X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

গাজা যুদ্ধ শেষে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী সৌদি আরব

নাছির আহমেদ
১২ জানুয়ারি ২০২৪, ২১:৩০আপডেট : ১৫ জানুয়ারি ২০২৪, ০৩:৩০

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন চলমান থাকার মধ্যেই দেশটির সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়টি আবারও আলোচনায় রয়েছে। অক্টোবরে দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের হামলার আগে দুই দেশ সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু ওই হামলার পর সেই আলোচনায় ভাটা পড়ে। কিন্তু সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সৌদি আরব সফর ও যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূতের মন্তব্যে বিষয়টি আবারও আলোচনায় এসেছে।

মার্কিন কর্মকর্তাদের দাবি, গাজায় যুদ্ধের অবসান হলে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী সৌদি আরব। আর সৌদি কর্মকর্তারা সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে অস্বীকৃতি না জানালেও বলছেন, এমন কিছুর জন্য স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সুযোগ থাকতে হবে।

যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত প্রিন্স খালিদ বিন বান্দার আল সৌদ বলেছেন, গাজা যুদ্ধ বন্ধের পর ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে আগ্রহী সৌদি আরব। তবে যেকোনও চুক্তির আলোচনাকে অবশ্যই ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিকে নিয়ে যেতে হবে।

মুসলিম বিশ্ব এবং মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরব। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার পর দেশটিকে কখনোই আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়নি রিয়াদ। এই সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চুক্তি হবে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলের জন্য বড় অগ্রগতি। যদিও ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইনসহ কয়েকটি আরব দেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে ইসরায়েল। কিন্তু তেল আবিব মনে করে, সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন হলে আরব বিশ্বে তাদের স্বীকৃতি বাড়বে। ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র এমন সম্পর্ক তৈরির জন্য ত্রিপক্ষীয় আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। 

বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রদূত বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকের একটি চুক্তি কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের নজিরবিহীন হামলার পর তা থমকে গেছে।

সৌদি আরব এখনও বিশ্বাস করে, গাজায় হতাহতের শোচনীয় পরিসংখ্যান থাকা সত্ত্বেও ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। কিন্তু এটা হবে না যদি ফিলিস্তিনের জনগণকে আরও মূল্য দিতে হয়।

এ ছাড়া প্রিন্স খালিদ বিন বান্দার আল সৌদ সতর্ক করেছেন যে গাজায় যে ‘মানবতার বিপর্যয়’ হয়েছিল, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই যুদ্ধ বন্ধ করতে যথেষ্ট উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।

তিনি আরও বলেন, তিনি যুক্তরাজ্যকে মধ্যপন্থা অবলম্বনে দেখতে চান। তিনি চান অন্য সবার যেমন আচরণ, তেমনটি ইসরায়েলের ক্ষেত্রেও হোক। 

গত সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে এক ভাষণে সৌদি আরবের ডি ফ্যাক্টো শাসক যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, ‘প্রতিদিনিই আমরা চুক্তির কাছাকাছি আসছি।’

এ সময় তিনি বলেন, ফিলিস্তিন ইস্যু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সৌদি-ইসরায়েলের মধ্যে যেকোনও চুক্তির মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের জীবন আরও সহজ করতে হবে। তবে ঘোষণায় সেটা বলেননি যে এই অগ্রগতি একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের ওপর নির্ভর করবে।

গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত শুরু হলে ১০ অক্টোবর মোহাম্মদ বিন সালমান বলেছিলেন, তিনি ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের বিস্তার রোধে কাজ করছেন।

সৌদি প্রেস এজেন্সি জানিয়েছিল, ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে যুবরাজ সালমান আরও বলেছেন, ফিলিস্তিনের জনগণের যথোপযুক্ত জীবনযাপনের বৈধ অধিকার অর্জন, আশা-আকাঙ্ক্ষা অর্জন ও ন্যায়সংগত, স্থায়ী শান্তি অর্জনের জন্য তাদের পাশে থাকবে রিয়াদ।

এদিকে ফিলিস্তিনের নেতাদের অবস্থান হলো, ইসরায়েলিরা ফিলিস্তিন না ছাড়লে এই চুক্তি অবশ্যই প্রত্যাখ্যান করতে হবে। তবে ওই মাসের শুরুতে ইসরায়েলের কর্মকর্তারা দাবি করেছিলেন যে, মার্কিন-সমর্থিত সৌদি-ইসরায়েল প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত থাকার জন্য ফিলিস্তিনি নেতারা ব্যক্তিগত চাহিদা ও বিনিময়ে অধিকৃত পশ্চিম তীরের আরও নিয়ন্ত্রণ দাবি করছেন। 

হামাসের হামলার কয়েক দিন পর সৌদি কর্তকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রকে ত্রিমুখী আলোচনা বিরত রাখতে বলেছেন। দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাস যোদ্ধাদের হামলায়  ১২০০ নিহত ও ২৪০ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়। জবাবে গাজায় বিমান ও স্থল হামলা শুরু করে ইসরায়েল। যা এখনও চলমান রয়েছে।

গাজায় হামাস পারিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, গাজায় হামাসকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে এখন পর্যন্ত ২৩ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।

বিবিসিকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত প্রিন্স খালিদ বিন বান্দার আল সৌদ

