যুক্তরাষ্ট্রে স্যাটানিক ভার্সেসের লেখক সালমান রুশদিকে হত্যাচেষ্টা মামলার শুনানি শুরু হতে যাচ্ছে। সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) জুরির সামনে উভয়পক্ষের আইনজীবীদের প্রারম্ভিক বক্তব্য পেশের মধ্য দিয়ে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের মেইভিল শহরের চাউটাউকুয়া কাউন্টি আদালতে প্রথম সাক্ষ্যদানকারীদের মধ্যে থাকবেন রুশদি। এই এলাকাতেই গ্রামীণ শিল্পের জন্য সমাদৃত চাউটাউকান ইনস্টিটিউটে ২০২২ সালের আগস্টে লেখকের ওপর উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করা হয়।
ঘটনার সময় ধারণকৃত ভিডিওতে দেখা যায়, উপস্থিত দর্শকদের কাছে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য রুশদিকে মঞ্চে ডাকা হয়। তখন তার ওপর ছুরি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন হাদি মাতার। তার দেহের উপরিভাগের একাধিক স্থানসহ মাথা, ঘাড় ও বাঁ হাতে ছুরির আঘাত লাগে। ওই হামলায় লেখকের ডান চোখ অকেজো হয়ে যায় এবং যকৃৎ ও একাধিক অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অপরিকল্পিত হত্যাচেষ্টার (সেকেন্ড ডিগ্রি অ্যাটেম্পেড মার্ডার) মামলা দায়ের করেছে চাউটাউকান আদালত। তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন মাতার।অভিযোগ প্রমাণিত হলে মাতারের ভাগ্যে জুটতে পারে সর্বোচ্চ ২৫ বছরের কারাদণ্ড।
এ ছাড়া, নিউইয়র্কের পশ্চিমাঞ্চলীয় ফেডারেল প্রসিকিউটররা তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের উদ্দেশ্যে রুশদিকে হত্যাচেষ্টার সঙ্গে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহকে সহায়তা করার অভিযোগ এনেছেন। যুক্তরাষ্ট্র হিজবুল্লাহকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এই অভিযোগের জন্য মাতারকে পৃথকভাবে বাফেলোর একটি আদালতে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।
১৯৮৮ সালে 'দ্য স্যাটানিক ভার্সেস' নামে একটি উপন্যাস প্রকাশ করেন সালমান রুশদি। এরপর থেকেই নিয়মিত মৃত্যুর হুমকি পেয়ে আসছেন তিনি। পরের বছর ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি উপন্যাসটিকে ধর্মবিরোধী আখ্যা দিয়ে একটি ফতোয়া জারি করেন। রুশদি এবং বইটির প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের হত্যার জন্য মুসলিমদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। রুশদির মাথার ওপর কয়েক মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়। এরই জেরে ১৯৯১ সালে তার জাপানি অনুবাদক হিতোশি ইগারাশি হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।
২০২২ সালে হামলার শিকার হওয়ার পর সে অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি স্মৃতিকথামূলক উপন্যাস লিখেছেন সালমান রুশদি। সেখানে তিনি হামলাকারীর সঙ্গে কল্পিত কথোপকথনের আলোকে নিজের সুস্থতার দীর্ঘ প্রক্রিয়া বর্ণনা করেছেন।