ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলের কত জন সেনা ও বেসামরিককে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে গেছে তা সম্পর্কে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী স্পষ্ট করে কিছু বলেনি। বিভিন্ন পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমে ইসরায়েলি সূত্রকে উদ্ধৃত করে বলা হচ্ছে, এই সংখ্যা প্রায় ১০০ হতে পারে। হামাস বলেছে, শিগগিরই তারা ইসরায়েলি বন্দিদের সংখ্যা প্রকাশ করবে। ফিলিস্তিনিদের হাতে বন্দি ইসরায়েলি বা তাদের মরদেহ ইসরায়েলে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠতে পারে।
ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের পরিস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে উগ্রডানপন্থি সরকারের আমলে ফিলিস্তিনি বন্দিদের ওপর নিপীড়ন বেড়েছে।
গত কয়েক বছর ধরে ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন জিভির ইসরায়েলি কারাগারগুলোতে ফিলিস্তিনি বন্দিদের অধিকার খর্ব করে যাচ্ছেন। দেশটির কুখ্যাত কারাগার নাফাতে ফিলিস্তিনি বন্দিদের তাদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে দেওয়া হয় না। বেন জিভির এমন কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন যার ফলে ফিলিস্তিনিদের কারাবাস কঠিন হয়ে পড়ছে।
ফিলিস্তিনের একটি মানবাধিকার সংগঠনের তথ্য অনুসারে, ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে প্রায় ৫ হাজার ২০০ রাজনৈতিক বন্দি রয়েছেন। ইসরায়েলের বৈষম্যমূলক ব্যবস্থায় সামরিক আদালতে ফিলিস্তিনিদের দোষী সাব্যস্তের হার ৯৯ দশমিক ৭ শতাংশ। বিপরীতে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলিরা হামলা করলে তাদের খুব কম সাজা দেওয়া হয়। ফিলিস্তিনি বন্দিদের প্রায় ২৫ শতাংশের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই। তাদেরকে বিতর্কিত প্রশাসনিক আটক হিসেবে বন্দি রাখা হয়েছে।
অতীতের বন্দি বিনিময়
হামাসের সামরিক শাখার প্রধান মোহাম্মদ দেইফ বলেছেন, ইসরায়েল সম্প্রতি মানবিক বন্দি বিনিময় চুক্তিতে অংশ নিতে রাজি হয়নি, এটি শনিবারের হামলার অন্যতম কারণ।
তিনি বলেছেন, ২০ বছরের বেশি সময় ধরে আমাদের কয়েক শ’ বন্দি অন্ধকার কক্ষে কাটাচ্ছে। ক্যানসার ও বিভিন্ন রোগে আমাদের শত শত ভাই ও বোন বিধ্বস্ত। চিকিৎসায় অবহেলা ও পরিকল্পিতভাবে ধীরে ধীরে হত্যা প্রক্রিয়ার কারণে অনেকে মারা গেছেন।
অতীতে বন্দি ইসরায়েলিরা বন্দি বিনিময় আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। ইসরায়েলিদের মুক্তি দেওয়ার বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্ত করে আনা হয়েছিল।
২০০৬ সালে ইসরায়েলি সেনা গিলাদ শালিতকে বন্দি করে হামাস। তাকে পাঁচ বছর বন্দি রাখার পর ২০১১ সালে বন্দি বিনিময়ের আওতায় মুক্তি দেওয়া হয়। এই বিনিময় শালিত চুক্তি হিসেবে পরিচিত। তাকে ফিরে পাওয়ার বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগারে থাকা ১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছিল ইসরায়েল।
কত জন ইসরায়েলিকে বন্দি করেছে হামাস তার ওপর ভিত্তি করে চলমান সংঘাত অবসানের পর আবারও এমন বন্দি বিনিময়ের জন্য দরকষাকষি করতে পারে হামাস। ২০১১ সালের ঘটনার পর বন্দিদের মুক্তির বিনিময়ে চড়া মূল্য দিতে ইসরায়েল সরকার প্রস্তুত বলে মনে করতে পারে ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীটি।
২০১৪ সাল থেকে গাজায় চার ইসরায়েলির মরদেহ রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এদের মধ্যে সংঘাতের সময় দুই ইসরায়েলি সেনাকে বন্দি করেছিল ফিলিস্তিনিরা। অপর দুই বেসামরিক কীভাবে গাজায় প্রবেশ করেছিল তা অস্পষ্ট।
গত চার দশকে ইসরায়েল ও লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর মধ্যে একাধিকবার বন্দি বিনিময় হয়েছে। ১৯৮৫ সালে জিবরিল চুক্তির আওতায় ইসরায়েল ১ হাজার ১৫০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি ও লেবাননি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছিল। বিপরীতে ১৯৮২ সালের যুদ্ধের সময় বন্দি হওয়া তিন ইসরায়েলি সেনাদের মুক্তি দিয়েছিল হিজবুল্লাহ। এছাড়া ২০০৪ সালেও দুই পক্ষের মধ্যে বন্দি বিনিময় হয়।
সূত্র: মিডল ইস্ট আই