X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

ইসরায়েলি 'যুদ্ধাপরাধ' তদন্তের সিদ্ধান্তে বিক্ষোভ জোরালো করছে ফিলিস্তিনিরা

বিদেশ ডেস্ক
১৯ মে ২০১৮, ২০:০৬আপডেট : ২০ মে ২০১৮, ২০:১৪
image

গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের ওপর নারকীয় হত্যাযজ্ঞের তদন্ত করবে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশন। জাতিসংঘ কমিশনের এই সিদ্ধান্ত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে। স্বাধীনতার দাবিতে মরিয়া ফিলিস্তিনিরা শুক্রবার আবারও হাজারে হাজারে গাজা উপত্যকার ইসরায়েল সীমান্তে জড়ো হয়েছে।  জোরালো করেছে প্রতিরোধ আন্দোলন।


ইসরায়েলি 'যুদ্ধাপরাধ' তদন্তের সিদ্ধান্তে বিক্ষোভ জোরালো করছে ফিলিস্তিনিরা ফিলিস্তিনিদের সদ্য সমাপ্ত ভূমি দিবসের ৬ সপ্তাহের গ্রেট রিটার্ন মার্চ কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে ইসরায়েলি হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছে শতাধিক ফিলিস্তিনি। আহত হয়েছে হাজার হাজার মানুষ। শুধু সোমবারের (১৪ মে) বিক্ষোভেই ৬০ ফিলিস্তিনি নিহত ও দুই হাজারেরও বেশি আহত হন। এই দিনের হত্যাযজ্ঞের তদন্তের জন্যই কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেয় জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন। ইসরায়েলি কর্মকাণ্ডকে ‌’যুদ্ধপরাধ’ উল্লেখ করে কমিশনের প্রধান জায়েদ রাদ আল হুসেন বলেন, গত সপ্তাহে ঘটে যাওয়া ভয়ংকর ঘটনায় কেউ নিরাপদ ছিল না।

মানবাধিকার কমিশনের প্রধান জায়েদ রাদ হুসেন ইসরায়েলের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, সোমবার হত্যাকাণ্ডের পর এখনো এমন কোনও আলামত পাওয়া যায়নি যার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায় যে তারা হত্যাযজ্ঞ থেকে সরে এসেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের বিশেষ সভায় তিনি বলেন, দুই পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এমন দাবি করা অযৌক্তিক। তিনি বলেন, ‌৩০ মার্চ আন্দোলন শুরু পর ১১০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। পক্ষান্তরে একজন ইসরায়েলি সেনা আহত হয়েছেন। কোনো ইসরায়েলি নিহত হননি। শুক্রবার কমিশনে গাজায় তদন্ত দল পাঠানোর প্রস্তাবটি গৃহীত হয়। ভোটে প্রস্তাবটি করে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া। তবে কাউন্সিলের ৪৭ সদস্যের মধ্যে ২৯ সদস্যই প্রস্তাবের ভোট দিয়েছে। যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও জাপানসহ ১৪টি দেশ ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে।

জাতিসংঘের এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভ জানিয়েছে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র। দেশ দুটির প্রতিনিধিরা জানান, এই সিদ্ধান্তে ইসরায়েল পক্ষপাতের শিকার। কারণ মানবাধিকার কমিশন প্রস্তাবে হামাসের কোনো উল্লেখ করেনি। হামাসের পলিটিক্যাল ব্যুরোর সদস্য সালাহ বারডাউইল বলেন, ‌‘শেষদিকে হামাসের ৬২ জন শহীদ হয়েছেন। তাদের ৫০ জনই জামাসের সদস্য। বাকি ১২ জন বাকিদের সন্তান। এটা্ই আনুষ্ঠানিক সংখ্যা। আর পূর্বের হতাহতদের মধ্যে অন্তত অর্ধেকই হামাসের সদস্য।‘ তবে হতাহতরা হামাসের যোদ্ধা নাকি বেসামরিক সমর্থক সে বিষয়ে নিশ্চিত করেননি বারডাইল।

ইসরায়েলি কর্মকর্তার অভিযোগ, হামাস আন্দোলনের মাধ্যমে ইসরায়েলি সেনাদের ওপর হামলার চেষ্টা করছে। এটি শান্তিপূর্ণ কোনও আন্দোলন নয়। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এমানুয়েল নাহশোন বলেন, ‘আমাদের কাছে প্রথম থেকেই এবং এখন বিশ্বের কাছেও স্পষ্ট যে এটা জনগণের আন্দোলন নয়। এটা হামাসের আয়োজিত সন্ত্রাসী আগ্রাসন।’ হামাসের নেতারা বলেন, মঙ্গলবার এই আন্দোলনের ক্লাইম্যাক্স দাঁড়াবে বলেছিলম। তবে সোমবারের হত্যাযজ্ঞের পর পাল্টে যায় অনেককিছু্‌। মঙ্গলবার নিহতদের দাফন সম্পন্ন হয়। শুক্রবার নামাজের সময়ই গাজা উপত্যকায় জড়ো হতে বলা হয় সবাইকে। ইসরায়েল সীমান্তে এরপর জড়ো হতে থাকে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি।

হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়েহ বলেন, এই আন্দোলনের অনেককে চিরবিদায় জানাতে হয়েছে আমাদের। তবে বিশ্ববাসীর নজরে এসেছে বিষয়টি। ২০০৭ সালে হামাসের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে সব আন্দোলনকেই দমিয়ে রাখা হচ্ছিল। এরপর রমজান মাসজুড়ে  রাফাহ সীমান্ত খুলে দেওয়ার প্রশংসা করেন তিনি। ২০১৩ সালের পর থেকে এবারই সবেচয়ে দীর্ঘ সময় এই সীমান্ত খোলা রাখবে মিসর। ইসমাইল হানিয়েহ এই সিদ্ধান্তে গাজাবাসীর বোঝা অনেকটা হালকা হবে। ইসরায়েল অবরোধ সম্পূর্ণ তুলে না নেওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে বলেও জানান তিনি।

শুক্রবার জর্ডানের নাগরিকত্ব থাকা গাজাবাসীদের ইসরায়েলে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, তারা চলতি সপ্তাহে গাজায় অনেক যন্ত্রপাতি দিয়েছিল। কিন্তু হামাস তা ফিরিয়ে দিয়েছে। বিকালে অনেক নারী-পুরুষ ও শিশু ইসরায়েল সীমান্ত থেকে নিরাপদ দূরত্বে থেকে ইফতার করেছেন। তবে কয়েকজন তখনও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। কেউ পাথর ছুঁড়ে মেরেছেন, কেউ টায়ারে আগুন দিয়ে তৈরি করেছেন কালো ধোঁয়া। ইসরায়েলিরা সেনারাও টিয়ার গ্যাস ও গুলি চালিয়েছে। তবে হতাহতের সংখ্যা আগের দিনের মতো নয়।

আন্দোলন দেখতে নিজের সাত বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে এসেছেন হাজেম নাইজি নামে এক গাজাবাসী। দূর থেকে বালুর পেছনে লুকিয়ে দেখেন তারা। তিনি বলেন, ‌আমি আমার ছেলেকে দেখাতে চাই যে এটা আমাদেরই ভূমি। সে যদি বন্দুকের গুলিতে না শহীদ হয়, তবে অবরোধের নিপীড়নে প্রাণ হারাবে। সোমবার পায়ের গোড়ালিতে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন মোহাম্মদ আবু মারাসা নামে ২০ বছর বয়সী এক যুবক। কিন্তু শুক্রবার ক্রাচে ভর করে ব্যান্ডেজ জড়ানো পা নিয়ে চলে আসেন আন্দোলনে। তিনি বলেন, ‘‌আমি জেরুজালেমের জন্য মাথায় গুলি খেতে প্রস্তুত।’

ঘুড়িতে করে আগুন উড়ছে মাথার ওপর। দমকলকর্মীরা হিমসিম খাচ্ছেন নিয়ন্ত্রণ করতে। ইসরায়েলি সেনারা জানায়,  অনেক জায়গায় আগুন জ্বলছে। তারা গুণতেও পারছে না। পুলিশ জানায়, সব অগ্নিসংযোগ হয়তো গাজার হামলা নয়। কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেও এমনটা করে থাকতে পারে।

ইসরায়েল ও পশ্চিমতীরের অন্যান্য স্থানে রমজানের প্রথম শুক্রবার শান্তিপূর্ণই ছিল। জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদে প্রায় ১ লাখ মানুষ নামাজ পড়েন। ৪০ হাজার ফিলিস্তিনি সেখানে প্রবেশে বিশেষ অনুমতি দেওয়া হয়েছিল বলে দাবি করেন ইসরায়েল পুলিশের মুখপাত্র মিকি রোজেনফিল্ড। পশ্চিমতীরের হেব্রনের ইব্রাহিমি মসজিদে নামাজ পড়েন অন্তত সাত হাজার মানুষ।  

 

/এমএইচ/বিএ/
সম্পর্কিত
চুক্তি হোক বা না হোক রাফাহতে ইসরায়েলি অভিযান চলবে: নেতানিয়াহু
হামাসকে ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব মেনে নেওয়ার আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
গাজায় যুদ্ধবিরতি নাকি রাফাহতে হামলারাজনৈতিক সংশয়ের মুখোমুখি নেতানিয়াহু
সর্বশেষ খবর
‘গরমে অসুস্থ’ হয়ে মারা যাওয়া সেই শ্রমিকের পরিবারের পাশে জেলা প্রশাসন
‘গরমে অসুস্থ’ হয়ে মারা যাওয়া সেই শ্রমিকের পরিবারের পাশে জেলা প্রশাসন
ওমরাহ করতে স্ত্রীসহ সৌদি আরব যাচ্ছেন মির্জা ফখরুল
ওমরাহ করতে স্ত্রীসহ সৌদি আরব যাচ্ছেন মির্জা ফখরুল
ঢাকার অধস্তন আদালতগুলোতে এসি লাগাতে আইনি নোটিশ
ঢাকার অধস্তন আদালতগুলোতে এসি লাগাতে আইনি নোটিশ
ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন শুনানি পেছালো
অর্থ আত্মসাতের মামলাড. ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন শুনানি পেছালো
সর্বাধিক পঠিত
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
মিল্টন সমাদ্দার আটক
মিল্টন সমাদ্দার আটক
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তদন্ত করবে ডিবি
মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তদন্ত করবে ডিবি