X
রবিবার, ২২ জুন ২০২৫
৮ আষাঢ় ১৪৩২

দেশ সাধারণ মানুষের, কোনও নেতার নয়: অরুন্ধতী রায়

বিদেশ ডেস্ক
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১০:৫৮আপডেট : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৬:৪২

বুকারজয়ী লেখক ও অ্যাকটিভিস্ট অরুন্ধতী রায় বলেছেন, ‘এই দেশ আমার, আমাদের মতো সাধারণ মানুষের। কোনও নেতার নয়। আমাকে নিয়ে সমালোচনা করলে অসুবিধা নেই। অসুবিধা অন্য জায়গায়। যেমন, দিল্লিতে আমার বইপ্রকাশ অনুষ্ঠান ছিল। জানতাম হামলা হবে, মঞ্চ ভেঙে দেওয়া হবে। অথচ, এই নেতারাই টিকিট পেয়ে ভোটে লড়তে যান। বস্তার, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, কাশ্মীর, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি— মানুষ ত্রস্ত। তার পরও মানুষ এগিয়ে আসছেন, প্রতিবাদ করছেন, সেটা বড় ব্যাপার’। কলকাতাভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেছেন। ২১ ফেব্রুয়ারি সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছে।

দেশ সাধারণ মানুষের, কোনও নেতার নয়: অরুন্ধতী রায়

সাক্ষাৎকারে হুমকির বিষয়ে অরুন্ধতী রায় বলেন, ‘হুমকি সব সময় থাকে। এখন লেখককে প্রতিটি শব্দ লেখার আগে বার বার ভাবতে হচ্ছে। বাকস্বাধীনতা নেই। এতে সংস্কৃতির ক্ষতি হচ্ছে, মুক্ত চিন্তা থমকে যাচ্ছে। লেখক হিসেবে আমাদের কাজ প্রশ্ন করে তাতিয়ে তোলা, যে কোনও বিষয় নিয়ে কাটাছেঁড়া করা। অথচ, সব কিছু পিছন দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। বিজ্ঞানীই হোন বা অন্য পেশার মানুষ, বোকার মতো কথা বলছেন।’

‘আজাদি’ লেখা পোস্টার হাতে দাঁড়ানোয় একটি মেয়ের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কেউ বলছেন, প্রতিবাদীদের গুলি করে মারতে। কেউ বলছেন, পোশাক দেখে চেনা যায়। কেউ বলছেন, পাকিস্তানে চলে যাও। উত্তরপ্রদেশে প্রতিবাদ হচ্ছিল, মুখ্যমন্ত্রী বললেন, প্রতিশোধ নেওয়া হবে। লোকের থেকে পয়সা উসুল করা হবে। হচ্ছেও। যুদ্ধক্ষেত্রের থেকেও খারাপ পরিস্থিতি। ডাক্তার চিকিৎসা করতে চাইছেন না। বুলেটবিদ্ধ মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছে না। মানুষ পুলিশের হাতে মার খেয়েও হাসপাতালে যাচ্ছে না। ভয়, চিকিৎসা পাবে কি না, তার উপরে যদি দেশদ্রোহিতার চার্জ দেওয়া হয়! যেখানে বিজেপির শাসন, সেখানে গুজরাত তৈরি করতে চাওয়া হচ্ছে। তখন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন মোদি, প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী। এখন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগি আদিত্যনাথ ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কৌশলটা এ রকম: এক জন আক্রমণাত্মক হয়ে বলবেন, অন্য জন চুপ। এখনও সেটাই হচ্ছে। এই মুহূর্তে একটা লেখার মধ্যে রয়েছি। লেখার সময় একটা অন্য রকম হয়। দেখতে পাই, একটা একটা করে জানালা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মাথার মধ্যে একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে— জানালা খোলো! যে ভাবেই হোক।’

ভারত জুড়ে মোদি-বিরোধিতার পরও জনগণের ভোটে বিজেপি’র ক্ষমতায় আসা প্রসঙ্গে বুকারজয়ী লেখক বলেন, “ভোটে জেতা দিয়ে সব কিছুর বিচার হয় না। আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থায় বড় গলদ রয়েছে। অম্বেডকরের ‘পুণে অ্যাক্ট’-এর নীতিকে খারিজ করা হয়েছিল সংখ্যালঘুদের দমিয়ে রাখতে। নয়তো নির্বাচন জেতা কঠিন হত। সেই সময়েও কিন্তু সরকার সবার মনের মতো ছিল না। আজকের প্রতিবাদ শুধু এনআরসি, সিএএ-র বিরোধিতায় নয়। অর্থনৈতিক মন্দা, উচ্চশিক্ষার অবনতি, বেসরকারিকরণ— পরিস্থিতি ভয়াবহ। নির্বাচন তো অনেক দেরি। তত দিনে দেশের অবস্থা এতটাই বিগড়ে যাবে যে আর আগের অবস্থায় ফেরানো যাবে না।” 

জেএনইউ-তে এনপিআর-এ ভুল তথ্য দেওয়ার আহ্বানের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এনপিআর কিন্তু আদতে এনআরসি-র ডাটাবেস। আমি বলেছিলাম, ঘরে ঘরে এসে প্রশ্ন করলে কী করা উচিত। সবাই বলছে বয়কট করতে, আমি হাসির ছলে বলেছি- যে কোনও নাম দিয়ে দাও।’

রাজনীতিতে আসার বিষয়ে অরুন্ধতী বলেন, ‘একেবারেই না। লেখকের ভূমিকাটা উল্টো বলেই আমার মনে হয়। মনে হয়, অপ্রিয় কথাগুলো কে বলবে? কেউ বড় সিনেমা বানালে তাকে চুপ থাকতে হয়, কারণ তিনি ব্যবসা করে খাচ্ছেন। বলিউডের বেশির ভাগ মানুষ তাই চুপ। এমন লেখকও আছেন। কিন্তু আমি নিজের কাজটা ভুলতে পারি না। অনেকে মনের মধ্যে সেন্সরশিপ তৈরি করে বসে আছেন। ক্ষমতাতোষণের বাইরে বেরিয়ে কথা বলার সাহস নেই। এটি বিপজ্জনক প্রবণতা।’

লেখায় সমকালীন রাজনীতির বয়ান তৈরির বিষয়ে তিনি বলেন, “ফিকশন আমায় রাজনীতি শিখিয়েছে। ‘গড অব স্মল থিংস’-এর চরিত্র রাজনীতি বুঝতে শিখিয়েছে লেখার ধাপে ধাপে। আবার ‘দ্য মিনিস্ট্রি অব আটমোস্ট হ্যাপিনেস’ লিখছি যখন, তখনও ভাবিনি, এই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়েই যেতে হবে! কখনও কখনও ভয় লাগে, যা আমি আগে লিখেছি, এখন হুবহু ঘটছে। কাশ্মিরে গিয়ে দেখি, সব ব্যবসা শেষ হতে বসেছে। গবেষকরা কাজ করতে পারছেন না। পর্যটন বসে গিয়েছে। ইন্টারনেট বন্ধ। প্রশাসন বলে কিছু নেই। মনে হচ্ছিল, এই সরকার যদি কাশ্মিরে এনআরসি চায়, কী হতে পারে। ওখানকার মানুষ তো বলবেন, নাগরিকত্ব চাই না! তখন?”

জেএনইউ নিয়ে বিজেপির অসন্তোষের কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, “জেএনইউ শিক্ষার্থীদের ‘বামপন্থী’ তকমা দেওয়া হয়। সমস্যাটা ‘বাম’ নিয়ে নয়। সমস্যা হলো, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক দলিত শিক্ষার্থী শিক্ষিত হয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠা পাচ্ছেন। ফলে ব্রাহ্মণ্যবাদ ভয় পাচ্ছে। বার বার ওই বিশ্ববিদ্যালয়কে নিশানা করার মূল কারণ জাতপাত। শিক্ষাকে বেসরকারিকরণের অর্থ, আমার মতে, শিক্ষাকে ব্রাহ্মণ্যবাদী করে তোলা। অন্য দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, মোদি আর শাহিন বাগের মধ্যে একটা বেছে নিতে। মন্ত্রী প্রকাশ্যে বলছেন, ‘গোলি মারো শালো কো!’ তাই যারা প্রতিবাদীদের গুলি ছুড়ছে, তারা ভাবছে সরকার এটাই চাইছে। তবে এভাবে প্রতিবাদ থামানো যায় না। মানুষ প্রতিরোধ তৈরি করে অস্তিত্বরক্ষার প্রশ্নে।”

 

/এএ/
সম্পর্কিত
ট্রাম্পের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছেন মোদি, জানালেন কারণ
প্রয়াত সাহিত্যিক প্রফুল্ল রায়
ইসরায়েলকে ক্যানসারের সঙ্গে তুলনা, ইরানের পাশে উ. কোরিয়া
সর্বশেষ খবর
গাজীপুরে পলিথিন কারখানায় টাস্কফোর্সের অভিযান, কারাদণ্ড ও মামলা দায়ের
গাজীপুরে পলিথিন কারখানায় টাস্কফোর্সের অভিযান, কারাদণ্ড ও মামলা দায়ের
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার কথা জানালেন ট্রাম্প
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার কথা জানালেন ট্রাম্প
নেই ইডিএস স্ক্যানার, ধার করে কার্গো ফ্লাইট চালুর ভাবনা
নেই ইডিএস স্ক্যানার, ধার করে কার্গো ফ্লাইট চালুর ভাবনা
কানাডায় বাংলাদেশি নারীর মৃত্যু: ৮ মাসেও খোলেনি রহস্যের জট
কানাডায় বাংলাদেশি নারীর মৃত্যু: ৮ মাসেও খোলেনি রহস্যের জট
সর্বাধিক পঠিত
ট্রাম্পের সমালোচনার পর ইরান নিয়ে সুর পাল্টালেন তুলসি গ্যাবার্ড
ট্রাম্পের সমালোচনার পর ইরান নিয়ে সুর পাল্টালেন তুলসি গ্যাবার্ড
ট্রাম্পের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছেন মোদি, জানালেন কারণ
ট্রাম্পের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছেন মোদি, জানালেন কারণ
ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র, মার্কিন গোয়েন্দা রিপোর্ট মানছেন না ট্রাম্প
ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র, মার্কিন গোয়েন্দা রিপোর্ট মানছেন না ট্রাম্প
‘জুলাই যোদ্ধাকে’ মারধরের অভিযোগে এসআই বরখাস্ত
‘জুলাই যোদ্ধাকে’ মারধরের অভিযোগে এসআই বরখাস্ত
থানায় থাকা ট্রাঙ্কের তালা খুলে বের করা হয় এইচএসসির প্রশ্নপত্র
থানায় থাকা ট্রাঙ্কের তালা খুলে বের করা হয় এইচএসসির প্রশ্নপত্র