গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের চলমান হামলাকে ‘রক্তস্নান’ বলে বর্ণনা করে ফরাসি রাজধানী প্যারিসে একটি ঐতিহাসিক ফোয়ারা লাল রঙে রাঙিয়ে দেন মানবাধিকারকর্মীরা। বুধবার ওক্সফাম, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও গ্রিনপিসের কর্মীরা শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ‘ফঁতেঁ দে ইনোসঁ’ ফোয়ারাটিতে লাল রঙ ঢেলে দেন। এ সময় প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল—‘যুদ্ধবিরতিতে রাজি হও’ এবং ‘গাজা: রক্তস্নান বন্ধ করো’। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
এক যৌথ বিবৃতিতে প্রতিবাদকারীরা বলেন, এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য হলো গাজায় চরম মানবিক জরুরি পরিস্থিতির মুখে ফ্রান্সের দেরিতে সাড়া দেওয়ার নিন্দা জানানো।
ওক্সফাম ফ্রান্সের নির্বাহী পরিচালক এবং ফ্রান্সের সাবেক মন্ত্রী সেসিল দুফলো বলেন, শুধু মুখে সমালোচনা করেই ফ্রান্স দায়িত্ব শেষ করতে পারে না।
ওক্সফামের মানবিক সহায়তা সমন্বয়কারী ক্লেমঁস লাগুয়ারদা এএফপিকে বলেন, গাজার মানুষ সবকিছুর অভাবে ভুগছে—এটা এখন বেঁচে থাকার লড়াই।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে ১ হাজার ২১৮ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন বেসামরিক নাগরিক। অপহৃত হন ২৫১ জন, যাদের মধ্যে এখনো ৫৭ জন গাজায় আটক। এর মধ্যে ৩৪ জনকে মৃত ঘোষণা করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
জবাবে ইসরায়েলের পাল্টা অভিযানে গাজায় এখন পর্যন্ত ৫৩ হাজার ৯৭৭ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এই তথ্য জাতিসংঘ সাধারণভাবে গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচনা করে।
চলতি বছরের মার্চের শুরু থেকে ইসরায়েলের অবরোধের কারণে খাদ্য ও ওষুধের তীব্র সংকটে থাকা গাজায় নতুন করে হামলা জোরদার করেছে তেলআবিব। এতে আন্তর্জাতিক মহলের নিন্দার মুখে পড়েছে দেশটি।
গ্রিনপিস ফ্রান্সের প্রধান জ্যঁ-ফ্রঁসোয়া জুলিয়ার বলেন, এটি একটি গণহত্যা এবং রাজনৈতিক নিষ্ক্রিয়তা ধীরে ধীরে সেই হত্যাকাণ্ডে একধরনের সহযোগিতায় পরিণত হচ্ছে।
তিনি ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, সাহস, স্পষ্টতা ও দৃঢ়তার সঙ্গে এই রক্তপাত বন্ধে এগিয়ে আসুন।
মানবাধিকারকর্মীরা ইসরায়েলের ওপর প্রভাব বিস্তারকারী রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যেন তারা তাৎক্ষণিক ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ সৃষ্টি করে। একই সঙ্গে ইসরায়েলের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তি পুনর্মূল্যায়নসহ বিভিন্ন কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিও জানান তারা।
এর আগে ম্যাক্রোঁ গাজায় মানবিক সহায়তা বাধাগ্রস্ত করায় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর আচরণকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ ও ‘লজ্জাজনক’ বলে অভিহিত করেন। পাল্টা জবাবে নেতানিয়াহু ম্যাক্রোঁকে ‘একটি খুনি ইসলামপন্থি সন্ত্রাসী সংগঠনের পক্ষ নেওয়ার’ অভিযোগ তোলেন।