পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা ব্যর্থ হলে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ছড়িয়ে থাকা সামরিক ঘাঁটিতে হামলার হুমকি দিয়েছে ইরান। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী আজিজ নাসিরজাদে বুধবার বলেন, যদি সংঘাত চাপিয়ে দেওয়া হয়, তবে সব মার্কিন ঘাঁটি আমাদের আঘাতের আওতায় থাকবে এবং আমরা সাহসিকতার সঙ্গে সেগুলো লক্ষ্যবস্তু করব। কাতারভিতত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
চলতি বছরের এপ্রিল থেকে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পাঁচ দফা বৈঠক হয়েছে। পরবর্তী রাউন্ড অনুষ্ঠিত হতে পারে এই সপ্তাহেই। ওয়াশিংটনের ভাষ্য অনুযায়ী বৃহস্পতিবার, আর তেহরানের মতে রবিবার ওমানে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই বলেছেন, ইরানের সঙ্গে একটি নতুন পারমাণবিক চুক্তি হওয়ার ব্যাপারে তার আস্থা কমে যাচ্ছে। এক পডকাস্টে তিনি বলেন, দুই মাস আগেও আমি যতটা আত্মবিশ্বাসী ছিলাম, এখন ততটা নই। কিছু একটা ঘটেছে ওদের ভেতরে, আমি নিশ্চিত না এই চুক্তি হবে কি না।
ট্রাম্প শুরু থেকেই হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন, চুক্তি না হলে সামরিক পথেই ইরানকে থামানো হবে। এর জবাবে ইরান বলছে, তারা হামলার শিকার হলে আঞ্চলিক মার্কিন ঘাঁটিগুলোই হবে তাদের পাল্টা আঘাতের লক্ষ্য।
এদিকে, বুধবার নাসিরজাদে আরও জানান, গত সপ্তাহে ইরান একটি ২ হাজার কেজি ওয়ারহেড বহনে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে। যদিও ক্ষেপণাস্ত্রটির ধরন কিংবা বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
রাশিয়া পরিস্থিতি ঠান্ডা করতে নিজ উদ্যোগে সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েছে। উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ বলেন, আমরা শুধু রাজনৈতিক নয়, বাস্তব সহায়তা দিতেও প্রস্তুত। ইরান থেকে পারমাণবিক উপাদান সংগ্রহ করে তা বেসামরিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানিতে রূপান্তর করাও আমাদের প্রস্তাবের অংশ হতে পারে।
ইরান বরাবরের মতোই দাবি করেছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি এক্স-এ লিখেছেন, ট্রাম্প নিজেই বলেছেন, ইরান যেন পরমাণু অস্ত্র না পায়। এটা আমাদের নিজেদের নীতির সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই অবস্থান থেকেই একটি যৌক্তিক ও দ্রুত চুক্তির ভিত্তি তৈরি হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, এই চুক্তির মূল ভিত্তি হতে হবে—আইএইএ’র পূর্ণ পর্যবেক্ষণে আমাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম চালু রাখা এবং একইসঙ্গে সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার।
অপরদিকে, ভিয়েনায় আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) একটি প্রস্তাব বিবেচনা করছে। যেখানে ইরানকে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ সংক্রান্ত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ বলে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে তেহরান হুঁশিয়ারি দিয়েছে, কোনও ধরনের চাপ বা পদক্ষেপের পাল্টা অনুপাতিক জবাব দেবে তারা।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে বিশ্বের ছয়টি পরাশক্তির সঙ্গে করা চুক্তি অনুযায়ী, ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে সীমা আরোপ করেছিল। যার বিনিময়ে উঠে গিয়েছিল নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২০১৭-২০২১ মেয়াদের প্রথম দিকে যুক্তরাষ্ট্রকে ওই চুক্তি থেকে প্রত্যাহার করে নেন। এরপর থেকে দুই দেশের মধ্যে টানাপোড়েন বাড়তে থাকে।