ভারতের সঙ্গে বিরোধে পাকিস্তানকে সমর্থন দেয় তুরস্ক। এর ফলে ফলে সৃষ্টি হওয়া ক্রমবর্ধমান ক্ষোভের মধ্যেই কসমেটিকস থেকে শুরু করে পোশাকসহ বিভিন্ন তুর্কি পণ্য বয়কট করতে শুরু করেছে বড় বড় অনলাইন ফ্যাশন খুচরা বিক্রেতারা। এমনকি ছোট ছোট ভারতীয় মুদি দোকানগুলোও তুর্কি চকলেট, কফি, জ্যামসহ বিভিন্ন পণ্য বয়কট করছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে জঙ্গি হামলার জবাবে পাকিস্তানে সামরিক অভিযান চালায় ভারত। এ সময় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট তাইয়েপ এরদোয়ান পাকিস্তানের প্রতি প্রকাশ্যে সংহতি প্রকাশ করেন। চার দিন ধরে সীমান্তে লড়াই চলার পর একটি যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়। তুরস্ক পাকিস্তানের মতোই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ।
অল ইন্ডিয়া কনজ্যুমার প্রোডাক্টস ডিস্ট্রিবিউটরস ফেডারেশন ভারতজুড়ে ১ কোটি ৩ লাখ ছোট ছোট মুদি দোকানে পণ্য সরবরাহ করে। সোমবার (১৯ মে) এই ফেডারেশন জানায়, তারা সব ধরনের তুর্কি পণ্যের ওপর ‘অনির্দিষ্টকালীন এবং সম্পূর্ণ বয়কট’ শুরু করছে। এর ফলে দেশটিতে তুরস্কের চকলেট, ওয়েফার, জ্যাম, বিস্কুট ও ত্বক পরিচর্যা পণ্য বিক্রি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
তিনটি সূত্র এবং ওয়েবসাইট পর্যালোচনার মাধ্যমে জানা গেছে, ওয়ালমার্ট-সমর্থিত ফ্লিপকার্ট এবং বিলিয়নিয়ার মুকেশ আম্বানির রিলায়েন্সের মালিকানাধীন ভারতীয় ফ্যাশন ওয়েবসাইটগুলোও বহু তুর্কি পোশাক ব্র্যান্ড সরিয়ে ফেলেছে।
এক সূত্র জানিয়েছে, ফ্লিপকার্টের ফ্যাশন ওয়েবসাইট মিন্ত্রা মহিলাদের পোশাকের জন্য পরিচিত তুর্কি ব্র্যান্ড- ট্রেন্ডিওল, স্ট্রিট ও ক্যাজুয়াল পোশাক ব্র্যান্ড-এলসি ওয়াকিকি এবং জিন্স প্রস্তুতকারী মাভি’র তালিকা সরিয়ে ফেলেছে।
আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, মিন্ত্রা ‘জাতীয় স্বার্থে’ এই ব্র্যান্ডগুলো সরিয়ে ফেলেছে। এতে ওয়ালমার্টের কোনও ভূমিকা ছিল না।
রিলায়েন্সের ফ্যাশন ওয়েবসাইট আজিও- তুর্কি ব্র্যান্ড ট্রেন্ডিওল, কোটন, এলসি ওয়াকিকিসহ বেশিরভাগ ব্র্যান্ড সরিয়ে ফেলেছে। সোমবার অনেক পণ্যকেই ‘স্টক শেষ’ হিসেবে দেখানো হয়েছে।
ফ্লিপকার্ট, রিলায়েন্স রিটেইল এবং তুর্কি ব্র্যান্ড ট্রেন্ডিওল, এলসি ওয়াকিকি, কোটন এবং মাভি-কেউই রয়টার্সের মন্তব্যের অনুরোধের জবাব দেয়নি।
ভারত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে তুরস্ককে বয়কট করার নির্দেশ দেয়নি। বছরে ভারত তুরস্ক থেকে ২.৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে। এর বেশিরভাগই খনিজ জ্বালানি ও মূল্যবান ধাতু।
তবে ভোক্তাদের বয়কট তবুও তাৎপর্যপূর্ণ হতে পারে। কারণ কনজ্যুমার্স ফেডারেশন জানিয়েছে, তাদের এই নিষেধাজ্ঞা প্রায় ২ হাজার কোটি রুপি মূল্যের খাদ্য পণ্যের ওপর প্রভাব ফেলবে।
ট্রেডিং ইকোনমিকস ওয়েবসাইট অনুসারে, গত বছর তুরস্ক থেকে আমদানি করা পোশাকের মূল্য ছিল ৮১ মিলিয়ন ডলার।
ভারতের অন্যতম বড় আপেল উৎপাদনকারী রাজ্য হিমাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুক্কু, বলেন, তিনি তুরস্ক থেকে আপেল আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা চাওয়ার পরিকল্পনা করছেন, যার মূল্য ছিল প্রায় ৬০ মিলিয়ন ডলার।
গত সপ্তাহে ফ্লিপকার্ট জানায়, ‘ভারতের জাতীয় স্বার্থ ও সার্বভৌমত্বের প্রতি সংহতি প্রকাশে’ তারা তুরস্কগামী ফ্লাইট, হোটেল এবং ছুটির প্যাকেজ বুকিং বন্ধ করছে।
ভারতীয়রা তুরস্ক সফরের পরিকল্পনা বাতিল করছেন এবং নয়াদিল্লি ভিত্তিক তুর্কি বিমান পরিষেবা প্রতিষ্ঠান সেলেবির নিরাপত্তা ছাড়পত্র বাতিল করেছে।