X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

আসামের সহযোগিতায় আরও ২৩ রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে পাঠাচ্ছে ভারত

আশিষ বিশ্বাস, কলকাতা
২৩ অক্টোবর ২০১৮, ০২:২১আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০১৮, ১৬:২৯

সম্প্রতি সাত রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর পর এবার আরও ২৩ রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠাতে যাচ্ছে ভারত। আসাম রাজ্য সরকার, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ও মিয়ানমারের মধ্যে করা একটি চুক্তির আওতায় তাদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে। দীর্ঘ আলোচনা, পরিচয় শনাক্তকরণ ও তথ্যানুসন্ধানের বিস্তারিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

রোহিঙ্গা

 

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, আসাম সরকার দাবি করেছে যে, এসব রোহিঙ্গা ফেরত যেতে রাজি হয়েছে। সাত রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর সময় যেসব সমস্যায় পড়তে হয়েছে, তাতে আরও রোহিঙ্গাকে সেখানে পাঠানোর বিষয়টি বিস্ময়কর। ফেরত পাঠানোর সময় ওই সাতজনের সবাই ভারতের মাটি ছাড়তে চরম অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। রাখাইন রাজ্যে ফেরত যাওয়ার পর তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যাপারে মিয়ানমার প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি তাদের খুব কমই আশান্বিত করেছিল।

কলকাতাভিত্তিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে চাপ দেওয়ার বিষয়টি যাতে প্রতীয়মান না হয় সেই চেষ্টা করছে আসাম সরকার। যাতে করে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তৎপরতা এড়ানো যায়।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে মানবাধিকার সংস্থাগুলো খুবই সক্রিয়। তারা ভারত থাকা ৪০ হাজার রোহিঙ্গার সবাইকে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তে বিরোধিতা করে আসছে। তবে বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে একটি পিএলআই’র দায়ের করা হলে রায় সরকারের পক্ষেই যায়। যখন মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নিজেদের নাগরিক পরিচয় দিয়ে ফেরত নিয়ে যেতে চাচ্ছে তখন মানবাধিকার কর্মীদের আপত্তির কারণ জানতে চেয়েছে আদালত।

ভারতের দিল্লি, হায়দরাবাদ, জম্মু ও কাশ্মীর, হরিয়ানাসহ অন্যান্য এলাকায় তাঁবু বা অস্থায়ী আবাসনে বেশ কিছুদিন ধরে বাস করছে রোহিঙ্গারা। এছাড়া কলকাতার দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ২০০ জনের মতো রোহিঙ্গা রয়েছে। তবে তারা নিবন্ধিত নয়।

কাজের জন্য বেঙ্গালুরু যাওয়ার পথে কয়েকজন রোহিঙ্গা গ্রেফতার হয়েছে। উত্তর ভারতের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে থাকা রোহিঙ্গারা জীবিকার জন্য ছোটখাট কাজ করছেন। জাতিসংঘ শুধু শরণার্থী হিসেবে নিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের জন্যই আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে। তবে নিবন্ধিত হওয়ার জন্য বেশ কিছু প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। তাতে সময় লাগে। স্থানীয় এনজিও সংস্থাগুলো অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পাশাপাশি এসব রোহিঙ্গাদের নিয়েও কাজ করছে।

মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা যে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়বে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। এছাড়া মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও আধা-সামরিক বাহিনীর নিষ্ঠুর অত্যাচারের বিষয়টিও প্রমাণিত। এজন্য ভারতে তাদের জন্য অনেকেরই সহানুভূতি রয়েছে।

তবে ভারতের ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি-বিজেপি রোহিঙ্গা ইস্যুতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। তাদের প্রতি কোনও ধরনের নমনীয়তা বা ভারতে তাদের স্থায়ী আবাসনের বিষয়ে তারা রাজি নয়। বাংলাদেশ সরকারও একই অবস্থান নিয়ে আছে। দুই দেশই  মিয়ানমারকে নিজ দেশের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে।

বিজেপি’র আইন শাখা’র আহ্বায়ক শান্তনু সিনহা বলেন, ধর্মীয় বা রাজনৈতিক কারণে বেপরোয়াভাবে পালিয়ে আসা মানুষদের সাময়িক আশ্রয় দেওয়া একটা ব্যাপার। আর ভারত তা দিয়েছেও। কিন্তু  মিয়ানমারে দশকের পর দশক ধরে চলা জাতিগত সংকটের স্থায়ী সমাধান করার দায়িত্ব নেপিদোর। মিয়ানমার সরকারকে  বিষয়টি অবশ্যই স্বীকার করতে হবে এবং যত দ্রুত সম্ভব তা সমাধান করতে হবে। ভারত বা বাংলাদেশ এটা কেন করতে যাবে! এই বিষয়টিতে মানবিক নীতির কারণে বাংলাদেশকে চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে। কোনও দেশ না করলেও বাংলাদেশ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা লাখ লাখ মানুষকে তাদের মাটিতে আশ্রয় দিয়েছে। যদিও এসব মানুষ নূন্যতম বৈধ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সেখানে আসেনি।

মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, প্রথম দফায় পাঠানো সাত রোহিঙ্গাকে যদি এখনও গ্রেফতার বা নিখোঁজ করে দেওয়া না হয়ে থাকে, তাহলে যেকোনও সময় তাদের হত্যা করা হবে। তারা দাবি করছে, শরণার্থী শিবিরে থাকা বেশিরভাগ রোহিঙ্গা ওই সাতজনের  মতো  মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায় না।

অন্যান্য রাজ্যের মতো আসামও কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে এই ইস্যুতে সহযোগিতা করছে। তবে পশ্চিমবঙ্গ বা জম্মু ও কাশ্মীরে সেই পরিস্থিতি ভিন্ন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে রাজ্যের বিরোধী দলের নেতারাও মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা এসব মানুষের প্রতি আরও মানবিক আচরণ করার দাবি জানিয়েছেন। দরকার পড়লে তাদের রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার কথাও বলেছেন তারা।

কেন্দ্র থেকে মমতাকে কড়াভাবে রোহিঙ্গাপন্থী অবস্থান নেওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। তাদের যুক্তি, তাহলে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের একগুঁয়েমি আরও বাড়বে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্টমন্ত্রী রাজনাথ সিং সর্বশেষ কলকাতা সফরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন। সম্মেলনে রাজনাথ রোহিঙ্গা প্রত্যার্পণের জন্য ভারত সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। কিন্তু ওই সময় মমতাকে চুপ থাকতে দেখা যায়।

পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলে গোর্খাসহ অন্যান্য এলাকায় কিছু রহস্যজনক আবাসনের খবর পাওয়া গেছে। হঠাৎ করেই কিছু মানুষ সেখানে গিয়ে পতিত জায়গায় বাড়ি-ঘর তুলে ফেলেছে। তারা সেখানকার স্থানীয় ভাষায় কথা বলতে পারে না। বিষয়টি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের নজরে এসেছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার রোহিঙ্গা ইস্যুতে ঠিকমতো কাজ করছে কিনা তা নিয়ে তাদের মধ্যে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

 

/ আইএ/আরএ/এএ/
সম্পর্কিত
ভারতের ভোটে বিজেপির পক্ষে কি ‘৪০০ পেরোনো’ আদৌ সম্ভব?  
মিয়ানমারের ৩৮ শরণার্থীকে ফেরত পাঠালো ভারত
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে থাইল্যান্ড সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
সর্বশেষ খবর
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সকার স্কুলের বাছাইয়ে ৩ বাংলাদেশি কিশোর
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সকার স্কুলের বাছাইয়ে ৩ বাংলাদেশি কিশোর
দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঢাকায় স্বস্তির বৃষ্টি, কমলো তাপমাত্রা
দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঢাকায় স্বস্তির বৃষ্টি, কমলো তাপমাত্রা
রোমাঞ্চকর ম্যাচে ১ রানের নাটকীয় জয় হায়দরাবাদের 
রোমাঞ্চকর ম্যাচে ১ রানের নাটকীয় জয় হায়দরাবাদের 
মামুনুল হকের জন্য কাশিমপুর কারাগারের সামনে ভক্তদের ভিড়
মামুনুল হকের জন্য কাশিমপুর কারাগারের সামনে ভক্তদের ভিড়
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা