X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১
উপসাগরীয় কূটনৈতিক সংকট

সৌদি জোটকেই সমর্থনের ইঙ্গিত যুক্তরাষ্ট্রের!

ফাহমিদা উর্ণি
০৩ জুলাই ২০১৭, ১৯:১৩আপডেট : ০৪ জুলাই ২০১৭, ০৮:৫৮
image

সৌদি জোটভূক্ত দেশগুলো এবং কাতারের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে  অবস্থান নিয়েছেন, তাতে পরোক্ষভাবে সৌদি জোটের প্রতিই তার প্রশাসনের দুর্বলতার ইঙ্গিত মিলেছে। ট্রাম্পের বক্তব্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সরাসরি নামোল্লেখ না করলেও সৌদি জোটের সঙ্গে সুর মিলিয়ে তিনি দোহার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে মদদ দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প
কাতারের বিরুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের আরোপিত নিষেধাজ্ঞার শুরু থেকেই মার্কিন প্রশাসন আর ব্যক্তি ডোনাল্ড ট্রাম্পের অবস্থানে পার্থক্য ধরা পড়ে। ট্রাম্প এই নিষেধাজ্ঞায় নিজের কৃতিত্ব দাবি করলেও পররাষ্ট্র দফতরের পক্ষ থেকে একে মানবিকতার বিরোধী বলে মত দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে কাতারের সঙ্গে অস্ত্রবিক্রির চুক্তিও সম্পন্ন হয় যুক্তরাষ্ট্রের। তা সত্ত্বেও ট্রাম্প প্রশাসনের পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতির সঙ্গে যুক্ত একটি সূত্রের বরাত দিয়ে প্রভাবশালী ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান সম্প্রতি দাবি করেছে, প্রকৃতপক্ষে  মার্কিন প্রশাসনের অবস্থান সৌদি জোটের পক্ষে।

সোমবার দোহার সঙ্গে সৌদি জোটের সাম্প্রতিক উত্তেজনার ব্যাপারে উদ্বেগ জানিয়ে কাতার, সৌদি আরব এবং আবু ধাবির নেতাদের সঙ্গে আলাদা আলাদা করে কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেসময় আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় উপসাগরীয় দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তবে সন্ত্রাসবাদ প্রশ্নে সৌদি জোটর মতামতই প্রতিফলিত হয়েছে তার ভাষ্যে।

কাতার নিউজ এজেন্সির বরাত দিয়ে আল-জাজিরা জানিয়েছে, রবিবার (২ জুলাই) রাতে টেলিফোনে আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে জিসিসিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে চলমান বিরোধ এবং আঞ্চলিকভাবে এর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেন ট্রাম্প। তবে আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে স্পষ্টভাবে এখনও কিছু জানা সম্ভব হয়নি।

কাতারের দোহা
কাতারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পেছনে সন্ত্রাসবাদকে বড় কারণ বলে উল্লেখ করেছিল সৌদি জোট। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের শর্তেও সন্ত্রাসবাদে ইন্ধন দেওয়া বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে সৌদি আরবসহ জোটভুক্ত অপর তিন দেশ। এবার হোয়াইট হাউস জানালো, সোমবারের আলোচনায় সন্ত্রাসীদের অর্থায়ন বন্ধ এবং উগ্রপন্থী মতাদর্শকে নিরুৎসাহিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিতে উপসাগরীয় নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ট্রাম্প। তার মতে অঞ্চলটির বর্তমান পরিস্থিতি এতোটাই সংকটপূর্ণ যে সেখানকার ঐক্য খর্ব হচ্ছে। অনৈক্যের কারণে সন্ত্রাসবাদ প্রতিহত করা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় রিয়াদ সম্মেলনের লক্ষ্য পূরণ বাধাগ্রস্ত হবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

উল্লেখ্য, কাতার বরাবরই সন্ত্রাসবাদে মদদ দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। ওদিকে বিশ্বব্যাপী সৌদি আরবের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে মদদ দেওয়ার অভিযোগ এবং এ সংক্রান্ত বেশকিছু প্রমাণ থাকার পরও মধ্যপ্রাচ্যের ওই দেশটিই মার্কিন সন্ত্রাসবাদবিরোধী যুদ্ধের সহযোগী। যুক্তরাষ্ট্র কখনও সৌদি আরবকে কখনও সন্ত্রাসবাদে অভিযুক্ত করেনি। নাইন ইলেভেনের হামলার ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার আভাস পেয়েও বিগত ওবামা প্রশাসন তা আড়াল করেছে।

