X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

বিমসটেক ‘মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল’ গঠনে দেরি কেন?

আশীষ বিশ্বাস, কলকাতা
১৫ আগস্ট ২০১৭, ০৩:৫২আপডেট : ১৫ আগস্ট ২০১৭, ০৩:৫৯

বিমসটেক ‘মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল’ গঠনে দেরি কেন? সাত বিমসটেক সদস্য দেশের মধ্যে প্রস্তাবিত ফ্রি ট্রেড এরিয়া (এফটিএ) গঠনে অতিরিক্ত সময় লাগছে না। এমনটাই মনে করেন বিদেশি ব্যবসায়ী মহল ও ভারতীয় রফতানিকারকরা। ইঞ্জিনিয়ারিং এক্সপোর্ট কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার একজন মুখপাত্র বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ভারত আসিয়ান এফটিএ-তে আগেই যুক্ত হয়েছে। কিন্তু প্রাথমিক আলোচনা চূড়ান্ত হতে ২০০৩-২০১০ সাল পর্যন্ত সাত বছর সময় লেগেছে। এই মুখপাত্র মনে করেন, বিমসটেকের এফটিএ নিয়ে চলমান আলোচনা দিল্লির কারণে বিলম্বিত হচ্ছে না।

প্রস্তাবিত এফটিএ কার্যকর হওয়ার আগে বেশ কিছু বিষয় নির্ধারণের উদ্যোগের প্রশংসা করেছে বিমসটেক সদস্য দেশগুলো। এসব বিষয়ের মধ্যে অনেক জটিল ইস্যু রয়েছে। যেমন, প্রচলিত কর কমিয়ে আনতে শুমারি, যেসব পণ্য অনুমোদিত হবে না সেগুলোর তালিকা, আপত্তি ও সমঝোতা কিভাবে হবে সেটা নির্ধারণ করা এবং প্রতিটি দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ)-ভুক্ত দেশগুলোর মতো বিমসটেক সদস্য দেশগুলোর অবস্থা এক নয়। এখানে দেশগুলোর বিকাশের ক্ষেত্রে রয়েছে বিশাল পার্থক্য। উদাহরণ হিসেবে নেপাল ও থাইল্যান্ডের কথা বলা যায়। অর্থনৈতিক ও শিল্প উন্নয়নে উভয় দেশের মধ্যে অনেক পার্থক্য বিদ্যমান। আবার ভারতের অভ্যন্তরেও উন্নয়নের মাত্রায় পার্থক্য রয়েছে। ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর চেয়ে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো এগিয়ে রয়েছে।

কলকাতাভিত্তিক একজন বিশ্লেষক জানান, ১৯ দফা বিস্তারিত আলোচনার পরও বিমসটেক এফটিএ-র অপারেশনাল প্রসিডিউর চূড়ান্ত না হওয়ায় অবাক হওয়ার কিছু নেই। এখানে উদ্যোগের কোনও ঘাটতি নেই। সদস্য দেশগুলোর মধ্যে চুক্তিতে আসার ক্ষেত্রে হিসাব-নিকাশ রয়েছে। স্বল্পমেয়াদী প্রস্তাব আছে যেগুলো বাস্তবায়নে বৃহৎ অর্থে এফটিএ-র মতো বড় বিষয়কে প্রভাবিত করতে পারে। যেমন, বাংলাদেশ ও ভারত এই অঞ্চলে সেবা খাত, বিশেষ করে পর্যটন খাতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে চায়।

এর ফলে এই অঞ্চলে পর্যটন সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ড ইতোমধ্যে বেড়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে মানুষ ও পণ্যের অবাধ যাতায়াত ও পরিবহনের কথা বাদ দিয়েও এই কথা বলা যায়।

বিমসটেক ‘মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল’ গঠনে দেরি কেন?

কিছুদিন আগে ভারতে বিমসটেকের একজন কর্মকর্তার সঙ্গে ভারতীয় শিল্পপতিদের প্রভাবশালী সংগঠন আসোচ্যামের মুখপাত্রের একটি বৈঠক হয়। এতে উভয় পক্ষ এই অঞ্চলে মৎস্য ব্যবসার সম্ভাব্যতা ও উন্নয়নের বিষয়ে একমত হয়েছেন। একজন কর্মকর্তা জানান, বিশ্বের মৎস্যজীবীদের প্রায় ৩০ শতাংশ দক্ষিণ এশিয়ায় বাস করেন বলে এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে।

ভারত প্রস্তাব দিয়েছে চলমান পণ্য রফতানি কর পর্যালোচনা ও হালনাগাদ করার জন্য। কিন্তু থাইল্যান্ড এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে। থাই কর্তৃপক্ষ মনে করে, এর ফলে আবারও অন্তহীন বৈঠকের দিকে এগিয়ে যাবে আলোচনা। অন্য সদস্য দেশগুলো থাইল্যান্ডের এই অবস্থানকে সমর্থন জানিয়েছে।

এছাড়া বিমসটেক সদস্য দেশের কর্মকর্তা পর্যায়ে ১৮তম বৈঠক গত সপ্তাহে কাঠমান্ডুতে শেষ হয়েছে। বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং উন্নত সড়ক/রেল যোগাযোগের জন্য অংশগ্রহণকারী দেশগুলো নিজেদের বাজারে আরও বেশি প্রবেশাধিকার, কর ও নিয়ন্ত্রণ কমানোর ব্যাপারে একমত হয়েছে। চলতি বছর বিমসটেকের পরবর্তী সম্মেলন নেপালে অনুষ্ঠিত হবে। সংগঠনটির পরবর্তী মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করবেন ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম।

বিমসটেকের সাত সদস্য দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, ভুটান ও নেপাল। সদস্য দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে বাণিজ্য খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, জ্বালানি আমদানি রফতানি, ট্রেন যোগাযোগের কানেক্টিভিটি, প্রযুক্তিগত সহযোগিতা বিনিময়, বিদ্যুৎ খাতে গ্রিড কানেক্টিভিটি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগে সহযোগিতা বৃদ্ধি, পণ্য ও সেবার অবাধ প্রবাহ, পর্যটন খাতের উন্নয়নের ব্যাপারে আলোচনা হয়। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলার জন্য সদস্য দেশগুলোর নিরাপত্তা সংস্থার মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীর ওপর এবং জনগণের জীবিকার ওপর যে হুমকি বৃদ্ধি পাচ্ছে তার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। স্থানীয়, জাতীয় ও আঞ্চলিকভাবে একে মোকাবেলা করতে তারা সম্মত হন।

বিমসটেক সাতটি স্বাধীন ও সার্বভৌম জাতির সঙ্গে যুক্ত। ১৯৯৭ সালে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাত দেশের জোট ‘বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন’ (বিমসটেক) গঠিত হয়। ব্যাংকক ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ড এই উদ্যোগ নেয়; পরে মায়ানমার, নেপাল ও ভুটান যোগ দেয়। সহযোগিতার ক্ষেত্রও বেড়ে ১৪ সদস্যে দাঁড়িয়েছে। ২০১৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে এর প্রধান কার্যালয় স্থাপিত হয়। 

/এএ/এমপি/

সম্পর্কিত
‘বাংলাদেশ ও ভারত একই লক্ষ্যে এগোচ্ছে’
ভারতের ভোটে বিজেপির পক্ষে কি ‘৪০০ পেরোনো’ আদৌ সম্ভব?  
মিয়ানমারের ৩৮ শরণার্থীকে ফেরত পাঠালো ভারত
সর্বশেষ খবর
দুর্নীতির দায়ে ক্যারিবিয়ান ব্যাটারকে ৫ বছরের নিষেধাজ্ঞা
দুর্নীতির দায়ে ক্যারিবিয়ান ব্যাটারকে ৫ বছরের নিষেধাজ্ঞা
এসএসসি’র ফল প্রকাশের দিন ঘোষণা
এসএসসি’র ফল প্রকাশের দিন ঘোষণা
সিরিয়ায় ইসরায়েলি হামলায় ৮ সেনা আহত
সিরিয়ায় ইসরায়েলি হামলায় ৮ সেনা আহত
ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর প্রতিক্রিয়া নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র
ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর প্রতিক্রিয়া নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক