X
শনিবার, ০৩ মে ২০২৫
২০ বৈশাখ ১৪৩২

সৌরবিদ্যুতে চীনের দুই মুকুট

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১৯:১১আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ২৩:০৭

সূর্যের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে শতভাগ পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ তৈরিতে বিশ্বে এখন অগ্রপথিকের ভূমিকা পালন করছে চীন। এ খাতে অভিনব প্রযুক্তির বিকাশ ঘটাতেও সচেষ্ট দেশটি। এরই ধারাবাহিকতায় হলুদ সাগরে স্থাপন করা হয়েছে একটি ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ তৈরির অভিনব প্লাটফর্ম। অন্যদিকে ছিংহাইয়ের ৬০৯ বর্গ কিলোমিটারজুড়ে স্থাপন করা সোলার প্যানেলগুলো স্থানীয় অর্থনীতিতে এনে দিয়েছে দারুণ গতি।

ইয়েলো সাগরে চীনের শানতোং উপসাগরীয় অঞ্চলে তৈরি হচ্ছে একটি ভিন্নধর্মী সোলার প্যানেল। সাগরে ভাসমান সোলার প্লাটফর্মটিকে বলা হচ্ছে ঢেউ প্রতিরোধী। অর্থাৎ সমুদ্রের ঢেউয়ের মাঝেও বিদ্যুৎ উৎপাদনে কোনো বাধার মুখে পড়বে না এটি।

৪৩৪টি ফটোভোলটাইক প্যানেল সমৃদ্ধ ইয়েলো সি নম্বর ১ নামের প্লাটফর্মটির নির্মাণকাজ এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। অচিরেই এটি এক বছরের জন্য পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু করবে। মূলত সাগরের বিভিন্ন পরিস্থিতিতে কোন ধরনের প্যানেল কী পরিমাণ বিদ্যুৎ তৈরি করতে পারবে সেটারই পরীক্ষা করা হবে প্লাটফর্মটিতে।

ছবি: সিএমজি

ভাসমান প্লাটফর্মটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সাড়ে ৭ মিটার উঁচুতে। নিচে অনেকগুলো বয়ার মাধ্যমে ভেসে থাকছে এটি। সমুদ্রের ঢেউ ও পানির স্রোত অনায়াসে চলে যেতে পারবে এর তলা দিয়ে।

ইয়েলো সি নম্বর ১ প্রকল্পের প্রকৌশলী বি চেং জানালেন, ‘ঢেউয়ের পানি যদি ফটোভোলটাইক প্যানেলে লাগে, তবে লবণের স্ফটিক তৈরি হবে এবং এতে করে প্যানেল ও অন্যান্য সরঞ্জামের ক্ষতি হবে। তাই পুরো প্ল্যাটফর্মটিকে সমুদ্রের উপরে এমন এক স্তরে স্থাপন করা হয়েছে যাতে আগামী ৫০ বছরে সমুদ্রের পরিস্থিতি যেমনই হোক, সাগরের পানি প্যানেলের সংস্পর্শে আসবে না।’

ভাসমান প্লাটফর্মটি যেখানে স্থাপন করা হয়েছে, সেখানে পানির গভীরতা ৩০ মিটারেরও বেশি। তাই উত্তাল সাগরের সঙ্গে মোকাবিলা করতে প্লাটফর্মের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া আছে ৬টি নোঙর। এগুলোর প্রতিটির ওজন ৫৫ টন। ২৫৬ মিটার জুড়ে ছড়ানো এই নোঙরগুলোর কারণে প্লাটফর্মটি সমুদ্রতলে বেশ শক্তপোক্তভাবেই বসে থাকবে।

ছবি: সিএমজি

প্রকল্প দলটি এ প্লাটফর্ম থেকে অন্তত এক বছর তথ্য সংগ্রহ করবে। ভবিষ্যতে, এমন অনেকগুলো প্ল্যাটফর্ম আলাদা করে তৈরি করে সমুদ্রের ওপর একসঙ্গে বসানো হবে। এতে করে সমুদ্রও হয়ে উঠবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের অফুরন্ত ভান্ডার।

অন্যদিকে, অনাবাদি পতিত জমি ফেলে রাখা হচ্ছে না চীনে। ছিংহাই প্রদেশে আছে এমন এক সুবিশাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, যা কিনা আয়তনের বিচারে বাংলাদেশের রাজধানীর ঢাকার দ্বিগুণ। ৬০৯ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে ছড়ানো ছিংহাই তালাতান ফটোভোলটাইক পাওয়ার স্টেশনটির কারণে বদলে গেছে আশপাশের বাস্তুতন্ত্র ও অর্থনীতি। এখানকার সৌর প্যানেলগুলো থেকে তৈরি হচ্ছে মোট ৮৪৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।

কুয়োনেং নিউ এনার্জি ডেভেলপমেন্ট-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিয়াও হংফেই জানালেন, ‘আমরা হেলিওস্ট্যাট ইনস্টল করছি। প্রতিটি হেলিওস্ট্যাট স্বয়ংক্রিয়ভাবে সূর্যের আলোকে দূরবর্তী তাপ শোষণ পর্দায় প্রতিফলিত করবে। সূর্যমুখীর মতো সূর্যের কৌণিক অবস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এগুলো দিক বদলায়।’

ছবি: সিএমজি

বিশেষজ্ঞরা জানালেন, এখানে ২৩ হাজারটিরও বেশি হেলিওস্ট্যাট ইনস্টল করা হবে, যার ফলে ৭ লাখ বর্গ মিটার এলাকাজুড়ে পড়া সূর্যালোকের তাপ প্রতিফলিত হবে কেন্দ্রে থাকা তাপ শোষণ টাওয়ারে। এই ঘনীভূত আলোয় যে তাপ তৈরি হবে তা ৫০০ থেকে ৬০০ ডিগ্রি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। এই সংগৃহীত তাপশক্তি থেকেই ঘুরবে টারবাইন, তৈরি হবে বিদ্যুৎ।

এই তাপ রাতে ও মেঘাচ্ছন্ন দিনে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হবে। এই তাপ সংরক্ষণের জন্য তৈরি থার্মাল স্টোরেজ ট্যাঙ্কে আছে ২৯ হাজার টন গলিত লবণ, যা উত্তপ্ত হওয়ার পর ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত একটানা বিদ্যুৎ উৎপাদন করে যেতে পারে।

ছিয়াও হংফেই আরও জানালেন, ‘এটি ক্রমাগত রাতে বা মেঘলা দিনে সঞ্চিত তাপ ছেড়ে দিতে পারে। এতে করে ইউনিটটি নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ তৈরি করবে এবং ফটোভোলটাইক সিস্টেমের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠবে।’

পুরো বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি আগামী বছর চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ১০ বছর আগেও তালাতান ছিল অনুর্বর পতিত ভূমি। মোট এলাকার ৯৮ ভাগই ছিল মরু। এখানকার বালিঝড়ের কারণে এলাকা ছাড়তে হয়েছিল অনেক বাসিন্দাকে। ফটোভোলটাইক পাওয়ার স্টেশন তৈরি হওয়ার পর থেকে এই এলাকায় বাতাসের গড় গতি ৫০ ভাগ কমেছে এবং সবুজ তৃণভূমি তৈরি হয়েছে ৮০ ভাগ এলাকাজুড়ে। সোলার বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারণে ছিংহাইয়ের এই অঞ্চলে এখন ভেড়ার পালও দেখা যায়। এতে করে বেড়েছে স্থানীয়দের আয় ও জীবনযাত্রার মান।

সূত্র: সিএমজি

/এএ/
সম্পর্কিত
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের কোনও ইঙ্গিত নেই: যুক্তরাষ্ট্র
চিলির উপকূলে ৭.৪ মাত্রার ভূমিকম্প, সুনামি সতর্কতা
বাংলাদেশ সব বকেয়া পরিশোধ করবে, আশাবাদী আদানি পাওয়ার
সর্বশেষ খবর
হাওরে ধানের বাম্পার ফলন হলেও দাম নিয়ে হতাশ কৃষক
হাওরে ধানের বাম্পার ফলন হলেও দাম নিয়ে হতাশ কৃষক
টিভিতে আজকের খেলা (৩ মে, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (৩ মে, ২০২৫)
‘নারী সংস্কার কমিশনের প্রতি ঘৃণা উসকে দেওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন’
‘নারী সংস্কার কমিশনের প্রতি ঘৃণা উসকে দেওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন’
ডি ব্রুইনার গোলে তিনে ম্যানসিটি
ডি ব্রুইনার গোলে তিনে ম্যানসিটি
সর্বাধিক পঠিত
সাবেক এমপি ও বিএনপি নেতার ওপর দিনে সশস্ত্র হামলা, রাতে বাড়িতে আগুন
সাবেক এমপি ও বিএনপি নেতার ওপর দিনে সশস্ত্র হামলা, রাতে বাড়িতে আগুন
কেন আবারও আন্দোলনে যাচ্ছেন সহকারী প্রাথমিক শিক্ষকরা?
কেন আবারও আন্দোলনে যাচ্ছেন সহকারী প্রাথমিক শিক্ষকরা?
আগে রওনা দিয়েও এড়ানো গেলো না ‘নোটাম’, শাহজালালের ফ্লাইট গেলো ওসমানীতে
আগে রওনা দিয়েও এড়ানো গেলো না ‘নোটাম’, শাহজালালের ফ্লাইট গেলো ওসমানীতে
দুই বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ, প্রতিবাদে দুই ভারতীয় আটক
দুই বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ, প্রতিবাদে দুই ভারতীয় আটক
‘স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় ফার্মাসিস্ট যুক্ত করার কথা ভাবছে সরকার’
‘স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় ফার্মাসিস্ট যুক্ত করার কথা ভাবছে সরকার’