X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

মালয়েশিয়ায় চিকিৎসা সামগ্রী তৈরির কারখানায় ‘আধুনিক দাসত্ব’র কবলে বাংলাদেশিরা

বিদেশ ডেস্ক
১১ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৫:৩৯আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৫:৪৬
image

চিকিৎসাসামগ্রী তৈরির দুই মালয়েশীয় প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের ভয়াবহ দুরাবস্থার খবর পাওয়া গেছে। প্রভাবশালী ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক অনুসন্ধান থেকে জানা গেছে, টপগ্লাভ ও ডব্লিউআরপি নামের দুই প্রতিষ্ঠানের কারখানায় কাজ করা বাংলাদেশি শ্রমিকদের বাধ্যতামূলক ওভারটাইম করানোর পাশাপাশি জোরপূর্বক শ্রমদানে বাধ্য হচ্ছে। গার্ডিয়ানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ওই শ্রমিকেরা অভিযোগ করেছেন, বেতন বকেয়া রাখা, ঋণের জালে আটকানো ও পাসপোর্ট জব্দ করে রাখার মতো পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন তারা। গার্ডিয়ান আন্তর্জাতিক শ্রম সংঘের নীতিকে বিবেচনায় নিয়ে একে ‌‘আধুনিক শ্রমদাসত্ব’র পরিস্থিতি আখ্যা দিয়েছে। তবে ওই দুই প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এসব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।

মালয়েশিয়ার গ্লাভস কোম্পানি
মালয়েশীয় প্রতিষ্ঠান টপ গ্লাভস বিশ্বের সবচেয়ে বড় রাবার গ্লাভস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। দেশটির অন্যতম বৃহৎ শ্রমিক নিয়োগকারী এই প্রতিষ্ঠানের ৪০টি কারখানা থেকে যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের জন্য রাবার গ্লাভস সরবরাহ করা হয়। গার্ডিয়ানের পক্ষ থেকে টপ গ্লাভের ১৬ শ্রমিকের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে আটজন বাংলাদেশের ও আটজন নেপালের। শ্রমিকরা অভিযোগ করেছে, কারখানায় তীব্র মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয় তাদের। কমপক্ষে ১২ ঘণ্টা করে কাজ করতে হয় সপ্তাহের সাত দিনই। পুরো মাসে কেবল একদিন তারা ছুটি হিসেবে পান। অথচ তাদের পরিহিত শার্টে টপ গ্লাভের লোগো রয়েছে যেখানে লেখা-‘সৎ থাকুন এবং কোনো প্রতারণা নয়।’১৬ শ্রমিকের প্রত্যেকেই অভিযোগ করেছেন, চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান তাদের পাসপোর্ট আটকে রেখেছে এবং অনুরোধ সত্ত্বেও তা ফেরত দেয়নি।

গার্ডিয়ানকে সাক্ষাৎকার দেওয়া সব বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকই দাবি করেছেন, টপ গ্লাভ-এর কারখানায় চাকরি নেওয়ার জন্য তাদেরকে নিয়োগ ফি বাবদ ১৮,০০০-২০,০০০ রিঙ্গিত করে দিতে হয়েছে। মাসের পর মাস ধরে, আবার কোনও কোনও ক্ষেত্রে বছরের পর বছর ধরে শ্রমিকরা অভিযোগ করে আসছে, ঋণের অর্থ চুকাতে গিয়ে তাদের বেতনের বেশিরভাগই শেষ হয়ে যায়।

গার্ডিয়ানের অনুসন্ধানে টপ গ্লাভ শ্রমিকদের বেতন রশিদে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটিতে শ্রমিকদের মূল বেতন এক হাজার রিঙ্গিত (মালয়েশীয় মুদ্রা)। অথচ মালয়েশিয়ায় মধ্যম মানের মজুরি দুই হাজার ১৬০ রিঙ্গিত। চুক্তিতে উল্লেখ থাকার পরও কেবল রবিবারের অতিরিক্ত কাজের জন্য তাদের ওভারটাইম দেয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটিতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রাও অনেক বেশি। গার্ডিয়ানকে সাক্ষাৎকার দেওয়া শ্রমিকদের একাংশ অভিযোগ করেছে, তাদের প্রতিদিন ১৫ হাজার গ্লাভস মোড়কজাত করতে হয়। আরেক শ্রমিক অভিযোগ করেছে, বিগত বছরের তুলনায় তার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৪ গুণ বেড়েছে। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না করতে পারলে বেতন কাটা হয় তাদের।

