উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে বিশ্বাস পুনর্গঠনের প্রয়াস হিসেবে সীমান্তে প্রচারমূলক লাউডস্পিকার সম্প্রচার স্থগিত করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী। এক বিবৃতিতে মঙ্গলবার তারা এ তথ্য জানায়।
গত সপ্তাহে দক্ষিণ কোরিয়ায় নতুন প্রেসিডেন্ট লি জে-মিউং নির্বাচিত হওয়ার পর এটি সরকারের প্রথম উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। তিনি নির্বাচনি প্রচারে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের অঙ্গীকার করেছিলেন।
উত্তর কোরিয়া এই লাউডস্পিকার সম্প্রচারকে যুদ্ধের উস্কানি হিসেবে দেখে থাকে এবং অতীতে এগুলো ধ্বংসের হুমকি দিয়েছে।
২০১৮ সালের পর ছয় বছর বন্ধ থাকার পর গত বছরের জুনে দক্ষিণ কোরিয়া এই সম্প্রচার পুনরায় চালু করেছিল। তখন পিয়ংইয়ং দক্ষিণে আবর্জনাভর্তি বেলুন পাঠানো শুরু করলে সিউল এই পদক্ষেপ নেয়।
প্রচার মাইকগুলোতে দুই কোরিয়া ও বিশ্বসংবাদের পাশাপাশি গণতন্ত্র এবং দক্ষিণ কোরিয়ার জীবনযাত্রা সম্পর্কিত তথ্য প্রচার করা হতো।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইয়লের আমলে দুই দেশের সম্পর্ক ব্যাপকভাবে খারাপ হয়। তিনি উত্তর কোরিয়ার বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন। গত ডিসেম্বরে অরাষ্ট্রীয় শক্তি ও উত্তর কোরিয়া সমর্থকদের হুমকি দেখিয়ে সামরিক আইন জারির পর ইউন অভিশংসিত হন।
প্রেসিডেন্ট লি জে-মিউং নির্বাচনি প্রচারে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সংলাপ পুনরায় শুরু এবং উপদ্বীপে উত্তেজনা হ্রাসের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী বলেছে, দুই কোরিয়ার মধ্যে বিশ্বাস পুনর্গঠন এবং উপদ্বীপে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তবে উত্তর কোরিয়ার মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে। সিউলভিত্তিক ডেটাবেইস সেন্টার ফর নর্থ কোরিয়ান হিউম্যান রাইটসের নির্বাহী পরিচালক হানা সং বলেন, এই লাউডস্পিকারগুলো উত্তর কোরিয়ার জনগণের জন্য ছিল একটি জীবন্ত বার্তা—তারা বিস্মৃত হয়নি। এগুলো বন্ধ করে আমরা কিম জং উনের বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রচেষ্টাকে আরও মজবুত করলাম।
তবে সীমান্তবর্তী অঞ্চলের বাসিন্দারা এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। দক্ষিণ কোরিয়ার গ্যাংহা কাউন্টি এক বিবৃতিতে জানায়, আমরা আশা করি এই সিদ্ধান্ত উত্তর কোরিয়ার শব্দভিত্তিক মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে অবসান ঘটাবে এবং আমাদের বাসিন্দারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ইয়োনহাপ জানিয়েছে, সম্প্রচারে সাময়িক স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে, সম্পূর্ণ বাতিল নয়। এর অর্থ হলো, প্রয়োজনে আবারও চালু করা হতে পারে।
লাউডস্পিকারের আওয়াজ দিনের বেলায় প্রায় ১০ কিলোমিটার এবং রাতে ২৪ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছে বলে দাবি করেছে সিউল।
ঠিক এক বছর আগে ২০২৪ সালের জুনে দুই দেশের মধ্যে প্রচার বেলুন ও আবর্জনা বিনিময়ের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির পর সম্প্রচার পুনরায় চালু হয়েছিল।
উল্লেখ্য, ১৯৫৩ সালে কোরীয় যুদ্ধ অস্ত্রবিরতিতে শেষ হলেও এখনও দুই কোরিয়ার মধ্যে কোনও শান্তিচুক্তি হয়নি, ফলে কার্যত এখনও তারা যুদ্ধে লিপ্ত।
সূত্র: বিবিসি