X
বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫
১৯ আষাঢ় ১৪৩২

আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা: তামিমি

বিদেশ ডেস্ক
৩১ জুলাই ২০১৮, ১২:৫৮আপডেট : ৩১ জুলাই ২০১৮, ১৩:০৯

নিজেকে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের নির্মম শিকার হিসেবে দেখতে চান না সদ্য ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনি বীরকন্যা আহেদ তামিমি। তিনি মনে করেন, ইসরায়েলি দখলদারিত্বের নির্মম শিকার সেখানকার ইহুদি শিশু-কিশোররা; যারা ভুল-ঠিকের পার্থক্য ভুলে বন্দুক আর ঘৃণা নিয়ে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে লড়ছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইসরায়েলি বঞ্চনার বিরুদ্ধে নিজের লড়াইকে ‘মুক্তিযুদ্ধ’ আখ্যা দিয়েছেন তামিমি। বলেছেন, মুক্তিযোদ্ধারা ভূক্তভোগী হতে পারে না।

ফিলিস্তিনি পতাকা হাতে আহেদ তামিমি

ডিসেম্বরের মাঝামাঝি গ্রেফতারের পর ইসরায়েলের কারাগারে নেওয়া হয় তামিমিকে। মার্চে সামরিক আদালতে তার বিরুদ্ধে ঘোষিত হয় জরিমানাসহ আট মাসের কারাদণ্ড। সে হিসেবে ১৯ ডিসেম্বর থেকে কারাগারে থাকা তামিমির মুক্তি পাওয়ার কথা ১৯ আগস্ট। তবে বিশেষ মূল্যায়নে ইসরাইলি কারা কর্তৃপক্ষ কারও কারা মেয়াদ কমিয়ে আনায় ২৯ জুলাই রবিবার তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।

মুক্তির একদিন পর ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তামিমি বলেন, ‘ইসরায়েলি দখলদারিত্ব আমাকে ভূক্তভোগী বানাতে পারেনি। এই দখলদারিত্ব ভূক্তভোগী বানিয়েছে ইহুদি শিশুদেরকে, যারা ১৫ বছর বয়সেই অস্ত্র নিয়ে ঘোরাফেরা করতে বাধ্য হয়। আমার কথা বললে, আমিতো ঠিক-ভুলের পার্থক্য করতে পারি। তারা পারে না। তাদের চিন্তা ধোয়াচ্ছন্ন। তাদের হৃদয় ফিলিস্তিনের প্রতি ঘৃণা আর অবজ্ঞায় পরিপূর্ণ। তারা ভুক্তভোগী, আমি নই। আমি সব সময় বলি, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমার ভূক্তভোগী হওয়ার কিছু নেই।’

নবী সালেহ গ্রামটি তামিমির জ্ঞাতি-গোষ্ঠীতেই ভরা। ঐতিহ্যগতভাবেই ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে সরব এই গ্রাম। তামিমির ১৭ বছরের জীবনেও ইসরায়েলবিরোধী প্রতিরোধের বহু নজির রয়েছে। ছোটবেলা থেকেই কখনও ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি বা অপমান করার বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও এখন সবখানে ছড়িয়ে পড়েছে। আহেদ বলেন, গ্রেফতার হওয়ার অভিজ্ঞতা খুবই কঠিন। আমি যতই চেষ্টা করি এটা বর্ণনা করতে পারব না। তবে তিনি বলেন, এই অভিজ্ঞতা আমার জীবনকে মূল্যবান করেছে। হতে পারে এটা আমাকে আরও পরিণত করেছে। আরও সচেতন করেছে। ইসরায়েলি আদালতে রুদ্ধদ্বার বিচার হয়েছে তামিমির। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একজন ইসরায়েলি পুরুষ তদন্তকারী ১৬ বছর বয়সী তামিমিকে হুমকি দিচ্ছে। তার শরীর ও চোখ নিয়ে মন্তব্য করছে। এরপরই আটক অবস্থায় তার প্রতি ইসরায়েলের আচরণ নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়। আহেদ বলেন, তার সঙ্গে করা আচরণ অস্বাভাবিক ছিল না। তিনি বলেন, এটা প্রথম ঘটনা নয়, আর এটা কাকতালীয়ও নয়। এটাই তাদের জিজ্ঞাসাবাদের রীতি।

ইসরায়েলি বিভাজন দেওয়ালে আহেদ তামিমির গ্রাফিতি

গার্ডিয়ানের পক্ষ থেকে তামিমির সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে দেখা যায়, তার বাড়িতে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনের পক্ষের মানুষ আর ফিলিস্তিনি কর্মকর্তাদের বিপুল উপস্থিতি। বাইরে বসে কফি পান করছিল কর্মকর্তারা।

