বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ভারতকে ‘প্রভাব বিস্তারকারী শক্তি’ হিসেবে দায়ী করার বিষয়ে নয়া দিল্লি বলেছে, এটি বাংলাদেশ সরকারের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং এ ধরনের দায় চাপানো সমস্যার সমাধান না করে বরং দায়িত্ব এড়ানোর নামান্তর। বৃহস্পতিবার (২৯ মে) নয়াদিল্লিতে সাপ্তাহিক প্রেস ব্রিফিংয়ে একাধিক সাংবাদিকের বাংলাদেশ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেছেন ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল। ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন মুখপাত্র।
ড. ইউনূসের পদত্যাগ ইস্যু
বিজনেস ইন্ডিয়ার সাংবাদিক ইয়েশি সেলি প্রশ্ন করেন, বাংলাদেশের চলমান অনিশ্চয়তা ও অস্থিতিশীলতা নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠকে ড. ইউনূসের পদত্যাগের আলোচনা হয়েছে। এটি কি উদ্বেগের (ভারতের) বিষয়?
জবাবে জয়সওয়াল বলেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট। আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে একটি ইতিবাচক ও গঠনমূলক সম্পর্ক চাই, যা উভয় দেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও স্বার্থ পূরণে ভিত্তি করে গড়ে উঠবে।
উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতি
ব্রিফিংয়ে ইন্ডিয়া টিভির সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, তিন দিন আগে এক বৈঠকে তারা একটি বিবৃতি দিয়েছিল যে বাংলাদেশের সংকট ভারতের আধিপত্যের কারণে। সেখানকার রাজনীতিবিদরাও নিশ্চিত করেছেন যে বৈঠকে আসলেই এমন বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। ভারত এটি কীভাবে দেখছে?
এই প্রশ্নের জবাবে জয়সওয়াল বলেন, বাংলাদেশ সরকারের জন্য এটি তাদের নিজস্ব দায়িত্ব যে তারা তাদের সরকার বা শাসন সংক্রান্ত যে কোনও ইস্যু বা সমস্যা কীভাবে সামলাবেন। এ ধরনের বক্তব্যে মনে হয় আপনারা (বাংলাদেশ) নিজেদের শাসন সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ থেকে মনোযোগ অন্যদিকে সরানোর চেষ্টা করছেন এবং অন্যদের দোষারোপ করে বলছেন যে বাইরের কেউ এই সমস্যার কারণ। এটি আসলে সমস্যার সমাধান করে না।
১৮ কোটি ডলারের প্রতিরক্ষা চুক্তি বাতিল: ভারত জানে না
অপর এক প্রশ্নে আরেক সাংবাদিক জানতে বাংলাদেশ ১৮ কোটি ডলারের একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি বাতিল করেছে। আমি ধারণা করছি এটি ভারতের দেওয়া লাইন অব ক্রেডিটের (ঋণের) আওতায় ছিল। এ বিষয়ে কোনও আপডেট আছে?
জবাবে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, দেখুন ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একাধিক প্রতিরক্ষা সহযোগিতা কার্যক্রম বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। আপনি যে নির্দিষ্ট চুক্তির জিজ্ঞাসা করেছেন, সেটি সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য নিশ্চিত করে আমি আপনাকে জানাবো।
নির্বাচন প্রশ্নে ভারতের বার্তা
ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআইয়ের সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল, আমরা ঢাকায় নতুন করে বিক্ষোভ দেখছি এবং বাংলাদেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দল আসলে আগাম নির্বাচনের দাবি করছে। তারা একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা চাইছে। তারা এই বছরের শেষের দিকে বা একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচন চাইছে। কিন্তু এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার বদলে, অস্থায়ী সরকার প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস বর্তমান সংকট ভারতের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্রের ফল বলে ভারতকে দোষারোপ করার চেষ্টা করছেন। আপনি এই অগ্রগতি ও পরিস্থিতি এবং বিশেষ করে অস্থায়ী সরকার প্রধানের এই গুরুতর অভিযোগগুলোকে কীভাবে দেখছেন? জবাবে জয়সওয়াল বলেন, বাংলাদেশে নির্বাচন সম্পর্কে আমরা আমাদের অবস্থান খুবই পরিষ্কারভাবে ব্যক্ত করেছি এবং আমরা এটি ধারাবাহিকভাবে করে এসেছি। বাংলাদেশের উচিত জনগণের ইচ্ছা ও ম্যান্ডেট নিশ্চিত করার জন্য সময়মতো একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করা।
মানবিক করিডর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে ভারত
সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে দ্য হিন্দুর সাংবাদিক জানতে চান, একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে একটি মানবিক করিডর নির্মাণ করছে। সেখানে নিরাপত্তাজনিত কিছু ইস্যু রয়েছে। এবিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়। একই বিষয়ে আরেক সাংবাদিক প্রশ্ন করতে গিয়ে বলেন, বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীও প্রস্তাবিত এই মানবিক করিডরের ধারণার বিরোধিতা করেছে। ভারত এটি কীভাবে দেখছে? জবাবে জয়সওয়াল বলেন, মানবিক করিডর সম্পর্কে আপনার প্রশ্নের উত্তরে বলতে চাই, আমি আগেও এ বিষয়ে বলেছি, আমরা এই ধরনের অগ্রগতিগুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।