দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ধনী নগররাষ্ট্র সিঙ্গাপুর। এক সময়ের ব্রিটিশ উপনিবেশের বাণিজ্যিক স্থান হিসেবে ব্যবহৃত দেশটি বর্তমানে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ‘হাব’-এ পরিণত হয়েছে। দেশটিকে এশীয় অর্থনীতির ‘বাঘ’ বলা হয়।
রক্ষণশীল নিয়ম ও কঠোর স্থানীয় আইনের জন্যও বিখ্যাত সিঙ্গাপুর। তবে নিজেদের স্থিতিশীল অবস্থা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় সুনাম কুঁড়িয়েছে। প্রায় ৭৫ শতাংশ বাসিন্দা চীনা বংশোদ্ভূত। বাকিরা মালয়েশিয়া ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত।
ধনী এই দেশটির অর্থনীতি বিদেশি শ্রমিকদের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। ২০৩০ সালের মধ্যে দেশটির বিদেশি বাসিন্দাদের সংখ্যা মূল জনগোষ্ঠীর অর্ধেক হবে, এমন ধারণা আগেই করেছিল সিঙ্গাপুর সরকার।
১৯৬৫ সালে মালয়েশিয়ার কাছ থেকে স্বাধীন হয় সিঙ্গাপুর। এরপর থেকেই রাজনীতিতে আধিপত্য বজায় রেখেছে পিপলস অ্যাকশন পার্টি। জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয়, অভিবাসন ও আয় বৈষম্য দেশটির জন্য এখন বড় একটা চ্যালেঞ্জ।
সিঙ্গাপুরের গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য
- রাষ্ট্রীয় নাম: রিপাবলিক অব সিঙ্গাপুর
- রাজধানী: সিঙ্গাপুর
- আয়তন: ৬৬০ বর্গ কিলোমিটার
- জনসংখ্যা: ৫৩ লাখ
- প্রধান ভাষা: ইংরেজি, মালয়, মান্দারিন ও তামিল
- প্রধান ধর্ম: তাওবাদ, বৌদ্ধ, ইসলাম, খ্রিষ্ট ও সনাতন ধর্ম।
- গড় আয়ু: পুরুষ ৭৯, নারী ৮৪ বছর
- মুদ্রা: সিঙ্গাপুরীয় ডলার
নেতৃত্ব
প্রেসিডেন্ট হালিমা ইয়াকুব
২০১৭ সালে সিঙ্গাপুরে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় আসেন হালিমা ইয়াকুব। সংখ্যালঘু মুসলিম মালয় গোষ্ঠীতে তার জন্ম। সিঙ্গাপুরের ইতিহাসে ৪৭ বছরে মুসলিম মালয় কমিউনিটি থেকে প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তিনি।
প্রেসিডেন্ট পদের জন্য বাকি দু’জন প্রার্থী যোগ্যতা না থাকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন হালিমা। চীনা জাতিগোষ্ঠীর বাইরে অন্য জাতি থেকেও প্রথম প্রেসিডেন্ট তিনি। তার আগে পার্লামেন্টের স্পিকার ছিলেন।
সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্ট কোনও রাজনৈতিক দল থেকে নয় বরং স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচিত হয়। প্রেসিডেন্টের পদটি মূলত আনুষ্ঠানিক।
প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং
২০০৪ সালের আগস্টে ক্ষমতায় আসেন লুং। সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠাতা লি কুয়ান ইউ এর বড় ছেলে তিনি।
সাবেক সেনা কর্মকর্তা লুং একজন গণিতবিদও ছিলেন। ১৯৮৪ সালে ৩২ বছর বয়সে পিতার পথ ধরে রাজনীতিতে আসেন তিনি। দেশটিতে একটি প্রতিযোগিতামূলক অর্থনীতি গড়ে তুলতে বিভিন্ন নীতি চালু করেন লুং। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী হিসেবে লুং শিক্ষা ব্যবস্থার মান উন্নয়নের জন্য নতুন কর্মসূচি প্রবর্তন, গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ করেন তিনি। একসময় ভাই বোনদের সঙ্গে প্রকাশ্যে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন তিনি।
সংবাদমাধ্যম
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মিডিয়া হাব হিসেবে, ইংরেজিভাষী দর্শকদের জন্য সিঙ্গাপুর একটি কৌশলগত কেন্দ্র।মিডিয়ার ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে দেশটির সরকারের। এছাড়া অনলাইন কন্টেন্টের ওপরও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
সিঙ্গাপুরের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটনা
১৮১৯: সিঙ্গাপুরকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ট্রেডিং পোস্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন স্যার থমাস স্ট্যামফোর্ড র্যাফেলস।
১৯৪২: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের অধীনে চলে যায় সিঙ্গাপুর। সে সময় জাপানি ভাষায় দ্বীপটির নামকরণ করা হয় সায়োনান-টু যার অর্থ দক্ষিণ দ্বীপের আলো।
১৯৪৫-৪৬: জাপানের অধীন থেকে বের হয়ে ব্রিটিশ উপনিবেশে পরিণত হয় জাপান।
১৯৫৯: সিঙ্গাপুরে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
১৯৬৩: ফেডারেশন অব মালয়, সাবাহ (উত্তর বোর্নিও) এবং মালয়েশিয়ার সারাওয়াক ফেডারেশনে যোগ দেয় সিঙ্গাপুর।
১৯৬৫: মালয়েশিয়া ফেডারেশন থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে সিঙ্গাপুর।
১৯৯০: সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠাতা প্রধানমন্ত্রী লি কুয়ান ইউ পদত্যাগ করেন।
১৯৯৩: প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সিঙ্গাপুরে।