কানাডার কৃষি ও খাদ্যপণ্যের ওপর নতুন আমদানি শুল্ক বসানোর ঘোষণা দিয়েছে চীন। প্রায় ২৬০কোটি মার্কিন ডলার মূল্যমানের পণ্যের ওপর এই শুল্ক জারি হতে যাচ্ছে। গত অক্টোবরে চীনা পণ্যের ওপর কানাডার শুল্ক আরোপের জবাবে এই পদক্ষেপ নিয়েছে বেইজিং। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
নতুন শুল্ক নীতির আওতায়, একশ কোটি মার্কিন ডলার অর্থমূল্যের র্যাপসিড তেল, তেলজাতীয় কেক এবং মটর আমদানির ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে। এছাড়া, কানাডার ১৬০ কোটি ডলারের শুকরের মাংস এবং সামুদ্রিক খাদ্যপণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক ধার্য করা হবে।
আগামী ২০ মার্চ থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকরের ঘোষণা রয়েছে।
এর আগে, চীন থেকে বৈদ্যুতিক যানবাহন, স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ১০০ এবং ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করে কানাডা। নতুন শুল্ক সিদ্ধান্তকে ওই পদক্ষেপের জবাব বলেই ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে কানাডার প্রধান রফতানি পণ্য ক্যানোলার ওপর শুল্ক আরোপ না করায় আলোচনা ও সমঝোতার পথ খোলা রাখা হয়েছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
অটোয়ার ওই পদক্ষেপে অবশ্য বিরক্ত হয়েছিল বেইজিং। দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছিল, এই পদক্ষেপ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়মের গুরুতর লঙ্ঘন। তারা অভিযোগ করে, কানাডার অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য রক্ষা করতে এসব সিদ্ধান্ত নিতে চীনের আইনসিদ্ধ অধিকার ও স্বার্থের গুরুতর ক্ষতি করা হয়েছে।
কয়েকজন বিশেষজ্ঞের ধারণা, কানাডার শুল্ক আরোপের জবাব দিতে বিলম্ব হওয়ার কোনও কৌশলগত উদ্দেশ্য রয়েছে। সিঙ্গাপুর ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ইউরেশিয়া গ্রুপের শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞ ড্যান ওয়াং বলেছেন, এখন আঘাত করে চীন মূলত কানাডাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাইছে, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতিতে বেশি প্রভাবিত হওয়ার খেসারত দিতে হতে পারে।
কানাডা ওই শুল্ক ব্যবস্থা চালু করেছিল প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর একটি অভিযোগের পর। চীনে রাষ্ট্রীয়ভাবে পরিচালিত অতিরিক্ত উৎপাদন নীতির সমালোচনা করেছিলেন তিনি। কানাডা শুল্ক আরোপের আগে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নও চীনের বৈদ্যুতিক যানবাহনের বিরুদ্ধে একই ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে।
গত সেপ্টেম্বরে কানাডার ক্যানোলা আমদানির বিরুদ্ধে অ্যান্টি-ডাম্পিং তদন্ত শুরু করেছিল চীন। ২০২৩ সালে চীনে ৩৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ক্যানোলা রফতানি করেছিল কানাডা। কৃষি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান জেসিআইয়ের বিশ্লেষক রোসা ওয়াং রয়টার্সকে বলেছেন, ক্যানোলার বাণিজ্য শুল্কের বাইরে রাখার কারণ হতে পারে আলোচনার দরজা খোলা রাখার একটি কৌশল।
কানাডার পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সরকার পরিবর্তন হলে বাণিজ্য সম্পর্কে উন্নতির সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে বলে আশা করছে চীন। বিশ্লেষক ইভেন পে বলেছেন, বেইজিং সম্ভবত কানাডার নির্বাচন এবং নেতৃত্বে পরিবর্তনের সুযোগে সম্পর্ক পুনর্গঠন করার জন্য অপেক্ষা করছে।