ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। চিকিৎসকরা বলেছেন, রবিবার (১ ডিসেম্বর) ইসরায়েলি বাহিনী গাজাজুড়ে বোমাবর্ষণ চালিয়েছে এবং উত্তরাঞ্চলে বোমা মেরে বাড়িঘর উড়িয়ে দিয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই খবর জানিয়েছে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, নুসিরাতের কেন্দ্রীয় গাজা ক্যাম্পে ইসরায়েলি বিমান হামলায় একটি বাড়িতে ছয়জন এবং গাজা শহরের আরেকটি বাড়িতে হামলায় তিনজন নিহত হয়েছেন।
তারা আরও জানান, দক্ষিণ গাজা উপত্যকার খান ইউনিসে একটি তাঁবুর শিবিরে ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে দুই শিশু নিহত হয়েছে। এছাঢ়া, এদিন মিসরের সীমান্তবর্তী রাফাহতে বিমান হামলায় আরও চারজন নিহত হয়েছেন।
বাসিন্দারা বলেছেন, সামরিক বাহিনী উত্তর গাজার জাবালিয়া, বেইত লাহিয়া ও বেইত হ্যানউনের ঘরবাড়ি উড়িয়ে দিয়েছে। সেখানে চলতি বছরের অক্টোবর থেকে সামরিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে ইসরায়েলি বাহিনী।
ফিলিস্তিনিরা বলেন, গাজার উত্তর প্রান্তে ইসরায়েলের এই অভিযান একটি বাফার জোন তৈরি করতে জোরপূর্বক উচ্ছেদ ও বোমাবর্ষণের মাধ্যমে মানুষদের সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনার অংশ। তবে ইসরায়েলি বাহিনী অবশ্য এই অভিযোগ সেনাবাহিনী অস্বীকার করেছে।
সামরিক বাহিনী বলেছে, গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার প্রায় ১৪ মাস পর থেকে দলটি যাতে পুনরায় সংগঠিত হতে না পারে সেজন্য লড়াইয়ের সময় সেখানে কয়েকশ হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করেছে তারা।
হামাসের সশস্ত্র শাখা বলছে, নতুন অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে তারা ট্যাংকবিরোধী রকেট হামলা ও কামানের গোলা নিক্ষেপ এবং আকস্মিক বিস্ফোরক হামলায় অনেক ইসরায়েলি সেনাকে হত্যা করেছে।
ফিলিস্তিনি বন্দি
গাজা থেকে দুই ফিলিস্তিনি কারাবন্দি ইসরায়েলি হেফাজতে মারা গেছে। জিম্মি অ্যাডভোকেসি গ্রুপ রবিবার বলেছে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে নিহত বন্দির সংখ্যা ৪৭ জেনে দাঁড়িয়েছে।
মৃত দুজনের মোহাম্মদ ইদ্রিস ও মুয়াথ রায়ান। উভয়েরই বয়স ৩০।
ইসরায়েল প্রিজন সার্ভিস বলেছে, এই ঘটনাগুলো তার তার এখতিয়ারের অধীনে নয়। বন্দি শিবিরগুলো পরিচালনাকারী সেনাবাহিনী এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনও মন্তব্য করেনি।
বন্দিদের সঙ্গে ইসরায়েলি কারাগার ও আটক শিবিরে দুর্ব্যবহার ও নির্যাতন করা হয়েছে এমন অভিযোগ এনেছেন ফিলিস্তিনি ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো। তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে দেশটি।
আলোচনা
ইসরায়েলের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর উপায়গুলো খুঁজতে ইতোমধ্যে কায়রোতে হামাস নেতারা মিসরীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। এই আলোচনার লক্ষ্য ফিলিস্তিনি কারাবন্দিদের বিনিময়ে যাতে জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত হয়।
বুধবার যুক্তরাষ্ট্র গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনার জন্য কাতার, মিসর ও তুরস্কের সহযোগিতায় প্রচেষ্টা পুনরুজ্জীবিত করার ঘোষণা দেওয়ার পর, এই সফরের খবর সামনে এলো।
যুদ্ধের অবসান ঘটাবে এমন একটি চুক্তি চাইছে হামাস। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, যুদ্ধ তখনই শেষ হবে যখন হামাস নির্মূল হবে।
গাজার কর্মকর্তারা বলছেন, গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে ৪৪ হাজার ৩০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন অঞ্চলটির প্রায় সব বাসিন্দা। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজার বিস্তীর্ণ এলাকা।
ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের মতে, হামাসের নেতৃত্বাধীন যোদ্ধার ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যখন দক্ষিণ ইসরায়েলি সম্প্রদায়ের উপর হামলা চালায়, তখন প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন। এ সময় ২৫০ জনেরও বেশি মানুষকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায় তারা।