X
রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫
১৫ আষাঢ় ১৪৩২

সংবিধান সংশোধনে সু চি’র উদ্যোগের বিরোধিতায় সেনাবাহিনী

বিদেশ ডেস্ক
৩০ জানুয়ারি ২০১৯, ১৬:২১আপডেট : ৩০ জানুয়ারি ২০১৯, ১৬:৪৬

রোহিঙ্গা নিপীড়নে আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে থাকা অং সান সু চি’র নেতৃত্বাধীন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) সংবিধান সংশোধনে আনুষ্ঠানিক উদ্যোগ নেওয়ার পর দেশটির প্রভাবশালী সেনাবাহিনীর প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়েছে। মঙ্গলবার আকস্মিকভাবে সংবিধান সংশোধনের প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য পার্লামেন্টে প্রস্তাব আনে সু চি’র দল। প্রস্তাবটি পার্লামেন্টে আলোচনার তীব্র বিরোধিতা করেন সামরিক আইনপ্রণেতারা। তাদের অভিযোগ, এই প্রস্তাব উত্থাপনের ক্ষেত্রে আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে।

সংবিধান সংশোধনে সু চি’র উদ্যোগের বিরোধিতায় সেনাবাহিনী

 

কথিত গণতান্ত্রিক উত্তোরণের নামে মিয়ানমারে আদতে জারি রয়েছে সেনাশাসন। ২০০৮ সালে সামরিক শাসনামলে প্রণীত সংবিধান অগণতান্ত্রিক হিসেবে সমালোচনার মুখে পড়েছে। সংবিধান অনুযায়ী দেশটির পার্লামেন্টের এক চতুর্থাংশ আসন সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে। এই সংবিধান সংশোধনের যে কোনও প্রস্তাব পার্লামেন্টে পাস হতে হলে কমপক্ষে ৭৫ শতাংশ এমপি'র সমর্থন লাগবে। স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা এবং সীমান্তসহ গুরুত্বপূর্ণ তিনটি মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ সেনাবাহিনীর হাতে। শক্তিশালী জাতীয় প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা পরিষদের ১১টি আসনের মধ্যে ছয়টি আসনেও রয়েছেন সেনাবাহিনী মনোনীত ব্যক্তিরা। গণতান্ত্রিক সরকার বাতিলের ক্ষমতা রয়েছে সেনা সংখ্যাগরিষ্ঠ এই পরিষদের।  এনএলডি’র অন্যতম নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি ছিল এই সংবিধান সংশোধন করা। কিন্তু  ক্ষমতা গ্রহণের প্রায় তিন বছর পার হয়ে গেলেও মঙ্গলবারের আগ পর্যন্ত সু চি’র দলের পক্ষ এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

প্রস্তাবটি আলোচনার জন্য ভোটাভুটিতে সামরিক আইনপ্রণেতাদের বিরোধিতার পরও পাস হয়েছে। ভোটাভুটিতে অধিবেশনে উপস্থিত ৬০১ জন এমপির মধ্যে পক্ষে ভোট দেন ৩৬৯ জন, বিপক্ষে ভোট দেন ১৭ জন। আর ভোটদানে বিরত থাকেন তিনজন। সেনা এমপিরা ভোটের প্রক্রিয়া বয়কট করেছেন। প্রস্তাবটি উত্থাপনের পরপরই তারা পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে নীরব থেকে প্রতিবাদ জানান। আগামী শুক্রবার প্রস্তাবটি নিয়ে পার্লামেন্টে আলোচনার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।

অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের সিনিয়র সেনা এমপি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাউং মাউং বলেন, আমরা এই বিষয়ে সেনাপ্রধানের অবস্থান এখনও জানি না। এই প্রক্রিয়াতে আমাদের অংশগ্রহণ থাকবে। আমরা ইতোমধ্যেই বলেছি যে এই প্রস্তাবকে আমরা সমর্থন করি না। তাই আমরা ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিলাম।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল দাবি করেন, প্রস্তাবটি আলোচনার জন্য অনুমোদন দেওয়াতে পার্লামেন্টের বিধি লঙ্ঘন করা হয়েছে। প্রস্তাবটি আলোচনার বিষয়ে ভোটাভুটির আগেই তিনি পার্লামেন্টে একই অভিযোগ করেছিলেন।

