X
শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫
২৬ বৈশাখ ১৪৩২

রাশিয়ায় বৃহত্তম ড্রোন হামলার পর সৌদি আরবে যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন বৈঠক শুরু

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১১ মার্চ ২০২৫, ১৭:৪৭আপডেট : ১১ মার্চ ২০২৫, ১৯:২৫

রাশিয়ার ওপর ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় ড্রোন হামলার কয়েক ঘণ্টা পর মঙ্গলবার সৌদি আরবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ অবসানের পথ খুঁজতে জেদ্দায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আশা করছেন, গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার বিতর্কিত বৈঠকের পর এবারের আলোচনা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘ব্যবহারিক’ সম্পর্ক পুনরুদ্ধার হবে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা  রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

রাশিয়ার সঙ্গে আকাশ ও সমুদ্রে অন্তর্বর্তী যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছেন জেলেনস্কি।  তার এ প্রস্তাবের লক্ষ্য হলো, ট্রাম্পের যুদ্ধ দ্রুত শেষ করার লক্ষ্য বাস্তবায়নে তিনি কাজ করছেন—এটি দেখানো। গত সপ্তাহে ট্রাম্প ইউক্রেনীয় নেতাকে শান্তির জন্য প্রস্তুত না থাকার অভিযোগ তোলেন এবং রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার ওপর জোর দেন। ২০২২ সালে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের প্রধান মিত্র হিসেবে সহায়তা দিয়ে এলেও সম্প্রতি যুদ্ধবিষয়ক নীতি বদল করেছে। ওয়াশিংটন ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছে এবং গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় স্থগিত করেছে। 

মঙ্গলবারের আলোচনার আগে জেলেনস্কি এক টুইটে বলেন, আমরা ব্যবহারিক ফলাফলের আশা করছি। আলোচনায় ইউক্রেনের অবস্থান সম্পূর্ণ গঠনমূলক হবে।

আলোচনা শুরুর আগের রাতে ইউক্রেন রাশিয়ার ওপর এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ড্রোন হামলা চালায়। রাশিয়ার কর্মকর্তারা জানান, ইউক্রেন কমপক্ষে ৯১টি ড্রোন মোতায়েন করে, যার ফলে অন্তত একজনের প্রাণহানি হয়েছে, আগুন লেগেছে, বিমানবন্দর বন্ধ হয়েছে এবং বহু ফ্লাইট অন্যত্র সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে। মস্কো দাবি করেছে, রাশিয়ার আকাশে ৩৩৭টি ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে। 

রাশিয়ার গত কয়েক দিনের মিসাইল হামলার পর ইউক্রেন যে এখনও বড় ধরনের হামলা চালানোর সক্ষমতা রাখে, তা দেখাতেই এ হামলার সময় বেছে নেওয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। শনিবার রাশিয়ার এক মিসাইল হামলায় অন্তত ১৪ জন নিহত হয়। জেলেনস্কি ইউরোপীয় মিত্রদের কাছে তার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব সমর্থনের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এটি যুদ্ধ শেষ করতে মস্কোর ইচ্ছা পরীক্ষার একটি সুযোগ। 

ট্রাম্পের সঙ্গে জেলেনস্কির বিতর্কিত বৈঠকের পর ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে। ওই বৈঠকের পর দ্বিপক্ষীয় খনিজসম্পদ চুক্তি সই অনিশ্চিত হয়ে পড়ে এবং ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়টি ঝুলে যায়। ট্রাম্প এ চুক্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের চলমান সহায়তা এবং গত তিন বছরে ইউক্রেনকে দেওয়া বহু বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তার ক্ষতিপূরণের চাবিকাঠি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। 

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সৌদি আরব যাওয়ার পথে সাংবাদিকদের বলেছেন, শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইউক্রেন ছাড় দিতে কতটা প্রস্তুত, তা যাচাই করতে এ আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ হবে। তিনি বলেন, ইউক্রেনের অবস্থান বুঝতে হবে এবং তারা কী ধরনের ছাড় দিতে প্রস্তুত, তার একটি সাধারণ ধারণা নিতে হবে। কারণ উভয় পক্ষ ছাড় না দিলে যুদ্ধবিরতি বা যুদ্ধের অবসান হবে না।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন। ইউক্রেনের পক্ষে জেলেনস্কির শীর্ষ সহকারী আন্দ্রেই ইয়ারমাক আলোচনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। জেলেনস্কি সৌদি আরবে অবস্থান করলেও তিনি এ বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন না। ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় টেলিগ্রামে জানায়, সৌদি আরবের জেদ্দায় ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের বৈঠক শুরু হয়েছে।

