X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

এমএইচ ৩৭০ নিখোঁজের দশ বছর, কী ঘটেছিল সেদিন?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
০৮ মার্চ ২০২৪, ১৮:৩৮আপডেট : ০৮ মার্চ ২০২৪, ১৯:২০

এক দশক আগে আজকের এই দিনে ২৩৯ যাত্রী নিয়ে নিখোঁজ হয়েছিল মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট এমএইচ ৩৭০, যা বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমান দুর্ঘটনা হিসেবে পরিচিত। আশ্চর্যের ব্যাপার, দুটি বড় অনুসন্ধান অভিযান চালানোর পরও উল্লেখযোগ্য কোনও ফলাফল আসেনি। জানা যায়নি বিমানটির সঙ্গে ঠিক কী ঘটেছিল। রহস্যময় এই ঘটনাটি জন্ম দিয়েছিল অনেক জল্পনা কল্পনার। এমএইচ ৩৭০-এর অনুসন্ধান এবং সেদিন ঠিক কী ঘটেছিল তার অমীমাংসিত রহস্য নিয়ে শুক্রবার (৮ মার্চ) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স। ওই প্রতিবেদনের আলোকে এমএইচ ৩৭০ সম্পর্কে চলুন জেনে নেওয়া যাক।

২০১৪ সালের ৮ মার্চ। বোয়িং ৭৭৭ বিমানটি মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিংয়ের উদ্দেশে উড্ডয়ন করার প্রায় ৪০ মিনিট পর নিখোঁজ হয়।

স্যাটেলাইট ডেটা বিশ্লেষণ থেকে অনুমান করা হয়, বিমানটি সম্ভবত পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার উপকূলে দক্ষিণ ভারত মহাসাগরের কোথাও বিধ্বস্ত হয়েছে।

কী ঘটেছিল সেদিন?

ফ্লাইটটি ভিয়েতনামের আকাশসীমায় প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ক্যাপ্টেন জাহারি আহমদ শাহ বলেছিলেন, ‘শুভ রাত্রি, মালয়েশিয়ান তিন সাত শূন্য’।

এর কিছুক্ষণ পরই বিমানটির ট্রান্সপন্ডার বন্ধ হয়ে যায়। যার মানে বিমানটির গতিবিধি এখন আর সহজে ট্র্যাক করা যাবে না।

সামরিক রাডারে দেখা যায়, বিমানটি নিজ রুট থেকে সরে উত্তর মালয়েশিয়া এবং পেনাং দ্বীপের উপর দিয়ে উড়ে আন্দামান সাগরে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপের অগ্রভাগে চলে গেছে। এরপর সেটি দক্ষিণে শনাক্ত করার পরই সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

পানির নিচে অনুসন্ধান

একটি ইনমারস্যাট উপগ্রহ এবং বিমানের মধ্যে স্বয়ংক্রিয় সংযোগের তথ্যের ভিত্তিতে দক্ষিণ ভারত মহাসাগরে এক লাখ ২০ হাজার বর্গ কিলোমিটার (৪৬ হাজার ৩৩২ বর্গ মাইল) এলাকায় একটি ডুবো অনুসন্ধান শুরু করেছিল মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও চীন ।

এই অনুসন্ধান পরিচালনায় প্রায় ১৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার ব্যয় হয়েছিল। টানা দুই বছর অনুসন্ধান অভিযান পরিচালনা করার পরও বিমানের কোনও চিহ্নও খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ ব্যর্থতার পর ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে অনুসন্ধান অভিযান বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এরপর ২০১৮ সালে মার্কিন অনুসন্ধান সংস্থা ওশান ইনফিনিটি মালয়েশিয়াকে ‘নো-কিউর, নো-ফি’ নামে তিন মাসের একটি অনুসন্ধান অভিযানের প্রস্তাব দেয়। এর মানে, বিমানটি খুঁজে পেলেই কেবল মালয়েশিয়ার কাছ থেকে অর্থ গ্রহণ করবে কোম্পানিটি। তাদের এই প্রস্তাব গ্রহণ করেছিল মালয়েশিয়া। মোট এক লাখ ১২ হাজার বর্গ কিলোমিটার (৪৩ হাজার ২৪৩ বর্গ মাইল) এলাকায় অনুসন্ধান চালিয়েছিল কোম্পানিটি। তাদের এই ব্যর্থ অভিযান ২০১৮ সালের মে মাসে বন্ধ করা হয়েছিল।

কোনও ধ্বংসাবশেষ কি পাওয়া গেছে?

আফ্রিকার উপকূল বরাবর এবং ভারত মহাসাগরের দ্বীপগুলোতে ৩০টিরও বেশি সন্দেহভাজন বিমানের ধ্বংসাবশেষ সংগ্রহ করা হয়েছিল। এর মধ্যে শুধু তিনটি ছিল এমএইচ ৩৭০ বিমানের ডানার টুকরো। বিমানের সম্ভাব্য অবস্থানের দূরত্ব কমিয়ে আনার লক্ষ্যে বেশিরভাগ ধ্বংসাবশেষই ড্রিফ্ট প্যাটার্ন বিশ্লেষণে ব্যবহৃত হয়েছিল।

অনুসন্ধান বিষয়ক গ্রাফিক্স: রয়টার্স

তদন্ত প্রতিবেদন

এমএইচ ৩৭০ নিখোঁজ হওয়া নিয়ে ২০১৮ সালের জুলাইয়ে ৪৯৫ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিল। এতে বলা হয়, সম্ভবত বোয়িং ৭৭৭-এর নিয়ন্ত্রণ সরিয়ে নেওয়ার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে কারসাজি করা হয়েছিল। তবে এমনটি হয়ে থাকলে এর পেছনে কে দায়ী সে সম্পর্কে কিছু নির্ধারণ করতে পারেনি তদন্তকারীরা।

প্রতিবেদনে কুয়ালালামপুর এবং হো চি মিন সিটি এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল সেন্টারের ভুলগুলোও তুলে ধরা হয়েছিল। একইসঙ্গে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতে সুপারিশ জারি করা হয়।

তদন্তকারীরা এমএইচ ৩৭০-এর সঙ্গে কী ঘটেছে সে সম্পর্কে কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি। তারা বলেছিলেন, এ বিষয়টি বিমানের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়ার ওপর নির্ভর করছে।

কনসপাইরেসি থিওরি

এমএইচ ৩৭০-এর ক্র্যাশ সাইট শনাক্ত করতে না পারায় এ নিয়ে অসংখ্য কনসপাইরেসি থিওরির জন্ম হয়েছিল। তখন যান্ত্রিক ত্রুটি অথবা রিমোট-নিয়ন্ত্রিত ক্র্যাশ থেকে শুরু করে এলিয়েন অপহরণ এবং একটি রাশিয়ান চক্রান্তের পর্যন্ত অসংখ্য উদ্ভট উদ্ভট ব্যাখ্যার কথা শোনা যায়।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিছু এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, সম্ভবত একটি অভিজ্ঞ পাইলট বিমানটি ইচ্ছাকৃতভাবে গায়েব করে দিয়েছিল।

তদন্তকারীরা অবশ্য বলেছেন, ক্যাপ্টেন এবং কো-পাইলট উভয়ের অতীত ইতিহাস, আর্থিক বিষয়, প্রশিক্ষণ এবং মানসিক স্বাস্থ্যের মতো বিষয়গুলোতে সন্দেহজনক কিছু ছিল না।

একটি নতুন অনুসন্ধান কি হবে?

চলতি সপ্তাহে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বলেছেন, প্রয়োজন হলে এমএইচ ৩৭০ নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে আবারও তদন্ত শুরু করতে ইচ্ছুক সরকার।

পরিবহনমন্ত্রী অ্যান্টনি লোক বলেছেন, একটি নতুন অনুসন্ধান প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার জন্য ওশান ইনফিনিটিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। লোক আরও জানান, ওশান ইনফিনিটির প্রস্তাবটি মালয়েশিয়ার মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হলেই আবারও অনুসন্ধান শুরুর বিষয়ে সহযোগিতা চেয়ে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে কথা বলবে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ।

/এএকে/এমওএফ/
সম্পর্কিত
তাইওয়ানের কাছে আবারও সামরিক কার্যকলাপ চালালো চীন
লোহিত সাগরে আরেক তেলবাহী জাহাজে হুথিদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ২
সর্বশেষ খবর
ইট-পাথরের নগরীতে একটুখানি প্রশান্তির খোঁজে
ইট-পাথরের নগরীতে একটুখানি প্রশান্তির খোঁজে
তাইওয়ানের কাছে আবারও সামরিক কার্যকলাপ চালালো চীন
তাইওয়ানের কাছে আবারও সামরিক কার্যকলাপ চালালো চীন
বাগেরহাটে ট্রাকচাপায় দুই ভাইসহ ৩ ভ্যানযাত্রী নিহত
বাগেরহাটে ট্রাকচাপায় দুই ভাইসহ ৩ ভ্যানযাত্রী নিহত
শিল্পীদের সমস্যাগুলো সংসদে চিহ্নিত করতে চাই: ফেরদৌস
শিল্পীদের সমস্যাগুলো সংসদে চিহ্নিত করতে চাই: ফেরদৌস
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!