সংবিধান সংশোধন ইস্যুতে সেনাবাহিনী ও সু চি’র নেতৃত্বাধীন বেসামরিক সরকারের বিরোধ ২০১৫ সাল থেকেই চলছে। সাবেক সামরিক শাসক উ থেইন সেইন সংবিধান সংশোধনের জন্য প্রস্তাবনা তৈরি করেছিলেন। ২০১৩ সালের মাঝামাঝি এই প্রস্তাবনার বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিতে ১০৮ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি ২০১৪ সালের ৩১ জানুয়ারি পার্লামেন্টে তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে পার্লামেন্ট ৩১ সদস্যের সংবিধান সংশোধন বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করে। ওই সময় এনএলডি অনুচ্ছেদ ৫৯(এফ) সহ ১৬৮ টি ধারা সংশোধনের প্রস্তাব করে। ৫৯ (এফ) অনুচ্ছেদের কারণে সু চি দেশটির প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনীর প্রস্তাব ছিল মূলত সংবিধান সংশোধনী আনতে পার্লামেন্টের সদস্যদের ৭৫ শতাংশের পরিবর্তে ৭০ শতাংশের সমর্থন। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা সংশোধনের প্রস্তাব করা হয় যাতে সংবিধান সংশোধনে সেনাবাহিনীর ভেটো ক্ষমতা বাদ দেওয়ার।

২০১৫ সালের মাঝামাঝিতে এই প্রস্তাবটি পার্লামেন্টে আলোচিত হয়। কিন্তু সেনাবাহিনীর নিয়োগকৃত আইনপ্রণেতারা সবগুলো সংশোধন প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন।

ওই সময় সংবিধান সংশোধনে ব্যর্থ হলেও ২০১৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে এনএলডি। 

কয়েকজন আইনপ্রণেতা উদ্বেগ জানিয়ে বলেছেন, এই উদ্যোগের ফলে সেনাবাহিনী ও বেসামরিক সরকারের মধ্যে সংকট তৈরি হতে পারে। গত তিন বছর নানা চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে এই সম্পর্ক।

রাখাইন ন্যাশনাল পার্টির এমপি ইউ উ হ্লা সাউ বলেন, সংবিধান সংশোধনের বিষয়টি আগে রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে আলোচনা করা প্রয়োজন। দেশের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। এই প্রস্তাবের ফলে আমরা এনএলডি ও সেনাবাহিনীর মধ্যকার সত্যিকার সম্পর্কের আভাস পাব।

তবে এনএলডি সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী। এনএলডির এমপি উ হ্লা মোয়ে বলেন, আইন অনুসারেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। ৭৫ শতাংশের বেশি এমপিদের সমর্থন প্রয়োজন নেই আমাদের। ফলে এটা সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে সহজেই পাস হয়ে যাবে। সূত্র: মিয়ানমার টাইমস।

 

/এএ/
সম্পর্কিত
স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি পাট-বস্ত্র-সুতার পণ্য আমদানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞা
বিয়ের অনুষ্ঠানে ৪০ হাজার ডলার চুরি, এক বছরের কারাদণ্ড
রাতের কৃত্রিম আলো বিষণ্নতা বাড়ায়: চীনা গবেষণা
সর্বশেষ খবর
এনবিআরের আন্দোলন প্রত্যাহার
এনবিআরের আন্দোলন প্রত্যাহার
উইলিয়ামসের ১৩৭ রান ছাপিয়ে দ্বিতীয় দিনেও দক্ষিণ আফ্রিকার দাপট
উইলিয়ামসের ১৩৭ রান ছাপিয়ে দ্বিতীয় দিনেও দক্ষিণ আফ্রিকার দাপট
এনবিআরের চলমান অচলাবস্থা নিবিড় পর্যবেক্ষণ করছে আইএমএফ
এনবিআরের চলমান অচলাবস্থা নিবিড় পর্যবেক্ষণ করছে আইএমএফ
জামালপুরে ইউপি সদস্যকে হত্যা
জামালপুরে ইউপি সদস্যকে হত্যা
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি গাড়িতে দাওয়াতে গেলো ইউএনও’র পরিবার
সরকারি গাড়িতে দাওয়াতে গেলো ইউএনও’র পরিবার
‘সবাইকে ম্যানেজ করা আছে, দুদক কিংবা কেউ কিছুই করতে পারবে না’
মৃত ব্যক্তি ও প্রবাসীর নামে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ উপপরিচালকের‘সবাইকে ম্যানেজ করা আছে, দুদক কিংবা কেউ কিছুই করতে পারবে না’
মুরাদনগরে গলায় ছুরি ধরে নারীকে ধর্ষণ, থানায় মামলা
মুরাদনগরে গলায় ছুরি ধরে নারীকে ধর্ষণ, থানায় মামলা
খুলনা প্রেসক্লাবে কী ঘটেছে, জানালেন প্রেস সচিব
খুলনা প্রেসক্লাবে কী ঘটেছে, জানালেন প্রেস সচিব
ঘরে ঢুকে নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা, যুবককে পিটিয়ে হত্যা এলাকাবাসীর
ঘরে ঢুকে নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা, যুবককে পিটিয়ে হত্যা এলাকাবাসীর