নিরাপত্তা ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ায় ইরাকের রাজধানী বাগদাদে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস থেকে অপ্রয়োজনীয় কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বুধবার (১১ জুন) মার্কিন মার্কিন সরকারি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। তবে ঠিক কী কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা স্পষ্টভাবে বলেননি কর্মকর্তারা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে প্রায় আড়াই হাজার মার্কিন সেনা ইরাকে অবস্থান করছেন।
বিবিসির মার্কিন অংশীদার সিবিএসে'র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে একটি সামরিক অভিযান চালাতে প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
এই কারণে কিছু মার্কিন নাগরিককে অঞ্চলটি ছেড়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, ইরাকে অবস্থিত কিছু মার্কিন স্থাপনায় প্রতিশোধমূলক হামলা চালাতে পারে ইরান।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের এক কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, ‘আমরা আমাদের প্রতিটি দূতাবাসের কর্মীসংখ্যা নিয়ে নিয়মিত পর্যালোচনা করি। সর্বশেষ বিশ্লেষণ অনুযায়ী, আমরা ইরাকে আমাদের মিশনের পরিসর সীমিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
এটা এমন সময়ে ঘটছে যখন ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনা সাম্প্রতিক দিনগুলোতে স্থবির হয়ে পড়েছে।
তবে সিবিএসকে কর্মকর্তারা বলেছেন, মার্কিন মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ এখনও ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আগামী রবিবার আলোচনা করার পরিকল্পনা করছেন।
কেনেডি সেন্টারে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও বলেন, আমেরিকান নাগরিকদের অঞ্চলটি ছেড়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কারণ এটি একটি বিপজ্জনক এলাকা হয়ে উঠতে পারে।
ট্রাম্প আবারও বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র চায় না যে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করুক। আমরা এটা হতে দেব না।' তিনি চান তেহরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথ থেকে বিরত রাখতে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে।
এই সপ্তাহের শুরুতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে একটি ৪০ মিনিটের টেলিফোন আলাপ করেন ট্রাম্প। আলাপটি ‘টানাপোড়েনপূর্ণ’ ছিল বলে জানা গেছে। নেতানিয়াহু দীর্ঘদিন ধরে কূটনৈতিক পথের পরিবর্তে ইরানে সামরিক পদক্ষেপের পক্ষে অবস্থান করছেন।
আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে তেহরানের সহযোগিতাকে ‘কম সন্তোষজনক’ বলে সমালোচনা করেছে। বিশেষ করে যেসব গোপন স্থানে পারমাণবিক উপাদান পাওয়া গেছে তা নিয়ে ব্যাখ্যা দিতে ইরানের ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। ইরান এই প্রতিবেদনকে পক্ষপাতদুষ্ট বলে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং দাবি করেছে যে, এতে ব্যবহৃত নথিগুলো ইসরায়েলের সরবরাহ করা।
এই সংকটপূর্ণ সময়ে, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মী সরানোর ঘোষণা প্রকৃত নিরাপত্তা উদ্বেগ নাকি শুধু একটি বার্তা দেওয়ার চেষ্টা—তা এখনও পরিষ্কার নয়।
তবে ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আজিজ নাসিরজাদে বলেছেন, যদি আলোচনা ব্যর্থ হয় এবং ট্রাম্প সামরিক হামলার নির্দেশ দেন; তবে ইরান এই অঞ্চলজুড়ে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে হামলার মাধ্যমে প্রতিশোধ নেবে।
বুধবার যুক্তরাজ্যের রয়্যাল নেভির অঙ্গপ্রতিষ্ঠান মেরিটাইম ট্রেড অপারেশনস সতর্ক করে বলেছে, মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক উত্তেজনা বৃদ্ধি সমুদ্রপথে বাণিজ্যে প্রভাব ফেলতে পারে।