লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল ও বৈরুতের উপকণ্ঠে বুধবার হিজবুল্লাহর ব্যবহৃত কয়েকশ’ওয়াকিটকি বিস্ফোরিত হয়েছে। এই বিস্ফোরণের ফলে ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানপন্থি গোষ্ঠীটির উত্তেজনাকে আরও তীব্র হয়ে উঠছে। এর একদিন আগে মঙ্গলবার হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর কয়েক হাজার পেজার বিস্ফোরিত হয়েছিল। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, বুধবারের বিস্ফোরণে ১৪ জন নিহত ও প্রায় ৪৫০ জন আহত হয়েছেন।
পেজার বিস্ফোরণে নিহতদের জন্য হিজবুল্লাহর আয়োজিত শোকপ্রকাশের অনুষ্ঠানে বিস্ফোরণ ঘটেছে। দক্ষিণ বৈরুতের উপকণ্ঠ থেকে রয়টার্সের প্রতিবেদক জানান, তিনি দেখেছেন তখন পর্যন্ত বিস্ফোরিত না হওয়া ওয়াকিটকি থেকে দ্রুত ব্যাটালি খুলে ফেলছেন হিজবুল্লাহর সদস্যরা। এগুলোকে ধাতব ব্যারেলের মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়।
লেবাননের রেড ক্রস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানায়, তারা ৩০টি অ্যাম্বুলেন্স টিম দিয়ে বিস্ফোরণ-আক্রান্ত এলাকাগুলোতে কাজ করছে।
মঙ্গলবার পেজার বিস্ফোরণের ফলে হিজবুল্লাহ কিছু সময়ের জন্য অচল হয়ে পড়ে, তবে বুধবার গোষ্ঠীটি ইসরায়েলের কামানের অবস্থানে রকেট নিক্ষেপের কথা জানিয়েছে। পেজার বিস্ফোরণের পর এটি হিজবুল্লাহর প্রথম পাল্টা আঘাত। লেবাননে বিস্ফোরণে তাদের অনেক যোদ্ধা আহত হয়েছেন। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যের এক বৃহত্তর যুদ্ধের আশঙ্কা আরও ঘনীভূত হয়েছে।
বিস্ফোরিত ওয়াকিটকির ছবি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এতে ‘আইকোম’ ও ‘মেড ইন জাপান’ লেখা রয়েছে। আইকোম একটি জাপানভিত্তিক রেডিও যোগাযোগ সরঞ্জাম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান।
একটি গোয়েন্দা সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, হিজবুল্লাহ পাঁচ মাস আগে এই ওয়াকিটকিগুলো কিনেছিল। ওই সময়ে পেজারগুলোও কেনা হয়েছিল।
মঙ্গলবারের বিস্ফোরণে মৃতের সংখ্যা ১২ জনে পৌঁছেছে, যার মধ্যে দু’জন শিশু। ওই হামলায় প্রায় ৩ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে বেশিরভাগই হিজবুল্লাহর যোদ্ধা। ইরানের দূতাবাসের একজন কর্মকর্তাও আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলের সঙ্গে সীমান্তে প্রতিদিন গোলা বিনিময় করছে হিজবুল্লাহ। গোষ্ঠীটি বলেছে, পেজার বিস্ফোরণের প্রতিশোধ হিসেবে তারা ইসরায়েলে আরও হামলা করবে। এই পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে জাতিসংঘ মানবাধিকার-বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক বিস্ফোরণগুলোর স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।
ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ সংঘর্ষ আরও ঘনীভূত হলে তা লেবাননের জন্য ধ্বংসাত্মক হতে পারে। কারণ দেশটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অর্থনৈতিক বিপর্যয় এবং ২০২০ সালের বৈরুত বন্দরের বিস্ফোরণসহ নানা সংকটে জর্জরিত হয়েছে।
জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি ইসরায়েলকে এই সংঘাতকে তীব্র করার জন্য দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডে গোটা মধ্যপ্রাচ্য সংঘাতের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে।
কার্নেগি মিডল ইস্ট সেন্টারের গবেষক মোহনাদ হাজ আলী বলেছেন, হিজবুল্লাহ এখন পর্যন্ত একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ এড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু তাদের ওপর চাপ বাড়ছে আরও বড় হামলা চালানোর জন্য।
হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, গাজায় হামাসের প্রতি তাদের সমর্থন অব্যাহত থাকবে এবং ইসরায়েলকে পেজার বিস্ফোরণগুলোর জন্য শিগগিরই প্রতিশোধের মুখোমুখি হতে হবে।