X
শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫
২০ আষাঢ় ১৪৩২

বাংলাদেশকে ১৪-১৫ লাখ লোক ফেরত নিতে বলা হবে: আসামের অর্থমন্ত্রী

বিদেশ ডেস্ক
০১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২২:৩৫আপডেট : ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২৩:২০

আসামের চূড়ান্ত নাগরিক তালিকায় ১৯ লাখ লোক বাদ পড়ার একদিন পরেই রাজ্যটির অর্থমন্ত্রী বিজেপি নেতা হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেছেন, ‘১৪-১৫ লাখ বিদেশিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাংলাদেশকে তাদের এই ১৪-১৫ লাখ লোককে ফিরিয়ে নিতে বলা হবে।’ ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউজ১৮-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশকে ১৪-১৫ লাখ লোক ফেরত নিতে বলা হবে:  আসামের অর্থমন্ত্রী

গত কয়েক বছরের আসামের জনতত্ত্বের পরিবর্তন বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেন, এটা কোনও মিথ নয়। আপনি যদি আদমশুমারির পরিসংখ্যানের দিকে তাকান, তাহলে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখতে পাবেন। আমরা বেশ কিছু সংখ্যক অবৈধ অভিবাসীকে চিহ্নিত করতে পেরেছি এবং তা চূড়ান্ত করার চেষ্টা করছি। আসামের আদিবাসীরা নিজেদের জায়গা ফিরে পাওয়ার আগ পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া চলবে। আমরা ১৪-১৫ লাখ বিদেশিকে চিহ্নিত করেছি। এটা প্রমাণিত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা বলেছেন তা আমরা আমলে নিচ্ছি না। অবৈধ বিদেশিরা তার ভোটব্যাংক।


উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইটারে দেওয়া পোস্টে আসামের নাগরিক তালিকাকে অভিসন্ধিমূলক ‘ব্যর্থ নাটকীয়তা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তার দল তৃণমূলের দাবি, নাগরিক তালিকার নাম করে বাংলাভাষীদের আসাম থেকে তাড়িয়ে দিতেই এ উদ্যোগ নিয়েছে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। টুইটে মমতা বলেন, নাগরিক তালিকা নিয়ে যারা রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করেছিল, তাদের মুখোশ খুলে দিয়েছে এনআরসি। দেশকে জবাব দিতে হবে তাদের। দেশ ও সমাজের স্বার্থ পরিহার করে অসৎ উদ্দেশ্যে কাজ করলে এমনটাই ঘটে। মমতা আরও বলেন, বাংলাভাষী ভাইবোনদের জন্য খারাপ লাগছে। জাঁতাকলে পড়ে ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে তাদের।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে সিনিয়র এই বিজেপি নেতা নিশ্চয়তা দিয়ে বলেন, এমন কিছু ঘটবে না এবং কাউকে আটক করা হবে না। তিনি বলেন, আমাদের কাছে অনেক মানুষের আধার তথ্য রয়েছে। কোনও মানবাধিকার লঙ্ঘন হবে না। আমরা বাংলাদেশকে তাদের মানুষদের ফিরিয়ে নিতে বলবো। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে তাদের ভোট দেওয়ার অনুমতি ও নির্দিষ্ট কিছু সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে না।

আসামের অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ সরকার ভারতের বন্ধু এবং আমাদের সহযোগিতা করছে। অবৈধ অভিবাসীদের বিষয় তুলে ধরা হলে তারা নিয়মিতই তাদের ফেরত নিচ্ছে। কিন্তু এই সংখ্যা খুব বেশি না। কিন্তু এখন তাদের চিহ্নিত করার একটি প্রক্রিয়া আমাদের রয়েছে। এনআরসিতে মানুষের নাম থাকার অর্থ এই নয় যে, তাদের বিদেশি বলা হবে এবং বাংলাদেশে পাঠানো হবে। এখানে আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে, যার মধ্য দিয়ে নিজেদের নাগরিকত্ব প্রমাণ করার সুযোগ পাবেন তারা। কিন্তু এর আগ পর্যন্ত তারা দেশের কোনও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবেন না।

এনআরসি প্রক্রিয়া নিরর্থক নয় উল্লেখ করে হিমন্ত শর্মা বলেন, ১৯৭১ সালের পরবর্তী সময়ে শরণার্থী হিসেবে যারা এসেছেন, তারা সমস্যায় পড়বেন। আমরা তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল। কিন্তু তালিকায় স্থান পেতে অনেকেই এনআরসি প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করেছেন। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।

নর্থ-ইস্ট ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্সের সমন্বয়কারী এই বিজেপি নেতা দাবি করেন বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী আসামের জেলাগুলোর ২০ শতাংশ ও বাকি আসামের ১০ শতাংশ নাম পুনরায় যাচাই করার জন্য।

নথি জাল করার বিষয়ে হিমন্ত শর্মা বলেন, সর্বোচ্চ আদালত এনআরসি সমন্বয় টিমের ওপর আস্থা রেখেছেন। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার আদালতকে জানিয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে পুনরায় যাচাই প্রয়োজন। এনআরসি সমন্বয়কারী লিগ্যাসি নথি প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছে নথি জাল ঠেকাতে। নথি জাল করার অভিযোগে আমরা কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছি। এর মানে এই নয় যে পুরো প্রক্রিয়া আবার শুরু করতে হবে।

এর আগে, শনিবার আরেক ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস টেলিফোনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হিমন্ত শর্মা দাবি করেছিলেন, এনআরসি নিয়ে বিজেপি সন্তুষ্ট নয়। আরও বেশি অবৈধ অভিবাসীর তালিকা থেকে বাদ পড়ার কথা। রাজ্য থেকে সব বিদেশিকে তাড়িয়ে দিতে তাদের দল কাজ করে যাবে। সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর নাগরিক তালিকায় পুনরায় যাচাইয়ের বিজেপি ও রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবে।

আসামের অর্থমন্ত্রী বলেন, আসামের জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি এনআরসি। কারণ, পুরো প্রক্রিয়ায় মাত্র ১৯ লাখ মানুষ বাদ পড়েছে। যাদের মধ্যে ৩ লাখ ৮০ হাজার আপিল করার প্রয়োজন বোধ করেনি এবং মারা গেছে। ফলে সত্যিকার অর্থে বাদ পড়েছে ১৫ লাখ। এদের মধ্যে ৫-৬ লাখ মানুষ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ থেকে আসামে এসেছে।

অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, এনআরসি ১৯৭১ সালের শরণার্থী সনদপত্র আমলে নেয়নি। কিন্তু ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল আপিলে তা আমলে নেওয়া হবে। ফলে তালিকা থেকে বাদ পড়াদের সংখ্যা দাঁড়াবে ১১ লাখ। এদের মধ্যে যাদের বাবা-মা তালিকায় স্থান পেয়েছেন তারাও অন্তর্ভুক্ত হবে। পুরো প্রক্রিয়া যখন শেষ হবে তখন বাদ পড়াদের সংখ্যা ৬-৭ লাখে দাঁড়াবে, যা খুবই কম।

/এএ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
ভারতীয় পর্যটন প্রচারের আকর্ষণ এখন ব্রিটিশ এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান
দালাই লামার উত্তরসূরি, চীন-ভারত সংঘাত আর একটি সোনার কৌটো
ভারতে চালু হতে চলেছে মোবাইল ভোটিং 
সর্বশেষ খবর
পাবনায় বাস-ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৩ জন নিহত
পাবনায় বাস-ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৩ জন নিহত
পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপে কোনও অগ্রগতি হয়নি: ট্রাম্প
পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপে কোনও অগ্রগতি হয়নি: ট্রাম্প
আ.লীগ নেতার বাড়িতে চাঁদাবাজির অভিযোগে পুলিশ সদস্য আটক
আ.লীগ নেতার বাড়িতে চাঁদাবাজির অভিযোগে পুলিশ সদস্য আটক
হিজরি সনের সঙ্গে ইসলামের সম্পর্ক গভীর যে কারণে
হিজরি সনের সঙ্গে ইসলামের সম্পর্ক গভীর যে কারণে
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল