X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

জ্বলছে লন্ডনের গ্রেনফেল টাওয়ার, বহু হতাহতের আশঙ্কা

বিদেশ ডেস্ক
১৪ জুন ২০১৭, ১৬:০০আপডেট : ১৪ জুন ২০১৭, ১৮:০৭
image

গ্রেনফেল টাওয়ারের আগুন নেভানোর কাজ চলছে
বেশ কয়েক ঘণ্টা পেরিয়ে যাওয়ার পরও পশ্চিম লন্ডনের ২৪ তলাবিশিষ্ট গ্রেনফেল টাওয়ারের আগুন এখনও নেভানো যায়নি। ভয়াবহরকমের এ আগুন নেভাতে হিমশিম খাচ্ছেন দমকলকর্মীরা। মেট্রোপলিটন পুলিশ জানিয়েছে, আগুনে এখন পর্যন্ত ছয়জনের মৃত্যুর ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে, প্রাণহানির সংখ্যা আরও বাড়বে। ইংল্যান্ডের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী, গ্রেনফেলের অগ্নিকাণ্ডেেআহত ৭৪ জন লন্ডনের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। এর মধ্যে ২০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

লন্ডন ফায়ার ব্রিগেডের কমিশনার ড্যানি কটন এ ঘটনাকে ‘নজিরবিহীন’ বলে উল্লেখ করেছেন। ২৯ বছরের কর্মজীবনে এমন ভয়াবহ আগুন দেখেননি বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে আগুন লাগার কারণ জানাতে পারেননি তিনি। এদিকে, গ্রেনফেল টাওয়ারের ত্রুটি এবং ঝুঁকি নিয়ে আগাম সতর্কতার খবরও উঠে আসছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে।

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত সোয়া একটার দিকে ল্যানচেস্টারে লাটিমার রোডের 'গ্রেনফেল টাওয়ার' নামের ওই আবাসিক ভবনটিতে আগুন লাগে। বুধবার পুরো পরিস্থিতি নিয়ে একটি বিবৃতি দেন লন্ডন ফায়ার ব্রিগেডের কমিশনার ড্যানি কটন। বিবৃতিতে তিনি জানান, আগুন লাগার খবর পাওয়ার ছয় মিনিটের মাথায় দমকলকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। আগুন নেভাতে এখন সেখানে ফায়ার ব্রিগেডের ২০০ কর্মী নিয়োজিত রয়েছেন। ড্যানি কটন জানান, আগুনের মাত্রা এতো ভয়াবহ যে তা নিয়ন্ত্রণে আনতে দমকল বাহিনী হিমশিম খাচ্ছে। উদ্ধার তৎপরতাও অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, আগুনের কারণে ভবনটির ভেতরে অনেকে আটকা পড়েন। সাহায্যের আশায় তাদেরকে চিৎকার করতে শোনা যায়। চ্যানেল ফোর টিভির অ্যামেজিং স্পেসেস প্রোগ্রামের উপস্থাপক এবং গ্রেনফেলের অগ্নিকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী জর্জ ক্লার্ক রেডিও ফাইভ লাইভকে বলেন, ‘আমি ছাইয়ে ঢেকে যাচ্ছি। বুঝতেই পারছেন, এখানকার অবস্থা কতটা ভয়াবহ। আমি ১০০ মিটার দূরে দাঁড়িয়ে আছি এবং পুরোপুরি ছাইয়ে ঢেকে গেছি। এটি খুব হৃদয়বিদারক। আমি দেখেছি, ওপরের তলা থেকে কেউ কেউ টর্চের আলো ফেলে সহায়তা চাচ্ছেন, নিশ্চিত তারা বের হতে পারছিলেন না।’

জোডি মার্টিন নামের আরেক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ভবনটিতে আগুন দেখে তিনি সাহায্য করতে ছুটে যান। তিনি বলেন, ভবনে থাকা লোকজনকে ‘বের হয়ে আসুন’ ‘বের হয়ে আসুন’ বলে ডেকেছেন কিন্তু সেখানকার বাসিন্দারা জবাবে জানিয়েছে ভবনের করিডোর ধোঁয়ায় ছেয়ে গেছে; তারা বের হতে পারছেন না।

টিম ডাউনি নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী বিবিসিকে বলেন, ‘ভবনের অংশবিশেষ পুরোপুরি পুড়ে গেছে।’

মেট্রোপলিটন পুলিশের কমান্ডার স্টুয়ার্ট কুন্ডি বলেন, 'এ মুহূর্তে আমি ছয়জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করতে পারছি। আগামি কয়েকদিেনর জটিল উদ্ধার অভিযানের মধ্য দিয়ে আরও মরদেহ পাওয়া যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।'

১৯৭৪ সালে গ্রিনফেল টাওয়ারটি নির্মাণ করে কেনসিংটন এন্ড চেলসিয়া বরো কাউন্সিল। কেনসিংটন এন্ড চেলসিয়া টেনান্ট ম্যানেজমেন্ট অর্গানাইজেশন কাউন্সিলের পক্ষে ভবনটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিল। এ ভবন সোশ্যাল হাউজিং কমপ্লেক্স ল্যানচেস্টার ওয়েস্ট এস্টেটের অংশ। ২৪ তলাবিশিষ্ট ভবনটিতে রয়েছে ১২০টি ফ্ল্যাট। ঠিক কত সংখ্যক মানুষ ভবনটিতে বসবাস করতেন তার সঠিক হিসেব জানা যায়নি। তবে কেনসিংটন এন্ড চেলসিয়া বরোর নেতা নিক পাগেট ব্রাউন বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডের সময় ভবনটিতে কয়েকশো মানুষ অবস্থান করার কথা।

গ্রিনফেল টাওয়ারে দুই বছর ধরে সংস্কার কাজ চলার পর গত বছর তা শেষ হয়।

গ্রেনফেল টাওয়ার
ল্যানচেস্টার ওয়েস্ট এস্টেটকে সেবা প্রদানকারী সংগঠন গ্রেনফেল অ্যাকশন গ্রুপ ভবনটির সংস্কার কাজ শুরুর আগে এবং কাজ চলার সময় ভবনটি নিয়ে সতর্কতা দিয়েছিল। বলেছিল, ভবনটি আগুনের ঝুঁকিতে আছে।

ভবনের বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, অগ্নিকাণ্ডের সময় ফায়ার অ্যালার্ম বাজেনি। গ্রেনফেলের সাত তলায় থাকতেন পল মুনাকর। আগুন লাগার পর কোনও রকমে বেঁচে আসতে সক্ষম হন তিনি। পল বিবিসিকে বলেন, ‘আমি যখন সিঁড়ি দিয়ে নামছিলাম সেখানে তখন দমকলকর্মীরা ছিলেন। খুব দক্ষ তারা। সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে আগুনে আটকা পড়াদের উদ্ধারের চেষ্টা করছেন।’

পল জানান, ভবনের ফায়ার অ্যালার্ম শুনে নয় বরং নিচ থেকে রাস্তার লোকজনের আওয়াজ শুনেই তিনি আগুন লাগার খবর পেয়েছেন। রাস্তা থেকে লোকজন ‘লাফ দিও না’ ‘লাফ দিও না’ বলে ভবনের বাসিন্দাদের সতর্ক করছিল। পল বলেন, ‘আমি সত্যিই জানি না কেউ আগুন থেকে বাঁচার জন্য ওপর থেকে লাফ দিয়েছে কিনা। তবে আমার কাছে এ ঘটনার ক্ষেত্রে জরুরি বিষয় হলো, ভবনের ফায়ার অ্যালার্ম বাজেনি।’

এদিকে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান বলছে, লন্ডনের গ্রেনফেল টাওয়ারের বাসিন্দাদের অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধমূলক যে নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছিল তাতে আগুন লাগার পর তাদেরকে ভেতরেই থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। ভবনটির নকশা অতিমাত্রায় আগুন প্রতিরোধক দাবি করে পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত তাদের এ পরামর্শ মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়েছিল।

২০১৪ সালে ভবনটির বাসিন্দাদের জন্য তৈরি ওই নির্দেশিকায় বলা হয়,‘পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত আমাদের ‘স্বস্থানে থেকে যাওয়া’ নীতি বলবৎ থাকবে। এর মানে হলো (আপনার নিজের ফ্ল্যাটে কিংবা ফ্ল্যাটের সামনের হলওয়েতে আগুন না লাগা পর্যন্ত) আপনি আপনার ফ্ল্যাটের ভেতরেই থাকতে পারেন। এর কারণ হলো, কঠোর অগ্নি নিরাপত্তার মানদণ্ড বজায় রেখে গ্রেনফেলের নকশা করা হয়েছে। প্রত্যেক ফ্ল্যাটের সামনের দরজা ৩০ মিনিট পর্যন্ত আগুন প্রতিরোধ করতে পারে। ফায়ার ব্রিগেড পৌঁছানোর জন্য এ সময়টা যথেষ্ট।’

বিবিসি জানায়, আগুন লাগার পর সংবাদমাধ্যমটির পক্ষ থেকে ভবনটির ব্যবস্থাপনা কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি।

/এফইউ/ 

সম্পর্কিত
‘বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠালে প্রণোদনা ৩ শতাংশ বিবেচনা করা হবে’
ইউক্রেনকে ৬২ কোটি ডলারের অস্ত্র সহায়তা দেবে যুক্তরাজ্য
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে অন্তত ৫ অভিবাসী নিহত
সর্বশেষ খবর
মাদ্রাসা ক্যাম্পাস সবুজায়নের নির্দেশ
তীব্র তাপপ্রবাহমাদ্রাসা ক্যাম্পাস সবুজায়নের নির্দেশ
যুবদল সভাপতি কারাগারে, রিজভীর নেতৃত্বে প্রতিবাদ মিছিল
যুবদল সভাপতি কারাগারে, রিজভীর নেতৃত্বে প্রতিবাদ মিছিল
ইন্ডিয়া আউট কর্মসূচি বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেবে ১২ দলীয় জোট
ইন্ডিয়া আউট কর্মসূচি বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেবে ১২ দলীয় জোট
কানাডার স্টেডিয়ামে রেকর্ড গড়লেন দিলজিৎ
কানাডার স্টেডিয়ামে রেকর্ড গড়লেন দিলজিৎ
সর্বাধিক পঠিত
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