সদ্য কারামুক্ত ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনের প্রতীকী ব্যক্তিত্ব আহেদ তামিমি জানিয়েছেন, কারাবন্দি থাকা অবস্থায় অপরাপর ফিলিস্তিনি নারীকে সঙ্গে নিয়ে জেলখানাকে বিদ্যালয়ে রূপান্তর করতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি। দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, নির্জন কারাকক্ষে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আন্তর্জাতিক আইন বিষয়ক বইপত্র পড়েছেন তারা। ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা বলতে গিয়ে তামিমি জানিয়েছেন, একজন যোগ্য আইনজীবী হতে চান তিনি। ইসরায়েলি দখলদারিত্বের কারণে সৃষ্ট ফিলিস্তিনিদের বঞ্চনার কথা তুলে ধরতে চান আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে।
ডিসেম্বরের মাঝামাঝি ইসরায়েলি দখলদারিত্বের প্রতিবাদ করতে গিয়ে সেনাদের গালে থাপ্পড় মেরে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনের জীবন্ত প্রতীকে পরিণত হন তামিমি। তাকে গ্রেফতারের পর ইসরায়েলের কারাগারে নেওয়া হয়। মার্চে সামরিক আদালতে তার বিরুদ্ধে ঘোষিত হয় জরিমানাসহ আট মাসের কারাদণ্ড। সে হিসেবে ১৯ ডিসেম্বর থেকে কারাগারে থাকা তামিমির মুক্তি পাওয়ার কথা ১৯ আগস্ট। তবে বিশেষ মূল্যায়নে ইসরাইলি কারা কর্তৃপক্ষ কারও কারা মেয়াদ কমিয়ে আনতে পারেন। সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গতকাল ২৯ জুলাই রবিবার তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।
মুক্তির একদিন পর ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তামিমি জানিয়েছেন, জেলে বন্দি অবস্থায় কাটানো ৮ মাস তিনি আন্তর্জাতিক আইন সম্পর্কে পড়ার সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়েছেন। তামিমির আশা, একদিন তিনি আন্তর্জাতিক আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মামলা লড়তে পারবেন। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘ইনশা আল্লাহ, আমি আইন বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করবো। দখলীকৃত পশ্চিম তীরের নবী সালেহ গ্রামে বসে গার্ডিয়ানের সংবাদকর্মী অলিভার হোলমস ও সুফিয়ান তাহাকে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে আমি ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সহিংসতার বিষয়টি উপস্থাপন করবো। ইসরায়েলের বিচার ও আমার দেশের অধিকার ফিরে পেতে আমি নামকরা আইনজীবী হবো।’
স্থানীয় মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে ইসরায়েলি কারাগারে তিন শতাধিক ফিলিস্তিনি শিশু রয়েছে। কিন্তু আহেদ তামিমির মামলাটি বেশি আলোচিত হয়েছে। আহেদ বলেন, এর আগে তিনি পেশাদার ফুটবলার জন্য প্রশিক্ষণ নিতেন। কিন্তু জেলখানায় তার অভিজ্ঞতা তাকে আন্তর্জাতিক আইনজীবী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা তৈরিতে সাহায্য করেছে। উদাহরণ দিতে গিয়ে তামিমি তার জিজ্ঞাসাবাদের সময় ইসরায়েলি বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত সহিংসতার কথা বলেন। জানান, পড়াশোনা করেই তিনি জানতে পেরেছেন, এটি আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। এরইমধ্যে তামিমির পরিবার জানিয়েছে, তাদের মেয়ে বিদেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য স্কলারশিপের প্রস্তাব পেয়েছে। প্রস্তাবটি বিবেচনায় রেখেছে তামিমি।
উল্লেখ্য, ফিলিস্তিনি সরকার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক অভিযোগ দাখিল করছে। এর মধ্যে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগও রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সরকারের একটি ব্যবস্থা জাতিবিদ্বেষের শামিল। ইসরায়েল এসব অভিযোগ কঠোরভাবে নাকচ করে আসছে।