ইয়াঙ্গুনে থাইল্যান্ডের দূতাবাসে সহস্রাধিক মানুষ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছিলেন। শুক্রবার তারা থাইল্যান্ড যেতে ভিসার জন্য দূতাবাসে এসেছেন। মিয়ানমার জান্তা যখন দেশটির সেনাবাহিনীতে যোগদান বাধ্যতামূলক করেছে তখন তরুণ বয়সীরা দেশটি ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে চাইছে।
গত সপ্তাহে সেনাবাহিনী বলেছে, তারা সশস্ত্র বাহিনীতে যোগদানের বাধ্যতামূলক আইনটি কার্যকর করবে। এই আইনে ১৮-৩৫ বছর বয়সী পুরুষ ও ১৮-২৭ বছর বয়সী নারীদের জন্য অন্তত দুই বছর সেনাবাহিনীতে যোগদান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ২০২১ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর গত বছরের শেষ দিক থেকে সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সমন্বিত হামলা মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে জান্তা।
গত শনিবার সামরিক সরকারের ঘোষণার পর থেকে তরুণ-তরুণীরা মিয়ানমার ছাড়তে চাইছেন। ইয়াঙ্গুনের থাই দূতাবাসে লাইন ধরে দাঁড়ানো তরুণ-তরুণীরা ভিসা পেতে চাইছেন।
শুক্রবার ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি’র এক সাংবাদিক বলেছেন, ১ হাজার থেকে ২ হাজার মানুষ দূতাবাসের কাছাকাছি অবস্থান করছিলেন। অথচ শনিবারের ঘোষণার আগে এই সংখ্যা ১০০ জনের কম থাকতো।
দূতাবাস জানিয়েছে, চাপ সামলাতে প্রতিদিন ৪০০ নম্বরযুক্ত টিকিট দেওয়া হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় দূতাবাসটিতে এসেছেন ২০ বছর বয়সী শিক্ষার্থী অং ফাইয়ো। মধ্যরাতে লাইনে দাঁড়ানো শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত একটি প্রাইভেটকারে ঘুমিয়ে ছিলেন তিনি।
এএফপিকে তিনি বলেছেন, আমাদের তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে। ভোর ৩টার দিকে নিরাপত্তাকর্মীরা গেট খুলে দেয়। টোকেন পেতে আমাদের দৌড়ে দূতাবাসের সামনে যেতে হয়েছে।
নিরাপত্তার আশঙ্কায় ছদ্মনাম ব্যবহার ফাইয়ো বলেছেন, আমরা টোকেন পাওয়ার পেলেও অনেক মানুষ দূতাবাসের সামনে রয়েছেন। তারা আশা করছেন যদি অতিরিক্ত টোকেন দেওয়া হয় তাহলে হয়ত তারা পেতে পারেন।
সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলক যোগদানের আইনটি ২০১০ সালে আগের জান্তা প্রণয়ন করেছিল। কিন্তু এখন কীভাবে তা বাস্তবায়ন করা হবে তা স্পষ্ট নয়। আইনটি কার্যকরের ঘোষণায় বিস্তারিত জানানো হয়নি। কাদেরকে নিয়োগ দেওয়া হবে তাও নির্দিষ্টভাবে বলা হয়নি। কিন্তু তরুণরা অপেক্ষা ও তা জানতে আগ্রহী নয়।
অং ফাইয়ো বলেন, আমি পর্যটক ভিসায় ব্যাংকক যেতে চাই। আশা করছি সেখানে কিছু দিন অবস্থান করতে পার। কাজ করব নাকি পড়াশোনা চালিয়ে যাব, তা সম্পর্কে এখনও সিদ্ধান্ত নেইনি। আমি শুধু দেশ থেকে পালাতে চাইছি।
জান্তা বলেছে, সামরিক সরকারপন্থি মিলিশিয়াদের শক্তিশালী করতে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে জান্তাবিরোধী পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস ও কয়েকটি জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে সেনাবাহিনী সংঘাতে লিপ্ত রয়েছে।
জান্তা মুখপাত্র ঝাও মিন তুন শনিবার বলেছিলেন, সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলক যোগদানের আইনটি প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে দেশের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ক্ষমতা দখলের পর ভিন্নমতধারীদের ওপর সামরিক সরকারের দমনপীড়নে সাড়ে চার হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। গ্রেফতার করা হয়েছে ২৬ হাজারের বেশি মানুষকে।
সূত্র: এএফপি