X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

আইএসের কারাগার থেকে পালিয়ে আসা এক ফরাসি নারীর গল্প

বিদেশ ডেস্ক
১০ জানুয়ারি ২০১৬, ২১:৫৬আপডেট : ১০ জানুয়ারি ২০১৬, ২১:৫৮
image

গত ফেব্রুয়ারিতে চার বছরের সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে সিরিয়ার রাকা শহরে যান ফরাসি নারী সোফি কাসিকি। উদ্দেশ্য আইএসে যোগ দেয়া। তবে ক’দিন বাদেই সোফি বুঝতে পারেন কী ভুল করেছেন তিনি। বুঝতে পারেন, স্বর্গ ভেবে ভুল করে নরকেই পা বাড়িয়েছেন। আর ভুল বোঝার পর শুরু হয় আইএসের কাছ থেকে তার মুক্তির লড়াই। কিন্তু ঢোকাটা যতো সহজ, বের হয়ে আসার পথ বোধহয় ততোটাই কঠিন।  সারাক্ষণই সেখানে মৃত্যু ফাঁদ। তবে সব বাধা পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত দেশে ফিরতে সক্ষম হন সোফি।

ফরাসি নারী সোফি কাসিকি

 

ফরাসি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, আইএসের হয়ে লড়াই করতে  ২’শরও বেশি ফরাসি নারী সিরিয়া ও ইরাকে গেছেন। আর ফ্রান্স থেকে আইএসের হয়ে লড়াই করতে সিরিয়া ও ইরাকে যাওয়া মানুষদের মধ্যে ৩৫ শতাংশই নারী। তবে পশ্চিমা বিশ্বের নারীদের ব্যাপক হারে সশস্ত্র গোষ্ঠীতে যোগ দেওয়ার খবর পাওয়া গেলেও সেখান থেকে তাদের ফেরার খবর খুব কমই পাওয়া যায়। যারা ফিরে আসতে সক্ষম হন, তারা নিজেদের ভাগ্যবান বলে দাবি করেন। তেমনই একজন সোফি। সম্প্রতি অবজারভারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আইএসে থাকাকালীন রোমহর্ষক দিন আর সেখান থেকে ফিরে আসার গল্প বলেছেন তিনি।
কঙ্গোতে জন্ম নেওয়া সোফি একজন সমাজকর্মী। অভিবাসী পরিবারগুলোর পুনর্বাসনে সহায়তা করাই ছিল তার কাজ। ৩৪ বছর বয়সী সোফি জানান, ফ্রান্স থেকে সিরিয়ায় যেতে এবং আইএসে যোগ দিতে তাকে প্ররোচিত করেন সংগঠনটির তিন জিহাদি। ফ্রান্সের প্যারিসে ওই তিনজনের সঙ্গে তার পরিচয়। সোফি বলেন, সরলতা আর দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তারা তাকে সিরিয়ায় যেতে রাজি করিয়ে ফেলে। তবে সত্য কথাটা স্বামীকে জানিয়ে সিরিয়ায় যাওয়াটা তার জন্য সম্ভব হতো না। আর তাই মিথ্যের আশ্রয় নেন সোফি। স্বামীকে বলেন, ইস্তাম্বুলের একটি এতিমখানায় কাজ পেয়েছেন, সেখানেই যাচ্ছেন। এরপর চার বছরের সন্তানকে নিয়ে তুরস্ক হয়ে সিরিয়ায় যান সোফি।

সিরিয়ার রাকা শহর   

সিরিয়াতে পৌঁছানোর অল্প কয়েকদিনে মাথায় সোফি বুঝতে পারেন যে, জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটি তিনি করে ফেলেছেন। আর তা বোঝার পর যখনই হাতজোড় করে আইএস সদস্যদের কাছে তাকে বাড়িতে ফেরত পাঠানোর জন্য আবেদন জানাতেন তখনই তাকে পাথর ছুড়ে হত্যার হুমকি দেওয়া হতো। কেবল তাই নয়, তাকে একা কোথাও যেতে দেওয়া হতো না। এমনকি তার পাসপোর্টটিও জব্দ করে ফেলা হয়।
সোফি কাজ করছিলেন ম্যাটারনিটি ইউনিটে। সেখানকার অবস্থা খুবই নোংরা ছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি। এছাড়া দেশ থেকে স্বামীর টেক্সট পাচ্ছিলেন। সোফি বলেন, ‘আমি তাদের প্রতিদিন বলতাম আমি পরিবারকে মিস করছি। আমার সন্তান তার বাবাকে মিস করছে। দয়া করে আমাকে যেতে দিন। তারা বলতো সন্তানকে নিয়ে আমি একা এক নারী, আমি কোথাও যেতে পারব না। আর আমি যদি বের হতে চাই তবে আমাকে হত্যা করা হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়।’
এরপর আসে আরও ভয়াবহ সময়। একদিন এক জিহাদি এসে সোফি আর তার সন্তানকে গেস্ট হাউজে নিয়ে যায় যা আদতে আইএসর কারাগার। সেখানে বেশ ক’জন বিদেশি নারীকে আটকে রাখা হয়েছে। সেখানে শিশুদের শিরশ্ছেদের ভিডিও দেখানো হচ্ছে। আর এ ভবনটি ত্যাগ করার একমাত্র উপায় হল কোনও আইএস সদস্যকে বিয়ে করা এবং তাদের সন্তান জন্ম দেওয়া।

  আইএসের ফাইল ছবি

তবে অবিশ্বাস্যভাবে একদিন দরোজা খোলা পেয়ে যান সোফি। বের হয়ে আসেন সেখান থেকে। পরে তাকে বাঁচাতে জীবনবাজি রাখে এক সিরীয় পরিবার। এপ্রিলে মোটরবাইকে করে তুরস্ক সীমান্তে পৌঁছান সোফি ও তার সন্তান। এরপর প্যারিসে পৌঁছালে তাকে দু মাস ধরে আটক রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করে ফরাসি কর্তৃপক্ষ। পরে আবার স্বামীর কাছে ফিরে যান সোফি।
সোফি স্বীকার করেন তাকে মগজ ধোলাই করা হয়েছিল। নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে সবার জন্য একটি পরামর্শ দেন তিনি। বলেন, ‘অন্য মানুষরা যেনও এ পথে পা না বাড়ায়। এর জন্য আমি খুব বেশি কিছু করতে পারব না হয়তো। শুধু বলতে পারি যেও না।’ সূত্র: ডেইলি মেইল

 

/এফইউ/বিএ/

সম্পর্কিত
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?
ব্রিটেনের সর্বপ্রথম ক‌নিষ্ঠ কাউন্সিলর বাংলাদেশি ইসমাইল
রাশিয়ার ‘ওয়ান্টেড’ তালিকায় জেলেনস্কি
সর্বশেষ খবর
নারায়ণগঞ্জে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ, আহত ৩
নারায়ণগঞ্জে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ, আহত ৩
সুন্দরবনে আগুন ছড়ানো রুখতে দেওয়া হয়েছে বেরিকেট
সুন্দরবনে আগুন ছড়ানো রুখতে দেওয়া হয়েছে বেরিকেট
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
লখনউকে বড় হারের লজ্জা দিয়ে শীর্ষে কলকাতা
লখনউকে বড় হারের লজ্জা দিয়ে শীর্ষে কলকাতা
সর্বাধিক পঠিত
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
সব জেনেও পুলিশকে কিছু জানাননি মিল্টনের স্ত্রী
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ডিবি হারুনসব জেনেও পুলিশকে কিছু জানাননি মিল্টনের স্ত্রী