X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২১ বৈশাখ ১৪৩১

করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নির্দয় নীতি দক্ষিণ আফ্রিকার

বিদেশ ডেস্ক
০৫ এপ্রিল ২০২০, ১০:০২আপডেট : ০৫ এপ্রিল ২০২০, ১০:২২

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় দক্ষিণ আফ্রিকায় গত এক সপ্তাহ ধরে লকডাউন চলছে। আর এর মধ্যেই সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ এবং তা কার্যকর করার ধরণে আশাবাদী হচ্ছে অনেকে। কারণ এই অল্প সময়েই দেশটির কর্তৃপক্ষ ৪৭ হাজারের বেশি মানুষের পরীক্ষা করেছে। ৬৭টি ভ্রাম্যমাণ পরীক্ষা ইউনিট তৈরি করে সেগুলোকে কাজে লাগানো হয়েছে। গাড়ি চালিয়ে পার হওয়ার সময়ও পরীক্ষা করা হচ্ছে অনেককে। কিছুদিনের মধ্যেই দেশটি দৈনিক ৩০ হাজার মানুষকে পরীক্ষা করতে পারবে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে মাত্র পাঁচ জনের। আর এখন পর্যন্ত সংক্রমণ হয়েছে এক হাজার ৪০০ জনের মধ্যে। তবে বিশ্বের অন্য অনেক দেশের তুলনায় দক্ষিণ আফ্রিকা অপেক্ষাকৃত দ্রুত, কার্যকর এবং অনেকটা নির্দয়ভাবে তাদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছে। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নির্দয় নীতি দক্ষিণ আফ্রিকার

করোনাভাইরাস মোকাবেলায় পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে দেশটির প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা ভয়ানক একজন নেতা হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন। নেতা হিসেবে সহানুভূতিশীল, ধীর স্থির চরিত্রের অধিকারী হলেও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ও বেসরকারি খাত থেকে সাহায্যের প্রবাহ নিশ্চিত করে পরিস্থিতি বিবেচনায় দ্রুত সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আর প্রেসিডেন্টের পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জুয়েলি এমখিজেও তার কর্মচঞ্চল ও পরিস্থিতি বিবেচনায় যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি মার্জিত ও ওয়াকিবহাল দৈনিক সংবাদ সম্মেলনের জন্য বিশ্বব্যাপী নন্দিত হয়েছেন। তবে এই সময়ে যে কোনও ভুলত্রুটি হয়নি; তা কিন্তু নয়।

অনেক সময়ই পুলিশ ও সেনাবাহিনী তিন সপ্তাহব্যাপী লকডাউন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে ব্যবসায়িক রাজধানী জোহানেসবার্গ এবং অন্যান্য এলাকার রাস্তায় সাধারণ মানুষকে পেটানো, অসম্মানজনক আচরণ করা থেকে শুরু করে গুলিও করেছে। কিছু নিয়ম সম্পর্কে মানুষের মধ্যে দোটানা ছিল। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অস্পষ্ট বার্তা দেওয়া এবং কয়েকজন মন্ত্রীর কথা ঘুরানোর মতো ঘটনাও ঘটেছে। তবে সবচেয়ে বেশি কঠিন ছিল সবচেয়ে দারিদ্রপীড়িত এবং ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলগুলোতে সামাজিক দূরত্ব ও তাদের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা। অনেকে মনে করেন সেসব এলাকায় এখনও ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে।

সব মিলিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা যেই ধরণের লকডাউনের মধ্যে এক সপ্তাহ পার করেছে, সে রকমটা বিশ্বের আর কোনও দেশেই দেখা যায়নি। এই লকডাউনের মধ্যে ঘরের বাইরে দৌড়ানো বা কোনও ধরনের ব্যায়াম করতে যাওয়া, সিগারেট বা বিয়ার কিনতে যাওয়া, কুকুর নিয়ে বের হওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল, যা পৃথিবীর অনেক দেশেই অনুমোদিত ছিল।

দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারকে সাধারণভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত ও অকার্যকর হিসেবে সমালোচনা করা হয়। দেশটির বেসরকারি খাতকে বিচ্ছিন্ন ও লোভী হিসেবে সমালোচনা করা হয়। তারা যেভাবে এই দুর্যোগ পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে, সে বিষয়টি আলোচনায় আসছে।

দক্ষিণ আফ্রিকায় এই মুহূর্তে যে ব্যক্তি আত্মপ্রসন্নতায় ভুগতে নিষেধ করছেন এবং আত্মতুষ্টির সম্ভাব্য ভয়াবহতা সম্পর্কেও হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন তিনি দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী। কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ গবেষণাগার উদ্বোধনের সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাক্তার এমখিজে বলেন, ‘আমরা এখন যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি তা সম্ভবত প্রলয়ঙ্করী ঝড়ের আগের শান্ত অবস্থা। আমরা যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেই তাহলে যে কোনও সময় পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে পরে। তখন আমরা সতর্ক হওয়ারও সুযোগ পাবো না।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী এমখিজে মন্তব্য করেছেন, যেহেতু দেশের ভেতরে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে, আমরা এখনও সমস্যার সঠিক চিত্র পাইনি। অর্থাৎ দক্ষিণ আফ্রিকা এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর পদক্ষেপ নিলেও দেশটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থার আসল পরীক্ষা এখনও বাকি। আর যেহেতু আর্থ-সামাজিক দিক থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে অসম সমাজ ব্যবস্থাগুলোর একটি দক্ষিণ আফ্রিকার সমাজ, সেই পরীক্ষার ফল নির্ধারিত হবে দেশটির দরিদ্রতম সম্প্রদায়গুলোর আচরণে।

অযোগ্যতা ও অদক্ষতা

দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারি ও বেসরকারি খাতের সর্বোচ্চ পর্যায়ে বোধ বুদ্ধিসম্পন্ন, দক্ষ নেতৃত্ব থাকলেও বহু বছর স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি ও অর্থনীতির স্থিরগতি বিরাজ করার কারণে প্রধান প্রধান প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে অর্থ নিয়ে তহবিল সংগ্রহ করা সাবেক প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী অ্যাড্রিয়ান এথোভেন বলেন, প্রায় এক দশক ধরে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল করে দেওয়ায় দেশ হিসেবে আমরা যথেষ্ট প্রস্তুত নই।

এই আশঙ্কা দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। অনেক সময়ই রাজনৈতিক বিবেচনায় অযোগ্য ব্যক্তিকে বসানো হয়েছে ওই বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ পদে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রাদেশিক সরকারের একজন সিনিয়র নেতা বলেন, স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকরা যথেষ্ট কাজ করলেও শীর্ষ পর্যায়ের ব্যবস্থাপনায় একসঙ্গে অনেকে প্রায় নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। তাদের অধিকাংশই রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পেয়েছেন। নেতৃত্ব দেওয়ার কোনও ক্ষমতাই তাদের নেই। অধিকাংশেরই বেসরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করার মানসিকতা নেই।

জোহানেসবার্গের একপ্রান্তে থাকা শহরতলী আলেক্সান্দ্রার রাস্তা দিয়ে এক বিকেলে হাঁটলেই ধারণা পাওয়া যায় যে, দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য এই ভাইরাস আটকে রাখা কতটা কঠিন হতে পারে। সেখানে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি, গণমাধ্যমে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা নিশ্চিত করতে ক্রমাগত বার্তা দেওয়া, পিক আপ ট্রাকে করে বিনামূল্যে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ এবং রোগীদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের শনাক্ত করায় পরীক্ষা করার ইউনিটগুলোর দ্রুত পদক্ষেপ লক্ষ্যণীয়। তবে দারিদ্র্যপীড়িত এলাকাটির রাস্তায় শিশুদের ফুটবল খেলতে অথবা তরুণদের বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে দেখা যায়।

আলেকজান্দ্রায় ভাইরাস ছড়ানো নিয়ে শঙ্কা থাকলেও আপাতত সেখানকার মানুষের মধ্যে তার চেয়েও বড় চিন্তার বিষয় চাকরি হারানো, খাদ্যের দাম নাগাল ছাড়ানো এবং দূরত্ব বজায় রাখার মত 'প্রায় অসম্ভব' লক্ষ্য পূরণ করা। কারণ সেখানকার অধিকাংশ মানুষেরই বাড়ি বলতে রয়েছে একটি ঘর, যেখানে কোনও রান্নাঘর বা বাথরুম নেই। কিন্তু হঠাৎ আবির্ভূত হওয়া যুদ্ধ বা কোনও দুর্যোগ পরিস্থিতিতে অনেক সময়ই সমাজে আমূল পরিবর্তন হয়ে থাকে।

প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও চলমান ধারার পতন, দুর্বল নেতৃত্বের মুখোশ উন্মোচনের পাশাপাশি সমাজের সমকালীন সময়ের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ও প্রগতিশীল মানুষগুলোর উত্থান - সমাজে এ ধরণের পরিবর্তন সাধারণত দুর্যোগ পরিস্থিতিতেই ঘটে থাকে। সূত্র: বিবিসি।

/এমপি/
সম্পর্কিত
কেনিয়ায় বন্যায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৮১
ক্যানারি দ্বীপে নৌকাডুবি, ৫০ জনের মৃত্যুর আশঙ্কা
বৃষ্টি ও বন্যায় কেনিয়ায় নিহত অন্তত ৪৫
সর্বশেষ খবর
পিকআপের পেছনে ট্রাকের ধাক্কা, উল্টে গিয়ে ২ শ্রমিক নিহত
পিকআপের পেছনে ট্রাকের ধাক্কা, উল্টে গিয়ে ২ শ্রমিক নিহত
নবযুগ প্রকাশনীর কর্ণধার অশোক রায় নন্দী মারা গেছেন
নবযুগ প্রকাশনীর কর্ণধার অশোক রায় নন্দী মারা গেছেন
মালয়েশিয়ায় আটকে পড়া বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগ
মালয়েশিয়ায় আটকে পড়া বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগ
চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে মুক্তিযোদ্ধাকে গাছে বেঁধে বিচারের হুমকি
চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে মুক্তিযোদ্ধাকে গাছে বেঁধে বিচারের হুমকি
সর্বাধিক পঠিত
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
গাজীপুরে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ, বগি লাইনচ্যুত
গাজীপুরে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ, বগি লাইনচ্যুত
লাইনে দাঁড়িয়ে ১০ টাকার টিকিট কেটে চোখ পরীক্ষা করালেন প্রধানমন্ত্রী
লাইনে দাঁড়িয়ে ১০ টাকার টিকিট কেটে চোখ পরীক্ষা করালেন প্রধানমন্ত্রী