শ্রমিক নির্যাতনের একই চিত্র দেখা গেছে, টপ গ্লাভসের সহযোগী উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ডব্লিউআরপিতে। প্রতিষ্ঠানটির শ্রমিকদের অভিযোগ, তাদের কারখানার ভেতরে আটকে রাখা হয়। কেবল রবিবার তারা বাইরে যাওয়ার সুযোগ পায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেপালি শ্রমিক বলেছেন, ‘তিন মাস হয়ে গেছে আমাদের বেতন দেয়া হয়নি;  পরিস্থিতিটা খুব ভয়াবহ। আমার পরিবারের অর্থের প্রয়োজন কিন্তু আমি তাদের কাছে অর্থ পাঠাতে পারছি না। আমার কারখানা কোথায় তারা জানতে চাইছে।’এক সম্ভাব্য ক্রেতা ডব্লিউআরপির কারখানা ঘুরে আসার পর বলেছেন, কারখানার ভেতরে প্রবেশের পর সেখানকার পরিবেশ দেখে তিনি খুবই মর্মাহত হয়েছেন। এত বাজে কর্মপরিবেশ তিনি কোথাও দেখেননি। কারখানার ভেতরে  ৭০ ডিগ্রি০ সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার খুব কাছাকাছি শ্রমিকদের কাজ করতে হয়। এদিকে এক হাজার ৮০০ শ্রমিক ধারণক্ষমতাসম্পন্ন হোস্টেলে রাখা হয়েছে তিন হাজারেরও বেশি শ্রমিককে।

দুই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেই শ্রমিক নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। শ্রমিকের বেতনের ওপর ২০ শতাংশের বেশি নিয়োগ ফি আরোপের অভিযোগ অস্বীকার করে প্রতিষ্ঠানটির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং শ্রমিকের নিজস্ব দেশের সরকার যতটুকু অনুমোদন করে সে পরিমাণ অর্থই কেবল নিয়োগ ফি হিসেবে আরোপ করে টপ গ্লোব।’ অতিরিক্ত কর্মঘণ্টার কথা স্বীকার করলেও আরসব অভিযোগের প্রসঙ্গে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা আপনাদের নিশ্চিত করছি সমস্ত অভিযোগের কোনো অস্তিত্বই নেই এবং আমাদের সুনাম নষ্ট করতে এসব অভিযোগ করা হচ্ছে।’ এদিকে ডব্লিউআরপির প্রধান নির্বাহী লি সন হং এক বিবৃতিতে সব অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেছেন। বেতন বকেয়া রাখার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘মজুরি আটকে রাখা এবং তিন মাসে একবার মজুরি দেয়ার অভিযোগে আমরা হতভম্ভ, যেখানে মালয়েশিয়ান চাকরিবিধি অনুযায়ী আমরা প্রতি মাসে বেতন দিচ্ছি। সপ্তাহে একদিন বিশ্রাম ছাড়া কোনো শ্রমিককে কখনোই ১২ ঘণ্টা কাজ করতে বাধ্য করা হয়নি।’

গার্ডিয়ান তাদের অনুসন্ধানে জানিয়েছে, টপ গ্লাব ও ডব্লিউআরপির কারখানাগুলোতে শ্রমিকদের পরিচয় সংক্রান্ত কাগজপত্র, ঋণ চুকানোর বন্ড স্বাক্ষর ও অতিরিক্ত কর্মঘণ্টার মতো যে অভিযোগগুলো পাওয়া গেছে, তাতে সেখানে বিদ্যমান পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা সংজ্ঞায়িত আধুনিক দাসত্ব ও বাধ্যতামূলক শ্রমের পর্যায়ে পড়ে। 

/এফইউ/বিএ/
সম্পর্কিত
চীনের দক্ষিণাঞ্চলে সড়ক ধসে নিহত ৩৬
লাইয়ের অভিষেক পরবর্তী চীনা সামরিক মহড়া নিয়ে সতর্ক অবস্থানে তাইওয়ান
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোট শুরু
সর্বশেষ খবর
অপহৃত ১০ বাংলাদেশিকে ফেরত দিয়েছে আরাকান আর্মি
অপহৃত ১০ বাংলাদেশিকে ফেরত দিয়েছে আরাকান আর্মি
ধানমন্ডিতে ছাদ থেকে পড়ে গৃহকর্মী আহত 
ধানমন্ডিতে ছাদ থেকে পড়ে গৃহকর্মী আহত 
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সকার স্কুলের বাছাইয়ে ৩ বাংলাদেশি কিশোর
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সকার স্কুলের বাছাইয়ে ৩ বাংলাদেশি কিশোর
দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঢাকায় স্বস্তির বৃষ্টি, কমলো তাপমাত্রা
দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঢাকায় স্বস্তির বৃষ্টি, কমলো তাপমাত্রা
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা