X
শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫
১৩ আষাঢ় ১৪৩২

যাদের ঘুষ দিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন এমপি পাপুল

বিদেশ ডেস্ক
১৩ জুলাই ২০২০, ১৩:৩৪আপডেট : ১৩ জুলাই ২০২০, ১৭:৪৪

মানবপাচারের দায়ে কুয়েতে গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের এমপি কাজী শহিদুল ইসলাম পাপুলের নানান ধারার অপকর্মের কথা প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে। দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদে উঠে এসেছে কীভাবে মানুষকে প্রতারিত করে তিনি সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। ঘুষের বিনিময়ে এই কাজে তাকে সহায়তা দিয়েছেন কুয়েতি কর্মকর্তারা। পাপুল তার লেনদেনের সুবিধার্থে যাদের ঘুষ দিয়েছিলেন, ১৬ জুন সম্পূরক তদন্ত চলাকালে তার একটি তালিকা পাওয়া গেছে। তালিকায় থাকা তিন জনের নাম প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যম আরব টাইমস। যাদের ঘুষ দিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন এমপি পাপুল

পাপুলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার ঘটনায় ইতোমধ্যেই ঊর্ধ্বতন একজন সেনা কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করেছে কুয়েত। একই ঘটনায় দেশটির দুই এমপি-র দায়মুক্তি তুলে নিতে পার্লামেন্টের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটির পাবলিক প্রসিকিউশন। ওই দুই এমপি হচ্ছেন সাদৌন হাম্মাদ ও সালাহ খুরশিদ। বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে ঘুষের বিনিময়ে মন্ত্রণালয় থেকে পাপুলকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। তদন্তকালে পাপুল-ও তাদের অর্থ দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

কুয়েতের পাবলিক প্রসিকিউশন জানিয়েছে, বাংলাদেশের সংসদ সদস্য পাপুল তাদের জানিয়েছেন তিনি কুয়েতি এমপি সাদৌন হাম্মাদকে প্রায় দুই লাখ কুয়েতি দিনার দিয়েছেন। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় পাঁচ কোটি ৫১ লাখ ৯৩ হাজার ৬৯১ টাকা।

নগদ ও চেক মিলিয়ে সাদৌন হাম্মাদকে এ ঘুষের অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫০ হাজার দিনার দেওয়া হয়েছে তার বাসায়। বাকি দেড় লাখ দিনারের চেক পরিশোধ করা হয়েছে এক সিরীয় মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে। কুয়েতে নিজের লেনদেন সহজতর করার জন্যই ওই মধ্যস্থতাকারীর শরণাপন্ন হন পাপুল। ওই সিরীয় নাগরিক কুয়েতে একটি প্রতিষ্ঠানের ডেপুটি ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

কুয়েতে বাংলাদেশি শ্রমিক নিতে দেশটির আরেক এমপি সালাহ খুরশিদকে নগদ তিন লাখ ৭০ হাজার কুয়েতি দিনার দেওয়া হয়। কয়েক ধাপে তার বাসায় গিয়ে এ অর্থ পরিশোধ করা হয়। গোপন তদন্তে উঠে এসেছে যে, তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় একটি চক্র কুয়েতে মানবপাচারের সঙ্গে যুক্ত ছিল। একজন কুয়েতি এমপির মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানকে পাপুল এ কাজে ব্যবহার করেন।

প্রতারণার মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিকদের কুয়েতে নিয়ে যাওয়া হতো। কুয়েতে কথিত চাকরির চুক্তির জন্য তাদের কাছ থেকে আড়াই হাজার থেকে দুই হাজার ৭০০ কুয়েতি দিনার করে নেওয়া হতো। অথচ আইন লঙ্ঘনের কারণে এই চক্রের প্রতিষ্ঠানটি তখন বন্ধ ছিল। কুয়েতে পৌঁছে বাংলাদেশি শ্রমিকরা বুঝতে পারতো ওই চুক্তি ছিল ভুয়া। অর্থাৎ তারা প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়েছেন। পরে তাদের জোরপূর্বক এমপি পাপুলের  মালিকানাধীন অন্য কোম্পানিতে কাজে লাগানো হতো।

ভিনদেশে গিয়ে ভাগ্যবিড়ম্বনার শিকার এই শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধ না করে এবং উপযুক্ত থাকার ব্যবস্থা না করে অমানবিক কর্মপরিবেশে তাদের দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতে বাধ্য করা হয়। কেউ আপত্তি করলেই তাদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হতো। তদন্তে দুই কোম্পানির কিছু কর্মীকেও সাক্ষী করা হয়েছে। সাক্ষীরা জানান, এমপি পাপুলের মালিকানাধীন ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে তাদের বাংলাদেশ থেকে কুয়েতে নিয়ে যাওয়া হয়।

প্রসিকিউশন জানিয়েছে, ১৩ জুন পাপুলের বাসা ও প্রতিষ্ঠানে তল্লাশি করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি যৌথ মালিকানার ছিল। ওই তল্লাশিকালে সেখানে কিছু ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য পাওয়া যায়। বিভিন্ন ব্যক্তির নামে থাকা কিছু চেক দেখতে পান কর্মকর্তারা; যাদের কেউ কেউ কুয়েতের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে কর্মরত আমলা।

তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে, এমপি পাপুল প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করেছেন। ইচ্ছাকৃতভাবে তার আয়ের কিছু উৎস গোপন করা হয়; যা তিনি মানবপাচারের মাধ্যমে উপার্জন করেছিলেন। লেনদেনের সুবিধার্থে সরকারি কর্মকর্তাদের মোটা অঙ্কের ঘুষ দেন তিনি।

জিজ্ঞাসাবাদের শুরুর দিকে এমপি পাপুল তার বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেন। তদন্তাধীন নানা ঘটনার সঙ্গে নিজের সংশ্লিষ্টতার কথাও অস্বীকার করেন তিনি। পরে তার বাসভবন ও প্রতিষ্ঠানে তল্লাশিকালে এ সংক্রান্ত নানা নথির খোঁজ পান কর্মকর্তারা। এরপরই পাপুল স্বীকার করতে বাধ্য হন, তিনিই প্রতিষ্ঠানটির প্রকৃত ম্যানেজার। তল্লাশিতে পাওয়া চেকগুলো সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য তৈরির কথাও স্বীকার করেন তিনি। তবে তার দাবি, ওই অর্থ দেওয়ার উদ্দেশ্য ছিল বেআইনি নয়; এমন প্রক্রিয়াগুলো যেন কর্মকর্তারা দ্রুত সম্পাদন করেন। নগদ অর্থের বিনিময়ে শ্রমিকদের কুয়েতে নিয়ে যেতে বাংলাদেশে অবস্থিত ট্রাভেল অফিসের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখতেন পাপুল।

১৬ জুন সম্পূরক তদন্ত চলাকালে পাপুল তার লেনদেনের সুবিধার্থে যাদের ঘুষ দিয়েছিলেন; নিচে তাদের পরিচয় তুলে ধরা হলো।

০১. এমপি সাদৌন হাম্মাদ আল-ওতাবি। লেনদেন সহজতর করা এবং কুয়েতে বাণিজ্যিক প্রক্রিয়া সম্পন্নের জন্য তার বাসভবনে গিয়ে নগদ ৫০ হাজার দিনার পরিশোধ করা হয়।

০২. এক সিরীয় মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে এমপি সাদৌন হাম্মাদকে বাকি দেড় লাখ দিনারের চেক পরিশোধ করা হয়। কুয়েতে নিজের লেনদেন সহজতর করার জন্যই ওই মধ্যস্থতাকারীর শরণাপন্ন হন পাপুল। ওই সিরীয় নাগরিক কুয়েতে একটি প্রতিষ্ঠানের ডেপুটি ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০১৭ সালে ওই ব্যক্তি কুয়েত ত্যাগ করেন।

০৩. এমপি সালাহ আবদুলরেধা খুরশিদ। কুয়েতে বাংলাদেশি শ্রমিক নিতে দেশটির এই এমপি-কে নগদ তিন লাখ ৭০ হাজার কুয়েতি দিনার দেওয়া হয়। কয়েক ধাপে তার বাসায় গিয়ে এ অর্থ পরিশোধ করা হয়।

এর বাইরেও আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তাকে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হয়।

আরও পড়তে পারেন: 
কুয়েতে এমপি পাপুলের ঘটনায় সন্দেহভাজন সেনা কর্মকর্তা গ্রেফতার

পাপুলের কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ বাড়াবে না কুয়েত বিমানবন্দর

কুয়েতের নাগরিক হলে পাপুলের সংসদ সদস্য পদ বাতিল হবে: প্রধানমন্ত্রী

/এমপি/বিএ/এমএমজে/
সম্পর্কিত
বোরকা নিষেধাজ্ঞা বিতর্কে ব্রিটেনে মুসলিম নারীদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে
ট্রাম্পের জয়কে বাংলাদেশের আঙ্গিকে ভারত যেভাবে দেখছে
শেখ হাসিনা, সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
সর্বশেষ খবর
কেন্দ্রে পদত্যাগপত্র পাঠালেন এনসিপির রাজশাহী জেলার প্রধান সমন্বয়কারী
কেন্দ্রে পদত্যাগপত্র পাঠালেন এনসিপির রাজশাহী জেলার প্রধান সমন্বয়কারী
পড়াশোনার জন্য শাসন করায় স্কুলশিক্ষার্থীর ‘আত্মহত্যা’
পড়াশোনার জন্য শাসন করায় স্কুলশিক্ষার্থীর ‘আত্মহত্যা’
চীন সফর ছিল রাজনৈতিক: দেশে ফিরে মির্জা ফখরুল
চীন সফর ছিল রাজনৈতিক: দেশে ফিরে মির্জা ফখরুল
রাজস্ব বিভাগের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজে মনোনিবেশের নির্দেশ
রাজস্ব বিভাগের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজে মনোনিবেশের নির্দেশ
সর্বাধিক পঠিত
বিরোধীদের নিষিদ্ধ করা বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পথ নয়: দ্য ইকোনমিস্ট
বিরোধীদের নিষিদ্ধ করা বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পথ নয়: দ্য ইকোনমিস্ট
ভাঙা হলো বিজয় সরণির ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’, হবে জুলাই স্মরণে ‘গণমিনার’
ভাঙা হলো বিজয় সরণির ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’, হবে জুলাই স্মরণে ‘গণমিনার’
যমুনা সেতু থেকে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে রেলপথ
যমুনা সেতু থেকে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে রেলপথ
মিরপুরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়ক বিভাজকে উঠে গেলো বাস, একজন নিহত
মিরপুরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়ক বিভাজকে উঠে গেলো বাস, একজন নিহত
এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ দফতরে উপস্থিতি ও সেবা নিশ্চিতের নির্দেশ
এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ দফতরে উপস্থিতি ও সেবা নিশ্চিতের নির্দেশ