আলোচনার আগে ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ জানান, ইউক্রেন-যুক্তরাষ্ট্র খনিজসম্পদ চুক্তি শিগগিরই সই হতে পারে বলে তিনি আশাবাদী। উইটকফ মস্কো সফর করে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পরিকল্পনা করেছেন বলে এক সূত্র সোমবার জানায়। 

ইউক্রেনের ইউরোপীয় মিত্রদের যুক্তি, শক্ত অবস্থান থেকে ইউক্রেন রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনা করতে পারে এবং আগ্রাসীর সঙ্গে আলোচনার টেবিলে ইউক্রেনকে তাড়াহুড়ো করা উচিত নয়। জেলেনস্কি বলেছেন, পুতিন শান্তি চান না এবং সতর্ক করেছেন যে ইউক্রেন আক্রমণে রাশিয়া যদি পরাজিত না হয়, তাহলে তারা অন্য ইউরোপীয় দেশগুলোতে হামলা চালাতে পারে। 

রুবিও উভয় পক্ষকে কী ধরনের ছাড় দিতে হবে, তা স্পষ্ট করেননি। তবে তিনি বলেছেন, ইউক্রেনের পক্ষে হারানো সব অঞ্চল ফিরে পাওয়া কঠিন হবে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, রাশিয়া পুরো ইউক্রেন দখল করতে পারবে না এবং ইউক্রেনের পক্ষেও ২০১৪ সালের সীমানায় রাশিয়াকে ফিরিয়ে নেওয়া যুক্তিসঙ্গত সময়ে সম্ভব হবে না। 

রাশিয়া ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ অঞ্চল দখল করে রেখেছে, যার মধ্যে ২০১৪ সালে বিচ্ছিন্ন করা ক্রিমিয়া অন্তর্ভুক্ত। রাশিয়ার সেনারা পূর্ব ডোনেস্ক অঞ্চলে চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছে। গত ফেব্রুয়ারিতে সৌদি আরবের রাজধানীতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠক হয়। শীতল যুদ্ধের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের মধ্যে এ ধরনের বৈঠক বিরল। ওই আলোচনায় মূলত সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে প্রায় সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাওয়া সরকারি যোগাযোগ পুনরুদ্ধারের বিষয়ে আলোচনা হয়।

/এএ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
দক্ষিণ সুদানে অপুষ্টির ঝুঁকিতে ৬০ হাজার শিশু: জাতিসংঘ
পাকিস্তানি ড্রোন হামলা প্রতিহতের দাবি ভারতীয় সেনাবাহিনীর
মাস্কের সমালোচনা করলেন গেটস, দিলেন ২০০ বিলিয়ন ডলার দানের প্রতিশ্রুতি
সর্বশেষ খবর
আ. লীগ নিষিদ্ধের দাবির সঙ্গে ইলিয়াস কাঞ্চনের জেপিবির একাত্মতা
আ. লীগ নিষিদ্ধের দাবির সঙ্গে ইলিয়াস কাঞ্চনের জেপিবির একাত্মতা
নতুন গানে টিনা রাসেলের ব্যাকুলতা
নতুন গানে টিনা রাসেলের ব্যাকুলতা
কারাগারে আইভী
কারাগারে আইভী
শেখ হাসিনার সঙ্গে মিটিংয়ের অভিযোগে আ.লীগ নেতা গ্রেফতার
শেখ হাসিনার সঙ্গে মিটিংয়ের অভিযোগে আ.লীগ নেতা গ্রেফতার
সর্বাধিক পঠিত
‘সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগে জড়িতদের শাস্তি দিতে না পারলে আমি চলে যাবো’
‘সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগে জড়িতদের শাস্তি দিতে না পারলে আমি চলে যাবো’
জার্সি পরেই যমুনার সামনে দায়িত্বে রমনার ডিসি মাসুদ আলম
জার্সি পরেই যমুনার সামনে দায়িত্বে রমনার ডিসি মাসুদ আলম
নৌ পুলিশের অভিযানে ২৭৬ জন গ্রেফতার, ১০ মরদেহ উদ্ধার
নৌ পুলিশের অভিযানে ২৭৬ জন গ্রেফতার, ১০ মরদেহ উদ্ধার
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে পদত্যাগ করলেন স্নিগ্ধ
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে পদত্যাগ করলেন স্নিগ্ধ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে ৫৬ জনের পদত্যাগ, তুলেছেন দুর্নীতির অভিযোগ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে ৫৬ জনের পদত্যাগ, তুলেছেন দুর্নীতির অভিযোগ