২০১৭ সালের ২০ মে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের প্রথম বিদেশ সফরে সৌদি আরব যান ট্রাম্প। সফরকালে দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প সৌদি বাদশার প্রশংসা করেন। ইরানের বিরুদ্ধে সুন্নি উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে সুস্পষ্টভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতামূলক সম্পর্কের ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে ট্রাম্প মূলত সৌদি বাদশাহকে তার প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে সবুজ সংকেত দেন। ফলশ্রুতিতে সৌদি জোটের কাতারবিরোধী অবরোধ ঘোষণার পরই টুইটারে ট্রাম্পকে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা যায়।

সৌদি জোটের প্রতি ট্রাম্পের সমর্থনের ইঙ্গিত মিলেছে প্রভাবশালী ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনেও। ট্রাম্প প্রশাসনের পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতির সঙ্গে যুক্ত একটি সূত্র তাদের জানিয়েছে, হোয়াইট হাউসের পরিবেশ বা আবহ সৌদি জোটের অনুকূলে। যুক্তরাষ্ট্র এখানে নেতৃত্ব দিতে আগ্রহী নয়। এটা আরব দেশগুলোর বিষয়। তবে তারা এক্ষেত্রে সৌদি জোটকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। কাতারের সঙ্গে ১২শ কোটি ডলারের যুদ্ধবিমান বিক্রির চুক্তিতে বিস্মিত হলেও ওই সূত্র একে পররাষ্ট্রনীতির স্বাভাবিকতা বলে উল্লেখ করেছেন।

জঙ্গিবাদে সমর্থন দেওয়ার অভিযোগ এনে গত ৫ জুন কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন এবং মিসরসহ কয়েকটি দেশ। এ অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ উল্লেখ করে তা নাকচ করে দেয় দোহা। কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার দুই সপ্তাহ পর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য আল জাজিরা বন্ধ করে দেওয়াসহ কাতারকে ১৩ দফা শর্ত বেঁধে দেয় চার দেশ। শর্ত পূরণে ১০ দিনের সময়সীমা দেওয়া হয়। সে সময়সীমা শেষ হওয়ার পর ২ জুলাই রবিবার সেই সময়সীমা দুই দিন বাড়ানোর কথা জানায় সৌদি সূত্র।

কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শনিবার বলেছিলেন, সৌদি জোটের শর্তগুলো মানবে না দোহা। নিজ দেশের পক্ষে একটি যথাযথ সংলাপ দাবি করেছিলেন তিনি। তবে কুয়েতের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম কুনা সোমবার জানায়, ১৩ দফা শর্তের ব্যাপারে কাতারের কাছ থেকে জবাব পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানা যায়নি। বুধবার এ নিয়ে সৌদি জোটভুক্ত দেশগুলোর আলোচনার কথা রয়েছে।

/বিএ/




 

সম্পর্কিত
চুক্তি হোক বা না হোক রাফাহতে ইসরায়েলি অভিযান চলবে: নেতানিয়াহু
হামাসকে ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব মেনে নেওয়ার আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
গাজায় যুদ্ধবিরতি নাকি রাফাহতে হামলারাজনৈতিক সংশয়ের মুখোমুখি নেতানিয়াহু
সর্বশেষ খবর
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সকার স্কুলের বাছাইয়ে ৩ বাংলাদেশি কিশোর
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সকার স্কুলের বাছাইয়ে ৩ বাংলাদেশি কিশোর
দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঢাকায় স্বস্তির বৃষ্টি, কমলো তাপমাত্রা
দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঢাকায় স্বস্তির বৃষ্টি, কমলো তাপমাত্রা
রোমাঞ্চকর ম্যাচে ১ রানের নাটকীয় জয় হায়দরাবাদের 
রোমাঞ্চকর ম্যাচে ১ রানের নাটকীয় জয় হায়দরাবাদের 
মামুনুল হকের জন্য কাশিমপুর কারাগারের সামনে ভক্তদের ভিড়
মামুনুল হকের জন্য কাশিমপুর কারাগারের সামনে ভক্তদের ভিড়
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা