X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘পাতানো প্রার্থীর’ জয়ে বিপাকে মস্কো!

বিদেশ ডেস্ক
১৪ অক্টোবর ২০১৮, ২০:৩৩আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০১৮, ০০:১৩
image

সাইবেরিয়ার সর্বকনিষ্ঠ গভর্নর হওয়ার পথে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা প্রার্থী উন্ডারকাউন্ড ভ্যালেন্টিন কোনোভালোভ। তার সম্ভাব্য জয়ে আতঙ্কিত হয়ে মস্কো চূড়ান্ত নির্বাচন (রান অফ) পিছিয়ে দিয়েছে একাধিকবার। শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন প্রার্থিতার ফরমে ত্রুটি থাকার অভিযোগ তুলে তাকে অযোগ্য ঘোষণার প্রক্রিয়া শুরুর কথা জানিয়েছে। অথচ কোনোভালোভ ইতিমধ্যে খাকাসিয়ার গভর্নর নির্বাচনের প্রথম রাউন্ডে জিতেছেন। মাত্র ৩০ বছর বয়সী কোনোভালোভ কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য। লেনিনকে যেমন তিনি নিজের ব্যক্তিগত আদর্শ মনে করেন, তেমনি প্রশংসাসূচক বক্তব্য রেখেছেন সমালোচিত স্টালিনের বিষয়েও। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান লিখেছে, ‘পাতানো প্রার্থী’ হিসেবেই ক্রেমলিন তাকে সাইবেরিয়া অঞ্চলের খাকাসিয়ার গভর্নর পদে প্রার্থী হতে দিয়েছিল। কিন্তু দুর্নীতি ও অবসরের বয়স সংক্রান্ত আইনের জেরে সৃষ্ট ক্ষোভের কারণে জনগণ ক্রেমলিন সমর্থিত প্রার্থীর বদলে কোনোভালোভকেই ভোট দিয়েছে। ফলে সমাজতন্ত্রীদের বশে রেখে দেশ চালানো পুতিন প্রশাসন নতুন এই নেতার উত্থানে পড়েছে বিপাকে। অন্যদিকে সমাজতন্ত্রী কোনোভালোভ এ পরিস্থিতিকে নতুন যুগ শুরুর সুযোগ হিসেবে দেখছেন। কোনোভালোভ

ক্ষমতাসীন ‘ইউনাইটেড রাশিয়া পার্টির’ সমর্থন কমে গত বছর ৩১ শতাংশে ঠেকেছে। বহু রুশ নাগরিক হতাশ। দুর্বল অর্থনীতি এবং দুর্নীতিবাজ স্থানীয় কর্মকর্তাদের কর্মকাণ্ড নাগরিকদের প্রধান অভিযোগের বিষয়। খাকাসিয়ার একজন সরকারি কর্মকর্তার ডাক নামই ‘হাংরি।’ এর কারণ তার অনিঃশেষ ঘুষ খাওয়ার চাহিদা। এ বছর জনরোষের নতুন বিষয় হিসেবে হাজির হয়েছে অবসর বয়সকালীন নতুন আইন। এ আইনে পুরুষদের অবসরের বয়স নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬৫ বছর, আর নারীদের ৬৩ বছর। রুশরা এই ব্যবস্থা মেনে নিতে রাজি নয়। বিক্ষোভের মুখে পুতিন নারীদের অবসরের বয়স ৬৩ করে দিলেও পুরুষদের অবসরের বয়স ৬৫তেই রেখেছেন। বর্তমানে রুশ নারীরা অবসরে যান ৫৫ বছর বয়সে। আর পুরুষদের অবসরে যাওয়ার বয়স ৬০ বছর।

গার্ডিয়ান লিখেছে, রাশিয়া এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ‘ম্যানেজড ডেমোক্রেসি’ চালাচ্ছে। অর্থাৎ প্রকৃত গণতন্ত্রর বদলে তারা পাতানো নির্বাচনের আয়োজন করে, যেখানে প্রার্থী তাদের ঠিক করা এবং ফলাফলও আগে থেকে নির্ধারিত। রাশিয়ায় কমিউনিস্ট পার্টিকে ‘পোষ মানানো বিরোধী দল’ আখ্যা দেওয়া হয়। কিন্তু এবারের নির্বাচনে ক্রেমলিন তার নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে পারেনি। এবার যে কোনোভালোভ খাকাসিয়ায় জিতে আসার পর্যায়ে রয়েছেন তাকে আসলে ‘টেকনিকাল প্রার্থী’ হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ঘটনাচক্রে এবারের নির্বাচন সত্যিকারের নির্বাচনই হয়েছে। একে তো ভিন্ন মতের ভোট ছিল, তার ওপর অবসরের বয়স নিয়ে পুতিনের জনপ্রিয়তাও ছিল চ্যালেঞ্জের মুখে। ফলে খাকেসিয়াতে পুতিন সমর্থিত প্রার্থী সুবিধা করতে পারেননি। আইনটি গত মাসে পাস হয়ে গেছে। কিন্তু জনসাধারণের মধ্যে এ নিয়ে রয়েছে তিক্ততা। ভেতলানা মাখোভা নামের একজন সরকারি কর্মকর্তা গার্ডিয়ানকে বলেছেন, তিনি কমিউনিস্টদের সমর্থন করেন না বলে আন্দোলনে উপস্থিত হননি। কিন্তু পুতিন সমর্থিত স্থানীয় নেতার বিরুদ্ধে কারোর উঠে আসাটাই স্বাভাবিক। তিনি গত নয় বছর সবকিছু যেভাবে চালিয়েছেন তাতে এমন পরিস্থিতিই হওয়ার কথা।

কেন ‘পাতানো প্রার্থী’ হওয়া সত্ত্বেও কোনোভালোভ জয়ের দিকে এগিয়ে যেতে পারলেন তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে নির্বাচন পর্যবেক্ষক আলেক্সান্দার কিনেভ বলেছেন, ‘অবসরের বয়স সংক্রান্ত বিষয়টি কোনও একক কারণ নয়। তবে রাজনীতি তো সবসময়ই বিভিন্ন ঘটনার সামষ্টিক প্রভাবের অধীন। একদিকে মানুষের আয় বাড়ছে না তার ওপর অবসরের বয়স বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সবকিছু মিলে পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেছে।’ প্রথমে নির্বাচন দেওয়া। আর তারপর হেরে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় তা বাতিল করার চেষ্টার প্রেক্ষিতে অনেকের কাছেই হাসির খোরাক হয়েছে মস্কো। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক রুশ শিক্ষার্থী মন্তব্য করেছেন, ‘নিয়মটা হচ্ছে, তারা জিতলে সব ঠিক আছে। কিন্তু বিরোধীরা জিতলে আবার নতুন করে শুরু করতে হবে।’

রাশিয়ার স্থানীয় রাজনীতিতে খাকাসিয়ার পরিস্থিতি এক নতুন অবস্থার সৃষ্টি করেছে। কোনোভালোভ এই পরিস্থিতিকে সুবিধাজনক হিসেবেই দেখছেন। তার ভাষ্য, ‘আমি মনে করি, এতে পরিবর্তনের জন্য এক নতুন যুগ শুরুর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আমরা দ্রুতই ইউনাইটেড রাশিয়ার কর্তৃত্বের পতন দেখতে পারব।’ কোনোভালোভ কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী থাকার সময়েই। লেনিনকে তিনি ব্যাক্তিগতভাবে ‘অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব’ মনে করেন। তার বিষয়ে কোনোভালোভের মূল্যায়ন, ‘তিনি এমন একজন ব্যক্তি যিনি ভিন্ন মত-পথের মানুষকে এক কাতারে নিয়ে আসতে পারতেন।’ স্তালিনের বিষয়ে তার মন্তব্য, ‘তিনি বড় রাষ্ট্রনেতা ছিলেন কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনায় ভুল করেছেন।’

খাকাসিয়ার গভর্নর নির্বাচনের প্রথম রাউন্ডের ফলাফলে বিব্রত ক্ষমতাসীন ‘ইউনাইটেড রাশিয়া পার্টি’ ও ক্রেমলিন। তারা কনোভালোভের জয় ঠেকাতে রান অফ অনুষ্ঠিত হতে না দেওয়ার কৌশল অবলম্বন করছে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, তারা কোনোভালোভের প্রার্থিতার ফরমে ত্রুটি পেয়েছে, যার কারণে তার প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যেতে পারে। কোনোভালোভ মন্তব্য করেছেন, ‘এটা অবিশ্বাস্য! নির্বাচন হলে আমরা নিশ্চিতভাবে জিতে যেতাম। এখন তারা অবৈধভাবে ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করছে।’ গার্ডিয়ান মনে করে, কোনোভালোভের উত্থান রাশিয়ার নিজেরই তৈরি। যেভাবে তারা সব কিছু খেলিয়ে তুলতে চেয়েছিল, সে রকমভাবে সব কিছু আর তাদের হাতে থাকেনি।

/এএমএ/
সম্পর্কিত
তিনটি গ্রাম থেকে সেনা সরিয়ে নিলো ইউক্রেন
এপি'র সাংবাদিককে গ্রেফতার করলো রাশিয়া
ডনেস্কের একটি গ্রাম দখল করলো রাশিয়া
সর্বশেষ খবর
ওষুধের দাম নিয়ে যে নির্দেশ দিলেন হাইকোর্ট
ওষুধের দাম নিয়ে যে নির্দেশ দিলেন হাইকোর্ট
বাসচাপায় মাইক্রোবাসের ২ যাত্রী নিহত
বাসচাপায় মাইক্রোবাসের ২ যাত্রী নিহত
মুশফিকদের বন্ধু ফুটবলার হীরকের অকস্মাৎ মৃত্যু
মুশফিকদের বন্ধু ফুটবলার হীরকের অকস্মাৎ মৃত্যু
খিলগাঁওয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে যুবকের মৃত্যু
খিলগাঁওয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে যুবকের মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড