গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ এলাকা থেকে থাইল্যান্ডের এক নাগরিকের মরদেহ উদ্ধার করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। ওই ব্যক্তি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার সময় অপহৃত হয়েছিলেন। শনিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
অপহৃত কৃষিকর্মী নাট্টাপং পিন্টাকে হামাসঘনিষ্ঠ ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী মুজাহিদিন ব্রিগেডস জীবিত অবস্থায় অপহরণ করে হত্যা করে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল। তার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তরের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।
নির ওজ নামের সীমান্তবর্তী এক ইসরায়েলি কিবুতজ থেকে তাকে অপহরণ করা হয়েছিল। এই এলাকাতেই হামাসের হামলায় নিহতের এক-চতুর্থাংশ ছিলেন। একই হামলায় আরও দুই ইসরায়েলি-আমেরিকান নাগরিকের মরদেহ গাজা থেকে উদ্ধার করেছে ইসরায়েল। যাদেরকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছিল।
মুজাহিদিন ব্রিগেডস এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। তাদের আগের অবস্থান অনুযায়ী তারা জিম্মিদের হত্যা করার কথা অস্বীকার করে আসছে। তবে ইসরায়েল বলছে, এখনও তারা এক বিদেশি নাগরিকের মরদেহ আটকে রেখেছে।
বর্তমানে গাজায় ৫৫ জন জিম্মি রয়েছেন বলে জানিয়েছে ইসরায়েল। যাদের মধ্যে মাত্র ২০ জনের জীবিত থাকার সম্ভাবনা আছে। এদের মধ্যে শিরি বিবাস ও তার দুই শিশুপুত্রকেও হত্যা করে মুজাহিদিন ব্রিগেডস। যাদের মরদেহ মার্চ মাসে শেষ হওয়া দুই মাসব্যাপী অস্ত্রবিরতির সময় ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
অস্ত্রবিরতি ভেস্তে যাওয়ার পর ইসরায়েল পুরো গাজা জুড়ে অভিযান জোরদার করেছে। যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় নতুন অস্ত্রবিরতির প্রচেষ্টা এখনও ব্যর্থ।
শনিবার গাজাজুড়ে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ৪৫ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় চিকিৎসকরা। গাজা শহরের সাবরা এলাকায় একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৫ জন নিহত ও ৫০ জন আহত হন।
ইসরায়েলি হামলার লক্ষ্য ছিল একটি বহুতল আবাসিক ভবন। তবে আশপাশের বাড়িগুলোরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে কিছু জানায়নি। তবে পরে তারা গাজার জাবালিয়া এলাকা খালি করতে নির্দেশ দিয়েছে। তাদের দাবি, সেখান থেকে রকেট ছোড়া হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অঞ্চলটির হাসপাতালগুলোতে মাত্র তিন দিনের জ্বালানি মজুত রয়েছে এবং ইসরায়েল আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর জ্বালানি প্রবেশে বাধা দিচ্ছে।
জাতিসংঘের হিসাবে, গাজার ২৩ লাখ মানুষের বেশিরভাগই চরম খাদ্যাভাবের মুখে রয়েছে। শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির হার তিনগুণ বেড়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) অতিরিক্ত ভিড় ও নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে ত্রাণ বিতরণ স্থগিত করে। জুনের শুরুতে বিতরণকেন্দ্রের কাছে ইসরায়েলি গুলিতে ৮০ জনের বেশি নিহত ও শতাধিক আহত হয় বলে অভিযোগ করে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ।
জিএইচএফ মে মাসের শেষ দিকে কার্যক্রম শুরু করে এবং এখন পর্যন্ত প্রায় ৯০ লাখ খাবার সরবরাহ করেছে। তবে জাতিসংঘ তাদের মডেলকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট ও নিরপেক্ষতা-বিরোধী’ বলে উল্লেখ করেছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী শনিবার জানিয়েছে, কেরেম শালোম সীমান্ত দিয়ে জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থার ৩৫০টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের যোদ্ধারা ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যা ও ২৫১ জনকে জিম্মি করে, যার বেশিরভাগই ছিল বেসামরিক নাগরিক। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান চালায়। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ৫৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই সাধারণ মানুষ।
জিম্মিদের পরিবারের আশঙ্কা, ইসরায়েলি অভিযান অব্যাহত থাকলে যারা জীবিত আছেন, তারাও মারা যাবেন। আর যারা মারা গেছেন, তাদের মরদেহ আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।
ইসরায়েল বলছে, তারা সব জিম্মিকে ফিরিয়ে আনা এবং গাজায় হামাসের শাসনের অবসান ঘটাতে এই অভিযান চালাচ্ছে।