বাংলাদেশের রংপুরের লালমনিরহাটে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন পরিত্যক্ত একটি বিমানঘাঁটি চীনের সহায়তায় পুনরায় চালুর সম্ভাব্য উদ্যোগ ভারতে প্রশাসনে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ভারত মনে করছে, এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে সীমান্তের একেবারে কাছে চীনা সামরিক উপস্থিতির আশঙ্কা তৈরি হবে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এ খবর জানিয়েছে।
ভারতের আশঙ্কা, চীন এই প্রকল্পে অর্থায়ন করলে যুদ্ধবিমান, রাডার, নজরদারি সরঞ্জামসহ সামরিক অবকাঠামো লালমনিরহাটে স্থাপন করতে পারে। ঘাঁটি থেকে ভারতের শিলিগুড়ি করিডোরের দূরত্ব মাত্র ২০ কিলোমিটার—যার মাধ্যমে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্য মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত।
এনডিটিভি লিখেছে, এই ‘চিকেনস নেক’ করিডোর ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং কৌশলগত দিক থেকে স্পর্শকাতর। এর আশপাশে চীনের যেকোনও ধরনের সামরিক পদচারণা দিল্লির জন্য সরাসরি হুমকি হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
এই প্রেক্ষাপটে ভারত উত্তর ত্রিপুরার কৈলাশহরে তিন দশক ধরে বন্ধ থাকা একটি বিমানবন্দর পুনরুজ্জীবনের উদ্যোগ নিয়েছে। বিমানবন্দরটি মূলত বেসামরিক বিমান চলাচলের জন্য ব্যবহৃত হলেও এতে এমন অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে, যাতে জরুরি প্রয়োজনে বা যুদ্ধাবস্থায় ভারতীয় বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান উঠানামা করতে পারে।
তবে কৌশলগত দৃষ্টিকোণ ছাড়াও এটি রাজনৈতিক বার্তা দিতেও ব্যবহার করা হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে যে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে, এই পদক্ষেপ তারই প্রতিক্রিয়া বলে এনডিটিভির খবরে উল্লেখ করা হয়েছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমটি লিখেছে, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে ছাত্রদের নেতৃত্বে কোটা-বিরোধী আন্দোলনের জেরে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন। তার পরিবর্তে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। তবে এখনও নির্বাচন ঘোষিত না হওয়া এবং চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে ঢাকার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ দিল্লিকে নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে।
এই পরিস্থিতিতে সীমান্তের একেবারে কাছে চীনের সহায়তায় বাংলাদেশে সামরিক বিমানঘাঁটি পুনরায় চালু হলে তা ভারতের নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
কৈলাশহর বিমানবন্দরটি ১৯৯০-এর দশকে বন্ধ হয়ে যায়। তবে এর আগে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বিমানঘাঁটি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল এটি। এখান থেকেই বাংলাদেশের প্রথম আকাশ হামলা ইউনিট ‘কিলো ফ্লাইট’-এর অভিযান শুরু হয়। এই ইউনিটের কার্যক্রম ভারতীয় বিমানবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হতো।
তৎকালীন কিলো ফ্লাইট ইউনিটে ছিল কানাডীয় ডিএইচসি-৩ ওটার বিমান, ফরাসি আলুয়েট-২ হেলিকপ্টার এবং যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ডিসি-৩ ডাকোটা। পরে এই কিলো ফ্লাইট ইউনিটই ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের বিমানবাহিনীর ভিত্তি।
ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলার বাইরে ত্রিপুরায় কোনও কার্যকর বিমানবন্দর নেই। এ অবস্থায় কৈলাশহর বিমানবন্দর পুনরুজ্জীবনের উদ্যোগটি রাজ্যের আকাশপথে সংযোগ বৃদ্ধির দিকেও একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
২৬ মে ভারতের বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল এই বিমানবন্দর ও আশপাশের এলাকা পরিদর্শন করে। প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রাজ্য সরকারের সঙ্গে পরামর্শক্রমে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।