বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের ওপর ভিসানীতি প্রয়োগ হতে পারে, সম্প্রতি এমন কথা জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এই বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেছেন, মার্কিন ভিসার রেকর্ড গোপনীয় তথ্য। তাই কোনও তালিকা বা নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের নাম ঘোষণা করা হয়নি। স্পষ্ট করা হয়েছে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন এবং বিরোধী দলের সদস্যদের ওপর ভিসা নীতি কার্যকর হয়েছে। সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন তিনি।
বাংলাদেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশনের প্রতিনিধি মিলারকে প্রশ্ন করেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত গত ২৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে নতুন ভিসা বিধিনিষেধে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বের অন্তর্ভুক্তির ঘোষণা দিয়েছেন এবং উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। আপনি কি মনে করেন, নিষেধাজ্ঞা সংবাদমাধ্যমে আরোপ হলে মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বানকে দুর্বল করবে?
জবাবে মিলার বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত যা বলেছি এবং কাদের জন্য প্রযোজ্য হবে আমরা নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের নাম ঘোষণা করিনি। কারণ মার্কিন ভিসার রেকর্ডগুলো গোপনীয় তথ্য। স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যে– আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের জন্য এই নীতি প্রযোজ্য হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক ম্যাথিউ মিলারের কাছে বাংলাদেশে ভিসানীতি কার্যকরের ইস্যুতে প্রশ্ন করেন। এ সময় মিলার বলেন, ‘গত মে মাসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এই নতুন নীতি ঘোষণা করেছিলেন। এর উদ্দেশ্য, বাংলাদেশে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে কারও পক্ষ নেওয়া নয়। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত বা সমর্থন আমাদের লক্ষ্য। এছাড়াও গত শুক্রবার যখন নতুন ভিসা বিধিনিষেধ কার্যকরের ঘোষণা দিয়েছিলাম আমরা, তাতে উল্লেখ ছিল নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দল ও রাজনৈতিক বিরোধীরা অন্তর্ভুক্ত।’
আরেক প্রশ্নে বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দলের চেয়ারপারসনের মুক্তি এবং উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে যাওয়ার অনুমতির জন্য সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে। ৭৮ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অবস্থা খুবই গুরুতর। তার চিকিৎসার অবস্থা খুবই গুরুতর, তার মুক্তির বিষয়ে আপনাদের অবস্থান কী?
এ বিষয়ে তার কোনও মন্তব্য নেই বলেও জানিয়ে দেন মিলার।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ব্রিফিংয়ের বিবরণী থেকে বাংলাদেশ সংশ্লিষ্ট প্রশ্নোত্তর পর্ব হবহু তুলে ধরা হলো-
প্রশ্নকারী: ধন্যবাদ। ম্যাট গত সপ্তাহে আপনি ঘোষণা দিয়েছেন যে, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বাংলাদেশি ব্যক্তিবর্গের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ শুরু করেছে। এই সিদ্ধান্তের পর যুক্তরাষ্ট্রকে ইঙ্গিত করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বাইরে থেকে নির্বাচন বানচালের কোনও উদ্যোগ নেওয়া হলে যারা এমন পদক্ষেপ নেবে তাদের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে। পরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র আশ্বাস দিয়েছে নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্র কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি করবে না। এ কথা কি সত্য? এ বিষয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
মিলার: আমি বলব, যেমনটি আমরা আগেও বলেছি, গত মে মাসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এই নতুন নীতি ঘোষণা করেছিলেন। তখন যেমন আমরা বলেছিলাম, এর উদ্দেশ্য বাংলাদেশে নির্বাচনে কারও পক্ষ নেওয়া নয়। বরং বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত বা সমর্থন করা। আমি বলব যে শুক্রবার যখন আমরা এই নতুন ভিসা বিধিনিষেধ কার্যকরের ঘোষণা দিয়েছিলাম তখনও আমরা উল্লেখ করেছি, এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দল ও রাজনৈতিক বিরোধীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
প্রশ্নকারী: বাংলাদেশ নিয়ে আরেকটি প্রশ্ন। বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল তাদের চেয়ারপারসনকে মুক্তি দিতে এবং তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে। ৭৮ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্যের অবস্থা গুরুতর, তিনি বন্দি এবং হাসপাতালে ভর্তি। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর মুক্তির বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের অবস্থান কী?
মিলার: এই বিষয়ে আমার কোনও মন্তব্য নেই।
বাংলাদেশ নিয়ে আরও কোনও প্রশ্ন?
প্রশ্নকারী: বাংলাদেশ নিয়ে আমার প্রশ্ন আছে।
মিলার: বলুন
প্রশ্নকারী: ধন্যবাদ ম্যাট। মাত্র একটি বিষয়, বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ২৪ সেপ্টেম্বর নতুন ভিসা বিধিনিষেধে মিডিয়া ব্যক্তিত্বরাও অন্তর্ভুক্ত হবেন বলে উল্লেখ করেছেন, এটি উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। মিডিয়া ব্যক্তিত্ব অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমে কাজ করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন সাবেক সম্পাদক উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, এই ধরনের পদক্ষেপ সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখার পরিপন্থী। মিডিয়ার ওপর এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে তা মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পক্ষে দাঁড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বানের গুরুত্বকে ক্ষুণ্ন করবে বলে আপনি মনে করেন কি না?
মিলার: আমাকে স্পষ্ট হতে দিন, কারণ প্রশ্নের প্রথম অংশটা আমি শুনতে পাইনি। এটি কি–
প্রশ্নকারী: মার্কিন রাষ্ট্রদূত–
মিলার: –৩সি পদক্ষেপ–
প্রশ্নকারী: হ্যাঁ। হ্যাঁ।
মিলার: যা শুক্রবার ঘোষণা করা হয়েছে?
প্রশ্নকারী: হ্যাঁ।
মিলার: প্রশ্ন কি এটি–
প্রশ্নকারী: ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত যা বলেছেন–
মিলার: মানে–
প্রশ্নকারী: গতকালের আগের দিন সেখানে তিনি বলেছিলেন এটি মিডিয়া ব্যক্তিত্বের ওপর প্রয়োগ করা হবে।
মিলার: ভিসা রেকর্ড গোপন বিষয় হওয়ায় এটি যাদের ওপর এটি প্রয়োগ করা হবে, আমরা তার নির্দিষ্ট সংখ্যা বা নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের নাম ঘোষণা করিনি। কিন্তু এই বিষয় স্পষ্ট করা হয়েছে যে এই নীতি আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, ক্ষমতাসীন দল ও রাজনৈতিক বিরোধীদের জন্য প্রযোজ্য হবে।
প্রশ্নকারী: ধন্যবাদ।