দেশের বিরোধীদের মুখে ঝামা ঘষে দিয়ে নরেন্দ্র মোদির জমানায় ভারতে কমছে বেকারত্বের হার। এমনটিই জানালো তেল রফতানিকারক দেশগুলোর জোট অর্গানাইজেশন অব দ্য পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজ (ওপেক)। চলতি বছরের পরিসংখ্যান বলছে, একধাক্কায় ভারতে অনেকটাই কমে গেছে বেকারত্বের হার। শুধু তাই নয়, দেশের আর্থিক উন্নয়নের সূচকও ফের ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বলে সাফ জানিয়েছে ওপেক।
ওপেক জানিয়েছে, চলতি বছরে বেকারত্বের হার কমার এই পরিসংখ্যান বেশ চমকপ্রদ। চলতি বছরের আগস্টে দেশে বেকারত্বের হার ছিল ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ। সেটাই একধাক্কায় সেপ্টেম্বরে কমে হয়েছে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। আবার নির্বাচনের জন্য ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে ভারতে আর্থিক উন্নয়নের সূচক কিছুটা পড়লেও তা ফের ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বলে দাবি ওপেকের। তারা বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধি কিছুটা কমেছে। গত অর্থবর্ষের তুলনায় এবার দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে আর্থিক বৃদ্ধি ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। সেখানে প্রথম ত্রৈমাসিকে আর্থিক বৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। মূলত নির্বাচনের জন্য আর্থিক বৃদ্ধির সূচক নিম্নমুখী হয়েছে। নির্বাচনের জন্য বিভিন্ন খাতে সরকারি বরাদ্দ করা যায়নি।
আবার পরিষেবা সেক্টরে ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধি ঘটেছে। ২০২১ সাল থেকে ভারতীয় অর্থনীতিতে গড়ে ৫৪ শতাংশ অবদান পরিষেবা খাতের। চলতি অর্থবর্ষের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে গত অর্থবর্ষের তুলনায় ৭ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে। প্রথম ত্রৈমাসিকে যা ছিল ৬ দশমিক ৭ শতাংশ।
কর্মসংস্থানের পক্ষে এই পরিস্থিতিকে আশাপ্রদ বলেই বলছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। ওপেকে বলছে, ভারতের আর্থিক বৃদ্ধি দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে কমলেও ধীরে ধীরে তা ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। এই অর্থবর্ষের বাকি ৬ মাসেও তা বজায় থাকবে। ২০২৪ সালে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হার হতে পারে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ।
পাশাপাশি গত জুলাই মাসে ভারতের বেকারত্বের হার ১ দশমিক ৩ শতাংশ পয়েন্ট কমেছে, যা আগের মাসে ৯ শতাংশের ওপরে ওঠে আট মাসের সর্বোচ্চ হয়েছিল। কনজিউমার পিরামিড হাউসহোল্ড-এর সমীক্ষা অনুযায়ী, বেকারত্বের হার জুনের ৯ দশমিক ২ শতাংশ থেকে কমে জুলাই মাসে ৭ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে এসেছে । পাশাপাশি, সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি পরিচালিত এ সংক্রান্ত সমীক্ষাটি ১ লাখ ৭৮ হাজার পরিবারের থেকে নেওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রকাশিত হয়েছে । উভয় ক্ষেত্রেই দেশে বেকারত্বের হারে পতনের জন্য বিশেষজ্ঞরা জুন মাসজুড়ে চলা ব্যাপক নিয়োগের প্রভাবকে উল্লেখ করেছেন। সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি-র দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জুন মাসে দেশের মোট বেকার নাগরিকের সংখ্যা ছিল ৪ কোটি ১৪ লাখ। জুলাইতে এই সংখ্যাটা কমে ৩ কোটি ৫৪ লাখে নেমে এসেছে।
পরিসংখ্যান বলছে, জুন মাসে শহরাঞ্চলের বেকারত্বের হার ছিল ৮ দশমিক ৮ শতাংশ এবং গ্রামীণ এলাকায় এই হার ৯ দশমিক ৩ শতাংশ ছিল। জুলাই মাসে দেশজুড়ে চলা ব্যাপক নিয়োগের জেরে বেড়েছে কর্মসংস্থান। ফলে ১ দশমিক ৩ শতাংশ কমেছে বেকারত্বের হার। জুলাই মাসে শহরাঞ্চলের বেকারত্বের হার ছিল ৮ দশমিক ৫ শতাংশ এবং গ্রামীণ এলাকায় এই হার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ছিল। অর্থাৎ, এই সময়ে শহরাঞ্চলে বেকারত্বের হার শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ কমেছে এবং গ্রামীণ এলাকায় বেকারত্বের হার ১ দশমিক ৮ শতাংশ কমেছে। সুতরাং, পরিসংখ্যান অনুযায়ী জুলাই মাসে দেশের গ্রামীণ এলাকায় কর্মসংস্থানের হার শহরাঞ্চলের তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে।
২২ জুলাই কেন্দ্রীয় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, দেশের বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি লাক্ষাদ্বীপে (১১ দশমিক ১ শতাংশ) এবং সবচেয়ে কম ত্রিপুরায় (১ দশমিক ৪ শতাংশ)। কর্মসংস্থানের নিরিখে প্রতিবেশী রাজ্যের থেকে খুব বেশি পিছিয়ে নেই পশ্চিমবঙ্গ। পশ্চিমবঙ্গে বেকারত্বের হার ২ দশমিক ২ শতাংশ। কেন্দ্রীয় মন্ত্রণালয়ের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিম কর্মসংস্থানের নিরিখে তালিকার পঞ্চম স্থানে রয়েছে। কর্মসংস্থান অনুযায়ী এই তালিকার প্রথম পাঁচে রয়েছে ত্রিপুরা (প্রথম স্থানে, বেকারত্বের হার ১ দশমিক ৪ শতাংশ), দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মধ্যপ্রদেশ (১ দশমিক ৬ শতাংশ), আসাম, গুজরাট ও ঝাড়খণ্ড রয়েছে তৃতীয় স্থানে (১ দশমিক ৭ শতাংশ), চতুর্থ স্থানে দিল্লি (১ দশমিক ৯ শতাংশ) এবং পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে পঞ্চম স্থানে (বেকারত্বের হার ২ দশমিক ২ শতাংশ)।
সর্বশেষ পাওয়া বার্ষিক পর্যায়ক্রমিক শ্রম শক্তি সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২০-২১, ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ সালে ১৫ বছর বা এর বেশি বয়সের ব্যক্তিদের স্বাভাবিক অবস্থার আনুমানিক বেকারত্বের হার ছিল যথাক্রমে ৪ দশমিক ২ শতাংশ, ৪ দশমিক ১ শতাংশ ও ৩ দশমিক ২ শতাংশ। এই তথ্য অনুযায়ী, দেশে বেকারত্বের হার ক্রমশ কমছে।
ইনস্টিটিউট ফর হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট এবং ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন (আইএলও)-এর যৌথভাবে তৈরি করা ইন্ডিয়া এমপ্লয়মেন্ট রিপোর্ট ২০২৪ অনুযায়ী, ভারতের কর্মক্ষম জনসংখ্যা ২০১১ সালের ৬১ শতাংশ থেকে ২০২১ সালে ৬৪ শতাংশ হয়েছে। অর্থাৎ, এই ১০ বছরে দেশের কর্মক্ষম জনসংখ্যা ৩ শতাংশ বেড়েছে এবং ২০৩৬ সালে এটি ৬৫ শতাংশে পৌঁছবে বলে অনুমান করা হয়েছে। যদিও, এর প্রভাব এখনও পড়েনি ভারতীয় শেয়ার বাজারে। নিফটি, সেনসেক্স সবই নিচের দিকে রয়েছে। নিফটি ১০০-র সিংহভাগ স্টক নিচের দিকে। তবে আর কিছু দিন পর থেকেই স্টকের রেজাল্ট আসতে শুরু করবে। মনে করা হচ্ছে, ত্রৈমাসিক ফলাফলের পরই পরিষ্কার হবে বাজারের ধারণা।