জম্মু-কাশ্মিরে চলমান আন্দোলনে বুধবার পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন আরেক বিক্ষোভকারী। এরআগে মঙ্গলবারের বিক্ষোভে নিহত হন ৩ জন। সবমিলে এ ঘটনায় দুই দিনে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারানো মানুষের সংখ্যা দাঁড়ালো ৪ জনে। তবে কাশ্মিরি নারীর ওপর সেনা সদস্যের যৌন নিপীড়নের অভিযোগে এই বিক্ষোভ শুরু হলেও, সেনাবাহিনীর সরবরাহকৃত এক ভিডিওতে ওই নারীকে অভিযোগ অস্বীকার করতে দেখা গেছে। সেনাবাহিনীর ছড়িয়ে দেওয়া ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ওই নারী বলছেন, স্থানীয় এক ছেলে তার সঙ্গে অশোভন আচরণ করেছেন। এ ঘটনায় দায়িত্বহীনতার অভিযোগে একজন পুলিশ সদস্যকে পুরো বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে সেনা কর্তৃপক্ষ। আর পুরো ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে সেনাবাহিনী।
অভিযোগ উঠেছে, এক কাশ্মিরি মেয়ের ওপর যৌন নিপীড়ন করে এক ভারতীয় সৈনিক। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর এলাকায় শুরু হয় বিক্ষোভ।
আরও পড়ুন: মৃত আফজাল গুরু কেন ফিরে ফিরে আসেন
প্রভাবশালী ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস স্থানীয় অধিবাসীদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, মঙ্গলবার স্থানীয় সময় বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিটের দিকে, শহরের বাজার সংলগ্ন সেনা বাঙ্কারের নিকটবর্তী এক শৌচাগারে (ওয়াশ রুম) ওই কাশ্মিরি মেয়েকে যৌন নির্যাতনের চেষ্টা করেন এক ভারতীয় সেনা সদস্য। খবরটি ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় জনগণ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রীয় রাইফেলস এবং জম্মু-কাশ্মির পুলিশ গুলি চালায়। এতে কুপওয়ারা এলাকার মোহাম্মদ ইকবাল (২১) এবং হান্ডওয়ারার নাইম কাদির (২৩) নিহত হন।
তারিক আহমেদ নামক স্থানীয় এক দোকানদার সেনা সদস্য কর্তৃক যৌন নিপীড়ন সংঘটিত হওয়ার বিষয়ে বলেন, ‘ওই সেনা সদস্য যৌন নিপীড়নের চেষ্টা করলে মেয়েটি একটি সতর্কতামূলক অ্যালার্ম বাজিয়ে দেন। এতে স্থানীয় লোকজন এবং শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ওই সেনা সদস্যকে ধরার চেষ্টা করে। তবে ওই সেনা সদস্য বাঙ্কারে আশ্রয় নেন।’
আরও পড়ুন: নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তেজনা, সাবেক সেনা সদস্যদের ডিগ্রি ফেরতের হুমকি
তারিক আহমেদ আরও জানান, বিক্ষোভকারীরা ওই সেনা সদস্যকে গ্রেফতারের দাবি জানান। প্রতিবাদকারীরা সেনাবাহিনীর গাড়ি এবং পুলিশ স্টেশনের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন এবং ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন। পুলিশ এবং সেনা সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে অনেক বিক্ষোভকারী আহত হন বলেও তারিক উল্লেখ করেন।
হান্ডওয়ারা জেলা হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপারিটেনডেন্ট ড. রওফ বলেন, নিহত দুইজনের শরীরে বেশ কয়েকটি গুলি বিদ্ধ ছিল। একজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়, অপরজন হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘একজন মাথায় গুলি বিদ্ধ হন, অপর ব্যক্তির মুখমণ্ডল এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলি করা হয়।’
সেনা বাহিনীর পক্ষ থেকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সেনাবাহিনী ওই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় গভীরভাবে মর্মাহত।’ কাশ্মিরের পুলিশ প্রধান আইজিপি এসজেএম গিলানিও ওই ঘটনার তদন্তের বিষয়টি উল্লেখ করেন।
তবে প্রতিরক্ষা মুখপাত্র কর্নেল মনীষ কুমার একটি ভিডিও ফুটেজের কথা উল্লেখ করে জানান, মিথ্যা প্রপাগান্ডার জন্যই বিক্ষোভের ঘটনা ঘটল। সেনাবাহিনীই ওই ভিডিওচিত্রের সরবরাহকারী। তারাই ভিডিওটি প্রচার করছে। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, মেয়েটি তাকে যৌন নিপীড়ন চেষ্টার জন্য সেনা সদস্যকে নয়, দোষারোপ করছেন স্থানীয় এক স্কুল ছাত্রকে। ভিডিও ফুটেজে তিনি বলেন, ‘ওয়াশরুমে কোনও সেনা সদস্য ছিল না। আমি হিলালকে দেখলাম। সে আমাকে চড় মেরে জিজ্ঞেস করল, আমি ওখানে কি করছি। সে আমাকে অবৈধ যৌন সম্পর্ক রয়েছে বলে দোষারোপ করে। আমি তাকে বললাম তুমি আমাকে এবং আমার পরিবারকে জেনেও কিভাবে এমন কথা বলতে পারো। সে আমার সঙ্গে বাজে আচরণ করা শুরু করে।’
আরও পড়ুন: শপথ নিলেন জম্মু-কাশ্মিরের প্রথম নারী মুখ্যমন্ত্রী
এদিকে, সেনাবাহিনীর গুলিতে প্রাণহানির ঘটনার প্রতিবাদে হুরিয়ত (জি) চেয়ারম্যান সৈয়দ আলী গিলানি, জম্মু-কাশ্মির লিবারেশন ফ্রন্ট (জেকেএলএফ) প্রধান ইয়াসিন মালিক এবং হুরিয়ত (এম) চেয়ারম্যান মিরওয়াজ উমর ফারুক কাশ্মিরজুড়ে হরতালের ডাক দিয়েছেন। সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, টাইমস অব ইন্ডিয়া, আইবিএন।
/এসএ/বিএ/