মুক্তির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আহেদ তামিমি ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। ইসরায়েলি বিভাজক দেওয়ালে আহেদের গ্রাফিতি আঁকার দায়ে দুই ইতালীয় শিল্পীকে গ্রেফতারের পর দেশত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি দখলদারিত্বের প্রতিবাদ করতে গিয়ে সেনাদের গালে থাপ্পড় মেরে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনের জীবন্ত প্রতীকে পরিণত হন তামিমি। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে তার বীরোচিত ভূমিকা। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন, শুভ আর মঙ্গলের পক্ষের বিভিন্ন অ্যাকটিভিস্ট সোচ্চার হয়ে ওঠে তার মুক্তির দাবিতে। গার্ডিয়ানকে তামিমি বলেছেন, তার আন্তর্জাতিক স্বীকৃত ইসরায়েল সরকারকে ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। তামিমি বলেন, তারা সত্যকে ভয় পায়। যদি তারা অন্যায় না করতো তাহলে তারা সত্যকে ভয় পেত না। সত্য তাদের ভয় পাইয়ে দিয়েছে। আর আমি এই সত্য বিশ্বকে জানাতে পেরেছি। আর অবশ্যই আমি কতদূর যেতে পারবো তা নিয়ে তারা ভীত। তারা সবসময় সত্যকে ভয় পায়। তারা দখলদারি আর আমরা দখলদারির আওতায় আছি।

বন্ধুদের সঙ্গে আহেদ তামিমি

সেনা সদস্যদের মারধরের ঘটনায় কোনও গ্লানি নেই তামিমির মনে। কারণ ওই সেনাই কিছুক্ষণ আগের সংঘর্ষে তার ১৫ বছর বয়সী চাচাতো ভাইয়ের মাথায় খুব কাছ থেকে রাবার বুলেট দিয়ে আঘাত করেছে। মুক্তির পর তিনি তার চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করেছেন। সোমবার তার ভাই আহেদের বাড়িতেই ছিল। তার মুখে আঘাতে বিশাল চিহ্ন ছিল। আহেদ বলেন, ফিলিস্তিনি জাতিমুক্তি আন্দোলনের একটি প্রতীক হতে পেরে আমি গর্ববোধ করি। কারণ এর মাধ্যমে আমি পুরো বিশ্বের কাছে ফিলিস্তিনিদের বার্তা পৌঁছাতে পেরেছি। অবশ্যই এটা আমার জন্য একটি ভারী বোঝা। এটা সত্যি, এটা একটা বড় দায়িত্ব। কিন্তু আমি পুরোপুরি আত্মবিশ্বাসী যে, আমি এটার উপযুক্ত।

এখন আহেদ তামিমি কিছু সময়ের জন্য বিশ্রাম নিতে চান। এছাড়া তার পরবর্তী করণীয় সম্পর্কেও সিদ্ধান্ত নিতে তার সময় প্রয়োজন। মুক্তির আনন্দের কথা বলতে গিয়ে তামিমি বলেন, ‘অবশেষে আমি মুক্ত আকাশ  পেয়েছি। রাস্তায় হাঁটতে পারছি হাতকড়া ছাড়াই। চাঁদ দেখছি, তারা দেখছি। অনেকদিন এসব দেখা হয়নি।’

/আরএ/বিএ/
সম্পর্কিত
গাজায় যুদ্ধবিরতিট্রাম্পের ‘চূড়ান্ত’ প্রস্তাব পর্যালোচনা করছে হামাস, নির্মূলের অঙ্গীকার ইসরায়েলের
আইএইএ’র সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করলো ইরান
গাজায় বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নেতাকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিলো হামাস
সর্বশেষ খবর
প্রতীকী ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট কর্মসূচি থাকছে না: সংস্কৃতি উপদেষ্টা
প্রতীকী ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট কর্মসূচি থাকছে না: সংস্কৃতি উপদেষ্টা
ইন্দোনেশিয়ায় ফেরি ডুবে নিহত ৪, নিখোঁজ ৩০
ইন্দোনেশিয়ায় ফেরি ডুবে নিহত ৪, নিখোঁজ ৩০
প্রবাসীদের সুবিধা দিয়ে ব্যাগেজ রুলস সংশোধন করলো এনবিআর
প্রবাসীদের সুবিধা দিয়ে ব্যাগেজ রুলস সংশোধন করলো এনবিআর
ধানমন্ডিতে  ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে এইচএসসি পরীক্ষার্থী আহত
ধানমন্ডিতে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে এইচএসসি পরীক্ষার্থী আহত
সর্বাধিক পঠিত
নবম পে-কমিশন গঠনের কার্যক্রম শুরুর আশ্বাস অর্থ উপদেষ্টার
সংযুক্ত কর্মচারী প‌রিষ‌দের জরু‌রি সভানবম পে-কমিশন গঠনের কার্যক্রম শুরুর আশ্বাস অর্থ উপদেষ্টার
বরখাস্ত হলেন সেই ম্যাজিস্ট্রেট তাবাসসুম ঊর্মি
বরখাস্ত হলেন সেই ম্যাজিস্ট্রেট তাবাসসুম ঊর্মি
পরীক্ষার প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, তদন্তে কমিটি
পরীক্ষার প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, তদন্তে কমিটি
অনুদান কমিটি থেকে অভিনেত্রীর অব্যাহতি!
অনুদান কমিটি থেকে অভিনেত্রীর অব্যাহতি!
কার দোষে শ্রমবাজার বন্ধ হয় জানালেন আসিফ নজরুল
কার দোষে শ্রমবাজার বন্ধ হয় জানালেন আসিফ নজরুল