উত্তেজনার মধ্যে অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের মধ্যপ্রাচ্য সফর
বৃহস্পতিবার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত শুরুর পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যপ্রাচ্যে চতুর্থ এবং ইসরায়েলে পঞ্চম সফর করেছেন। এর আগে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সফরেও তিনি সঙ্গী ছিলেন।

৫ জানুয়ারি তুরস্কে পৌঁছে সফর শুরু করেন ব্লিঙ্কেন। এরপর তিনি একে একে গ্রিস, জর্ডান, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, বাহরাইন, ইসরায়েল ও পশ্চিম তীর সফর করেন। বৃহস্পতিবার তিনি মিসরে পৌঁছান।

গাজায় তিন মাসে ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় প্রায় ব্যাপক বেসামরিক প্রাণ হারিয়েছেন। যাদের বেশিরভাগ শিশু ও নারী। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন  ও গণহত্যার অভিযোগ ওঠেছে। এমন পরিস্থিতিতেও ইসরায়েল সফরে দেশটির প্রতি মার্কিন সহযোগিতা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন ব্লিঙ্কেন।

গত সোমবার সৌদি যুবরাজের সঙ্গে বৈঠকের পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছেন, তিনি বৈঠকে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয় তুলে ধরেছেন। সৌদি আরবের স্বাভাবিককরণে একটি ‘স্পষ্ট আগ্রহ’ রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বিষয়টি এগিয়ে নেওয়ার সুস্পষ্ট আগ্রহ আছে। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন হবে গাজায় সংঘাতের অবসান ঘটানো। এটিও স্পষ্টভাবে প্রয়োজন যে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জন্য একটি বাস্তব পথ থাকা উচিত।

আবার ৮ জানুয়ারি বিবিসি এবং রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ব্লিঙ্কেন বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের গাজা উপত্যকা ছাড়ার জন্য চাপ দেওয়া যাবে না। তাদের অবশ্যই নিজেদের বাড়িঘরে ফিরতে দিতে হবে।

সম্প্রতি ইসরায়েলের দুজন মন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ ও ইতামার বেন গভির বলেছিলেন, গাজায় বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের বিশ্বের অন্য কোথাও চলে যাওয়া উচিত। ওই দিন কাতার সফরকালে ইসরায়েলি মন্ত্রীদ্বয়ের এমন বক্তব্য নিয়ে নিন্দা জানান ব্লিঙ্কেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার সৌদি রাষ্ট্রদূত প্রিন্স খালিদ বিন বান্দার আল সৌদ বিবিসিকে ওই সাক্ষাৎকারে বলেন, এই চুক্তির জন্য তার দেশের নেতাদের মধ্যে ‘আগ্রহ আছে’। চুক্তিটি বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, এ নিয়ে আমাদের কোনও প্রশ্নই নেই। তবে আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। সুতরাং ৭ অক্টোবরে সৃষ্ট পরিস্থিতি অবসানের পর আমরা এগিয়ে যাব। আমরা স্বাভাবিকীকরণে বিশ্বাস করি। এটি ফিলিস্তিনিদের প্রাণের বিনিময়ে হচ্ছে না।

আল জাজিরা বলছে, গত মঙ্গলবার তেল আবিবে সংবাদ সম্মেলনে ব্লিঙ্কেন জানিয়েছেন, জো বাইডেন প্রশাসন ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবে। তবে তিনি বলেন, গাজায় বেসামরিক লোকজনের হতাহতের সংখ্যা ‘অনেক বেশি’। আমরা চাই, যত দ্রুত সম্ভব এই যুদ্ধের অবসান হোক।’

যা বলছে বিশ্ব
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ব্লিঙ্কেনের এই সফর ‘মুখ রক্ষার’। যুদ্ধের তিন মাস হয়ে গেলেও এর সমাপ্তি এখনও অধরা। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনও পরিকল্পনা নেই।

বিশ্ব মিডিয়াও বলছে, ব্লিঙ্কেনের সফরে গাজায় যুদ্ধ বন্ধের ইঙ্গিত নেই। তবে যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত অবসানে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান খুঁজছে। এই সমাধানে সৌদি আরবের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে।

/এএ/
সম্পর্কিত
গাজায় যুদ্ধবিরতি নাকি রাফাহতে হামলারাজনৈতিক সংশয়ের মুখোমুখি নেতানিয়াহু
মেক্সিকোতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত অন্তত ১৮
মানবাধিকার রেকর্ড নিয়ে জাতিসংঘে সমালোচনার মুখে তালেবান
সর্বশেষ খবর
টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে জাতীয় লজিস্টিক্স নীতি প্রণয়ন
টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে জাতীয় লজিস্টিক্স নীতি প্রণয়ন
গ্রিনপিন সেবা চালু করলো এনসিসি ব্যাংক
গ্রিনপিন সেবা চালু করলো এনসিসি ব্যাংক
রাজনৈতিক সংশয়ের মুখোমুখি নেতানিয়াহু
গাজায় যুদ্ধবিরতি নাকি রাফাহতে হামলারাজনৈতিক সংশয়ের মুখোমুখি নেতানিয়াহু
‘জেসির অভিজ্ঞতা বড় ম্যাচে আম্পায়ারিং করার মতো নয়’
‘জেসির অভিজ্ঞতা বড় ম্যাচে আম্পায়ারিং করার মতো নয়’
সর্বাধিক পঠিত
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