মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘর্ষ এবং ইউরোপে অনুষ্ঠিত ন্যাটো সম্মেলনের প্রেক্ষাপটে ইরান ও রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠক করেছে চীন। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) চীনের পূর্ব উপকূলীয় শহর কিংডাওতে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য নিউ আরব এ খবর জানিয়েছে।
এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হলো মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিধ্বস্ত প্রেক্ষাপট ও নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ-এ ন্যাটো নেতাদের সম্মেলনের একদিন পর। ন্যাটো সদস্য রাষ্ট্রগুলো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে খুশি করতে প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
চীন দীর্ঘদিন ধরেই ১০ সদস্যের সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন-এসসিও’কে পশ্চিমা নেতৃত্বাধীন শক্তি বলয়ের প্রতিপক্ষ হিসেবে উপস্থাপন করতে চায়। সে কারণে রাজনীতি, নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও বিজ্ঞানে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সহযোগিতা জোরদারের চেষ্টা করে আসছে বেইজিং।
সংগঠনটির শীর্ষ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের এই কিংডাও বৈঠক এমন সময়ে অনুষ্ঠিত হলো, যখন ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে ১২ দিনব্যাপী যুদ্ধের পর একটি প্রাথমিক যুদ্ধবিরতি কার্যকর রয়েছে।
মস্কোর সঙ্গে বেইজিংয়ের সম্পর্ক এখনও নজরকাড়া বিষয়। যদিও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে নিজেকে নিরপেক্ষ পক্ষ হিসেবে উপস্থাপন করেছে চীন। তবে পশ্চিমা সরকারগুলো বলছে, মস্কোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে রাশিয়া অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে বড় ধরনের সহায়তা পেয়েছে।
রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রে বেলোসোভ বৈঠকে তার বক্তব্যে বিশ্বে ‘বাড়তে থাকা ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার’ অন্ধকার চিত্র এঁকেছেন।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বর্তমান সামরিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি জটিল এবং আরও অবনতির ইঙ্গিত দিচ্ছে।’
তার চীনা সমকক্ষ ডং জুনও এই কিংডাও বৈঠককে বিশ্বের ‘জটিল অস্থিরতা ও পরিবর্তনের’ যুগে এক ধরনের ভারসাম্য রক্ষাকারী হিসেবে বর্ণনা করেছেন। কিংডাও শহরে একটি বড় চীনা নৌ-ঘাঁটি অবস্থিত।
রাষ্ট্র পরিচালিত সংবাদ সংস্থা সিনহুয়ার উদ্ধৃতি অনুযায়ী, তিনি বলেন ‘এই পরিস্থিতিতে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের স্থিতিশীলতার নোঙর হিসেবে কাজ করাটা আরও জরুরি হয়ে উঠেছে।’
সম্প্রতি ইসরায়েল, ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সংঘর্ষ নিয়েও কিংডাও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এই সংঘর্ষ চলাকালে চীন তার ঘনিষ্ঠ অংশীদার তেহরানকে কেবল কূটনৈতিক সমর্থন দিয়েছে- যা ইঙ্গিত করে যে অঞ্চলটিতে তাদের প্রভাব সীমিত এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক আরও খারাপ করতে চায় না বেইজিং।
সিঙ্গাপুরের নানইয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটির চীনা সেনা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ জেমস চার বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘ইরানের প্রতি প্রকাশ্য সমর্থন কেবল কথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে, কাজে নয়।’
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ইরান বিষয়ক হামলাকে নিন্দা জানানো ছাড়া বেইজিংয়ের কাছ থেকে আর বেশি কিছু আশা করা যায় না। চীন সম্ভবত মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ইস্যুতে সতর্ক অবস্থানে থাকবে এবং অঞ্চলটির জটিলতায় জড়িয়ে পড়তে চাইবে না।’
এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের চীন বিষয়ক পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষক আন্দ্রেয়া গিসেলি বলেন, ‘ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী চীনের সঙ্গে অস্ত্র সরবরাহ নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। তবে আমি মনে করি না চীন এতে সম্মত হবে।’
গিসেলি বলেন, ‘এটি ইসরায়েলের কাছে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে উসকানিমূলক হিসেবে ধরা হবে। আর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বেইজিং সম্পর্ক স্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।’