X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১
পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি

ফ্রন্টফুটে তৃণমূল, সাড়া জাগিয়েও ব্যাকফুটে বিজেপি

কলকাতা প্রতিনিধি
৩১ ডিসেম্বর ২০২১, ২০:৪৯আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২১, ২০:৪৯

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে ২০২১ একটি স্মরণীয় বছর হয়ে রইলো। বছরে শেষে এসে রাজনৈতিক সূচকে দেখা যাচ্ছে, শুরুতে যে উদ্বেগ আর মসনদ হারানো ভয় নিয়ে শুরু করেছিল তৃণমূল, তা অস্তমিত। বরঞ্চ লোকসভা ভোটের পর থেকে বিধানসভা নির্বাচনের আগে পশ্চিমবঙ্গে পালাবদলের যে ঝড় তুলেছিল বিজেপি, তা রুখে দিয়ে যোজন দূরত্বে এগিয়ে তৃণমূল। অপর দিকে, একের পর এক ভোটে মর্মান্তিক হারের স্বীকার হওয়া বামেরা শেষ দিকে এসে কিছুটা হলেও অক্সিজেন পেয়েছে। 

 

এগিয়ে তৃণমূল

২০১৯-এর লোকসভা ভোটে অগ্রযাত্রা নিয়ে বছর শুরু করেছিল মুরলীধর সেন লেনের কর্তারা। ব্যাপক জনসংযোগ আর ঘন ঘন মোদি-শাহ থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতাদের আগমন, তৃণমূলের মন্ত্রী থেকে শুরু করে হেভিওয়েটদের দলবদল পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছিল। গেরুয়া শিবিরের নবান্ন দখলের প্রত্যাশার ফানুস বিধানসভা ভোট যত এগিয়ে আসছিল তত চওড়া হচ্ছিল। শাসক তৃণমূলের সঙ্গে ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে পাল্লা দিয়ে বিজেপি এতটাই আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছিল। খোদ অমিত শাহ প্রতিটি সভায় বলতে শুরু করেন, ‘ইস বার, দু’শো পার।’ ২০২১ সালের ভোট বিরোধীদের চাহিদা মতোই ব্যাপক কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে আট দফায় করা হয়েছিল। প্রতিটি দফার শেষে কখনও দিলীপ ঘোষ, কখনও বা মুকুল রায় বলেছিলেন, এবার তৃণমূলের থেকে আমরা এতটা আসনে এগিয়ে গেলাম। শুধু তাই নয়, ভোটের পরেই মন্ত্রীসভা গঠনের তালিকাও প্রস্তুত করে ফেলেছিল গেরুয়া শিবির। এমনটাই সূত্রের খবর ছিল। কিন্তু বিধিবাম। ফল বের হওয়ার পর দেখা গেলো তৃণমূল ব্যাপক ভোটে জিতে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে তৃতীয়বারে মতো নবান্ন দখল করলো। সোজা বাংলায়, মমতা-অভিষেক আর ভোট কুশলী পিকের রণনীতিতে মুখ থুবড়ে পড়ল গেরুয়া শিবিরের ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন। 

ফ্রন্টফুটে তৃণমূল, সাড়া জাগিয়েও ব্যাকফুটে বিজেপি

পিছিয়ে বিজেপি

তৃণমূল সর্বধর্ম, সর্বভাষাভাষীর মানুষের ভোট পেয়েছে। বাংলার মানুষ মমতা সরকারের একাধিক জনকল্যাণমুখী প্রকল্পগুলোকে সমর্থন করেছেন। যদিও বিজেপি প্রচার করেছিল এসব কেন্দ্রীয় প্রকল্প, রাজ্য সরকার শুধু নাম বদলে দিয়েছে। কিন্তু দেখা গেলো, বাংলার মানুষের মধ্যে এর কোনও প্রভাবই পড়েনি। অভিযোগ উঠেছিল, কাটমানি, সিন্ডিকেট আর তোলাবাজির, তাও ভোটব্যাক্সে বিরোধীর ভোট বাড়ায়নি। বিজেপির হিন্দুত্বের প্রচারও সেভাবে দাগ কাটেনি জনমানসে। মাত্র ৭৭ আসনে এসে থামতে হয়েছে তাদের। একুশের ভোটের আগে তৃণমূল থেকে দলবদল করে এসে ভোটে প্রার্থী হয়ে হেরে যাওয়া সব্যসাচী দত্ত, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু ফিরে যাননি, প্রথমবার বিধায়ক হয়ে দল ছেড়ে চলে গিয়েছেন বাংলার চানক্য বলে পরিচিত মুকুল রায়ও। রাজনৈতিক মহলের মতে, বুথভিক্তিক সংগঠন না থাকায় বিজেপির এই করুণ দশা। ভোটব্যাংক তৈরি হলেও সংগঠন তৈরি হয়নি বাংলাজুড়ে বিজেপির। অপরদিকে, ৪ বিধায়ক থেকে ৭৭ হয়েছে এই ময়নাতদন্তেই খুশি মুরলি ধর সেন লেনের কর্তারা। পরে উপনির্বাচনগুলোতে হার এবং সদ্য সমাপ্ত কলকাতা পৌরসভা ভোটে বেশিরভাগ ওয়ার্ডে জামানত চলে গিয়ে, বছরের শেষদিকে এসে রাজনীতিতে ব্যাকফুটে বিজেপি। 

পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির এই করুণদশার সুযোগ নিয়ে তৃণমূল এখন ভিন রাজ্যে সংগঠন বিস্তারের চেষ্টা শুরু করেছে। মোদি বিরোধী মুখ হয়ে উঠার চেষ্টা করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০২৪ সালে কংগ্রেসকে সরিয়ে দেশের রাজনীতিতে বিজেপির বিরুদ্ধে প্রধান শক্তি হওয়ার স্বপ্ন এখন তৃণমূলের চোখে।

 

আশার আলোয় বামেরা

২০১১ সালের তৃণমূল সরকার পশ্চিমবঙ্গে আসার পর থেকে বামেদের রক্তক্ষরণ শুরু হয়। কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করেও এই রক্তক্ষরণ ঠেকাতে পারেননি আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের কর্তারা। লোকসভা ভোটের পর থেকে রাজ্যের রাজনীতিতে প্রধান বিরোধী শক্তি হয়ে উঠতে শুরু করে বিজেপি। তৃণমূল-বিজেপি একই শক্তি! এই স্লোগান দিয়ে বামেরা আরও কোনঠাসা হয়ে পড়ে। বিধানসভায় জোটের পরাজয় শুধু ঘটেনি, পশ্চিমবঙ্গের সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাসে এই প্রথম কোনও বাম বিধায়ক বিধানসভা যেতে পারেননি। পরের উপনির্বাচনগুলো থেকে বামফ্রন্টে তীব্র দ্বন্দ্বের কারণে কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে ফের ‘একলা চলো রে’ নীতিতে ফিরে আসা তারা। দেখা গেছে, তাদের ভোট শতাংশে হলেও সামান্য বেড়েছে। কলকাতা পৌরসভা ভোটে তারা নিশ্চিহ্ন না হয়ে দু’টি ওয়ার্ড পেয়ে, বিজেপির থেকে ভোট শতাংশে এগিয়েছে। বছরের শেষে এসে বামেরা কিছুটা আশার আলো দেখতে পেয়েছে।

 

সরব ও নীরব যারা

এবছর রাজনীতি থেকে হারিয়ে গিয়েছেন কলকাতার সাবেক মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে নাম লেখালেও, শেষ পর্যন্ত রাজনীতি থেকে সন্ন্যাস নিয়েছেন তিনি। প্রায় হারিয়ে গিয়েছেন মুকুল রায়। শারিরীকভাবে অসুস্থ মুকুল রায় কখন কী বলছেন, তা নিয়ে চরম অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে তৃণমূলকে। বিজেপির প্রবীন নেতা তথাগত রায়, দলের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে একের পর এক কামান দেগেছেন সারা বছর ধরেই। সামনের সারিতে চলে এসেছেন তৃণমূলের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল থেকে বিজেপিতে আসা শুভেন্দু অধিকারী। তৃণমূল নেতা মদন মিত্র এবছরও যথেষ্ট সক্রিয় ছিলেন স্যোশাল মিডিয়ায়। ভোটে হারের পর দিলীপ ঘোষ বিজেপির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি হয়ে আপত দিল্লিমুখি হলেও বাকযুদ্ধ থামাননি। বামেদের বেশকিছু নতুন মুখ বিধানসভা ভোটে দেখা গেলেও, হারার পর তারা আগের মতো সক্রিয় নন। বামেদের ব্যাটন সামলাচ্ছেন রবীন দেব ও সুজন চক্রবর্তী। কংগ্রেসেকে একাই সামলেছেন সাংসদ অধীর চৌধুরী।

আগামী বছর, পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে মূলত প্রতিযোগিতা হবে প্রধান বিরোধী দল কে হবে তা নিয়ে। বিজেপি কি পারবে ফের তার অবস্থানে ফিরতে, নাকি বামেরা বিকল্প হয়ে উঠবে? এখন সেটাই দেখার।

 

/এএ/
সম্পর্কিত
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
পশ্চিমবঙ্গে হাইকোর্টে নজিরবিহীন রায়, ২২ হাজার সরকারি চাকরি বাতিল!
ভারত সফর স্থগিত করলেন ইলন মাস্ক
সর্বশেষ খবর
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা