X
বুধবার, ০৮ মে ২০২৪
২৫ বৈশাখ ১৪৩১

আরও ২৫০ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাচ্ছে সৌদি আরব

বিদেশ ডেস্ক
২১ জানুয়ারি ২০১৯, ০৯:৪৩আপডেট : ২১ জানুয়ারি ২০১৯, ১৩:৪০

সৌদি আরব ২৫০ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে ২০১৯ সালে দ্বিতীয়বারের মতো রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ পাঠাবে দেশটি। রোহিঙ্গা অ্যাক্টিভিস্টদের একটি গ্রুপ কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে এই তথ্য জানিয়েছেন। বাংলাদেশে পৌঁছার পর এই রোহিঙ্গাদের গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। 

আরও ২৫০ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাচ্ছে সৌদি আরব

ফ্রি রোহিঙ্গা কোয়ালিশনের প্রচারণা সমন্বয়কারী নায় সান লুইন জানান, সৌদি আরবে প্রায় ৩ লাখ রোহিঙ্গা বাস করছে। তিনি সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছে রোহিঙ্গাদের ফেরত না পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তার আশঙ্কা বাংলাদেশে পৌঁছার পরপরই কারাগারে পাঠানো হবে ফেরত পাঠানো রোহিঙ্গাদের।

সান লুইন বলেন, রোহিঙ্গাদের বেশিরভাগেরই বসবাসের অনুমতি রয়েছে এবং সৌদি আরবে বৈধভাবে বাস করতে পারে। কিন্তু জেদ্দাহর শুমাইসি কারাগারে বন্দিদের সঙ্গে অন্য রোহিঙ্গার মতো আচরণ করা হয়নি। অপরাধীর মতো আচরণ করা হচ্ছে।

এই অ্যাক্টিভিস্টের সংগ্রহ করা একটি ভিডিও অনুসারে, কয়েক বছর আগে সৌদি আরব পৌঁছা এসব রোহিঙ্গাদের জেদ্দাহ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেওয়া হয়েছে রবিবার। এখান থেকে তাদের ঢাকাগামী ফ্লাইটে তুলে দেওয়া হবে।

সান লুইন জানান, রবিবার মধ্যরাতে বা সোমবার সন্ধ্যায় এসব রোহিঙ্গাদের বহনকারী ফ্লাইট ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিতে পারে। তিনি জানান, অনেক রোহিঙ্গাই ভুয়া কাগজপত্র সংগ্রহ করে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত ও নেপালের মতো দেশের পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি আরবে প্রবেশ করেছে। যখন এই রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পৌঁছাবে তাদের কারাগারে পাঠানো হতে পারে।  সৌদি আরবের উচিত এই প্রত্যর্পণ বন্ধ করে তাদের বসবাসের অনুমতি দেওয়া। যেমনটা এদের আগে আসা রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে করা হয়েছে।

মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয় ১৯৮২ সালে। এর ফলে রাখাইনে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বাসবাসকারী রোহিঙ্গারা দেশহীন হয়ে পড়েছে। মিয়ানমারের ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন অনুসারে রোহিঙ্গাদের দেশটির ১৩৫টি জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্ভূক্ত হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। এর ফলে তারা শিক্ষা, কাজ, ভ্রমণ, বিয়ে, ভোট, ধর্ম পালন ও স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত।

২০১১ সালের পর যেসব রোহিঙ্গা সৌদি আরব প্রবেশ করেছেন তাদের বসবাসের অনুমতি দেওয়া বাতিল করেছে দেশটি।

সান লুইন জানান, বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন গত দুই বছর ধরে সৌদি আরবের কর্মকর্তা ও কূটনীতিকদের এই রোহিঙ্গাদের ফেরত না পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছে।

২০১৮ সালে মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রিয়াদ সফরের পর সৌদি আরব রোহিঙ্গা বন্দিদের ঢাকায় পাঠানোর প্রস্তুতি শুরু করে।

অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে প্রকাশিত প্রতিবেদনে মিডল ইস্ট আই জানায়, কোনও অভিযোগ ছাড়াই সৌদি আরবে বেশ কয়েক বছর ধরে আটক রাখা হয়েছে কয়েকশ রোহিঙ্গা পুরুষ, নারী ও শিশুদের। এদের বেশিরভাগ ২০১১ সালের পর মিয়ানমারের নিপীড়ন এড়াতে ও জীবিকার তাগিদে তেল সমৃদ্ধ দেশটিতে পৌঁছায় ভুয়া পাসপোর্ট নিয়ে।  ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ইতোমধ্যে সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা পাঠানো শুরু হয়ে গেছে বলে জানান দেশটিতে আটক রোহিঙ্গারা। তারা জানান প্রতিদিন ৫ থেকে ১০ জন রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে।

সর্বশেষ  ৭ জানুয়ারি সৌদি আরবের জেদ্দা থেকে বাংলাদেশ পাঠানো হয়েছে ১৩ রোহিঙ্গাকে। ওই দিন রাত ২টার দিকে সৌদি এয়ারলাইন্সের এসভি ৮০২ ফ্লাইটে তারা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়। পরে তাদেরকে ইমিগ্রেশন পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়।

উল্লেখ্য, ১৯৫১ সালে রিফিউজি কনভেনশন অনুযায়ী কোনও শরণার্থী নীতি নেই সৌদি আরবের। ফলে শরণার্থীদের কাজের অনুমতি কিংবা চলাচলের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হয় না দেশটির।  দক্ষিণ এশিয়ার বাইরে সৌদি আরবেই সবচেয়ে বেশি রোহিঙ্গার বসবাস। ১৯৭৩ সালে বাদশা ফয়সালের সময় মিয়ানমারে সহিংসতার শিকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া হয়।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৭ লাখেরও বেশি মানুষ। আগে থেকেই আরও কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে বসবাস করছে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ২০১৭ সালের নভেম্বরে ‘অ্যারেঞ্জমেন্ট অন রিটার্ন অব ডিসপ্লেসড পার্সন্স ফ্রম রাখাইন স্টেট’ নামে  বাংলাদেশ-মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তি সম্পন্ন হয়। তবে এখন পর্যন্ত প্রত্যাবাসন চুক্তির আওতায় একজন রোহিঙ্গাকেও ফিরিয়ে নেওয়ার সুনিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ বলছে, এখন পর্যন্ত কোনও রোহিঙ্গাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফিরিয়ে নেয়নি মিয়ানমার।

 

/এএ/
সম্পর্কিত
মধ্যপ্রাচ্যেও চালু হচ্ছে শেনজেন স্টাইলের ভিসা?
রোহিঙ্গাদের জন্য আরও তহবিল চাইলেন প্রধানমন্ত্রী
রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলা চালাতে ওআইসির সহযোগিতা চাইলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
সর্বশেষ খবর
পিএসজিকে হারিয়ে ফাইনালে ডর্টমুন্ড
চ্যাম্পিয়নস লিগপিএসজিকে হারিয়ে ফাইনালে ডর্টমুন্ড
রাজস্থানকে হারিয়ে প্লে অফের আশা বাঁচিয়ে রাখলো দিল্লি
রাজস্থানকে হারিয়ে প্লে অফের আশা বাঁচিয়ে রাখলো দিল্লি
ঢাকা আসছেন মার্কিন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু
ঢাকা আসছেন মার্কিন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু
প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন আজ
প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন আজ
সর্বাধিক পঠিত
ব্যারিস্টার সুমনকে একহাত নিলেন চুন্নু
ব্যারিস্টার সুমনকে একহাত নিলেন চুন্নু
ছুড়ে দেওয়া সব তীর সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা
ছুড়ে দেওয়া সব তীর সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা
শনিবার স্কুল খোলা রাখার প্রতিবাদে শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণা
শনিবার স্কুল খোলা রাখার প্রতিবাদে শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণা
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি, বিএনপির প্রস্তুতি কী?
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি, বিএনপির প্রস্তুতি কী?
আসছে ব্যয় কমানোর বাজেট
আসছে ব্যয় কমানোর বাজেট