাকিস্তানি শরণার্থী নেতা লাভা রাম গান্ধীর তথ্য অনুযায়ী, এসব পরিবারের মধ্যে মাত্র ২০টি মুসলিম পরিবার রয়েছে। চার-পাঁচ প্রজন্ম ধরে জম্মু এবং আশেপাশের এলাকায় থাকা এসব শরণার্থীর ভারতীয় নাগরিকতা রয়েছে, কিন্তু তারা জম্মু-কাশ্মিরের স্থায়ী বাসিন্দা নন। সংবিধানের আওতায় রাষ্ট্রীয়ভাবে বিশেষ মর্যাদায় দেখা হয় তাদের। এর আওতায় তারা নিজস্ব সম্পদের মালিক হতে পারেন না এবং তাদের সন্তানরা প্রফেশনাল কলেজে ভর্তি হওয়া কিংবা চাকরিতে কোটা সুবিধা পায় না। তারা লোকসভায় ভোট দিতে পারে কিন্তু বিধানসভায় পারে না।

জম্মুতে পাকিস্তানি শরণার্থীদের তুলনায় রোহিঙ্গাদের সংখ্যাটা নিতান্তই কম। রোহিঙ্গারাও জানে এটা তাদের স্থায়ী বসতি নয়। নিজের দেশে যখন সব ধর্মের মানুষ সমান সুবিধা পাবে তখন তারাও দেশে ফিরে যেতে পারবে বলে আশায় বুক বেঁধে আছেন তারা।

/এফইউ/বিএ/

সম্পর্কিত
তাইওয়ান প্রণালিতে আবারও চীনা সামরিক বিমান শনাক্ত
‘বাংলাদেশ ও ভারত একই লক্ষ্যে এগোচ্ছে’
ভারতের ভোটে বিজেপির পক্ষে কি ‘৪০০ পেরোনো’ আদৌ সম্ভব?  
সর্বশেষ খবর
নবযুগ প্রকাশনীর কর্ণধার অশোক রায় নন্দী মারা গেছেন
নবযুগ প্রকাশনীর কর্ণধার অশোক রায় নন্দী মারা গেছেন
মালয়েশিয়ায় আটকে পড়া বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগ
মালয়েশিয়ায় আটকে পড়া বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগ
চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে মুক্তিযোদ্ধাকে গাছে বেঁধে বিচারের হুমকি
চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে মুক্তিযোদ্ধাকে গাছে বেঁধে বিচারের হুমকি
রোগীকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে এসে সড়কে প্রাণ গেলো ৩ জনের
রোগীকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে এসে সড়কে প্রাণ গেলো ৩ জনের
সর্বাধিক পঠিত
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
গাজীপুরে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ, বগি লাইনচ্যুত
গাজীপুরে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ, বগি লাইনচ্যুত